এ্যাজমা ও শিশুর খেলাধুলা by ডা: এটিএম রফিক উজ্জ্বল

এ্যাজমায় ভুগছে শিশুরা বহুল উপকার পেতে পারে খেলাধুলাতে। কিন্তু আপনার শিশুর এ্যাজমা রোগ যদি খেলাধুলাতে বেড়ে যায়, তবে সেটা বড় চিনত্মার বিষয়।
আর সব হাঁপানি বাড়ার উপাদানের সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক কসরতজনিত এ্যাজমাতে মূল ব্রঙ্কাস বা শ্বাসনালীর প্রদাহ হয়। শ্বাসনালীর মাংসপেশী টান টান হয়ে যায়। ফুসফুসের কোষগুলো অতিরিক্ত নিঃসরণ করে। এবং এগুলোই একসঙ্গে অল্প থেকে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট সৃষ্টি করে। কিন্তু আপনার বাচ্চাকে তো এ্যাজমাজনিত কারণে শারীরিক কসরত কমাতে দেয়া যাবে না। সতিক্যার অর্থে প্রতিদিন ব্যায়াম শারীরিক কসরত আপনার শিশুর ফুসফসের মতা বাড়ায়। সহজ করে আপনার শিশুর শ্বাস নেয়ার মতা।
কিছু পদপে নিলে দেখবেন আপনার এ্যাজমা আক্রানত্ম শিশু খেলাধুলার মাঝখানে স্বাভাবিক শারীরিক গড়ন সম্পন্ন বাচ্চা হিসেবে গড়ে উঠছে।

সর্বপ্রথম হাঁপানী বা এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে: আপনার শিশু খেলাধুলাতে অংশগ্রহণের আগে নিশ্চিত হন যে তার হাঁপানী রোগ নিয়ন্ত্রণে আছে। নিয়ন্ত্রিত হাঁপানী মানে প্রতিদিনের হাঁপানীর লণ এবং লণ বেড়ে যাওয়া কদাচিৎ ঘটবে। যদি আপনার বাচ্চা প্রতিদিনই ওষুধ খাচ্ছে অথচ লণ থেকেই যাচ্ছে বা লণ বাড়া থেকে কোন রকম পরিত্রাণ পাচ্ছে না, তাহলে অবশ্যই আপনার বাচ্চার ডাক্তারের সঙ্গে দেখা করম্নন। তিনি হয়ত ওষুধ পাল্টে দিতে পারেন বা ওষুধ গ্রহণের পদ্ধতিগত ত্রম্নটি আছে কিনা নিরীণ করতে পারেন, ধুলাবালি, ধুঁয়া, খুশকি, এগুলো যতসম্ভব পরিহার করতে হবে। অধিকনুত্ম একটা চিকিৎসা পরিকল্পনা রাখতে হবে। স্বাভাবিক চিকিৎসা পরিকল্পনা হলো একটা দীর্ঘমেয়াদী প্রতিরোধক ওষুধ (অল্প ডোজে স্টেরোয়েড ইনহেলার, অথবা লিউকোটিরিয়েন্স ইনহিবিস্টর) এবং অল্পমেয়াদী তাৎণিক লণ মুক্তির জন্য ব্রংকোডাইলেটর ইনহেলার ব্যবহার করা যেতে পারে, অনেক শিশু খেলার ১৫ মিনিট আগে অল্পমেয়াদী কার্যকর ব্রংকোডাইলেটর যেমন এ্যালবিউস্টেরল ব্যবহার করলে বেশ উপকার পায়।

এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা : আপনি আপনার শিশুর ডাক্তারকে সহযোগিতা দান করম্নন, তার সঙ্গে এক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এই কর্মপরিকল্পনা হলো কিছু ধারাবাহিক পদপে। যা কিনা আপনার বাচ্চার এ্যাজমা প্রতিরোধ করবে। বাড়তে দেবে না এবং যখন এ্যাটাক হবে তাৎণিক সমাধান দেবে।
প্রত্যেক এ্যাজমা শিশুর েেত্র একটা কর্মপরিকল্পনা ও নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনা থাকা উচিত। বৈশিষ্ট্যপূণ এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনাতে থাকে কিছু ওষুধ এর সঠিক ডোজ এবং ব্যবহার, রোগের লণগুলো কি এবং পিক কো মিস্টারের (বড় বাচ্চাদের েেত্র এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের পরিমাপক) লণজনিত গড় রিডিং কিসে কিসে বোঝা যাবে এ্যাজমা এ্যাটাক, কখন বা আবার জরম্নরী ভিত্তিতে এ্যাজমার চিকিৎসা করতে হবে সেগুলো।
আপনার শিশুর সঠিক খেলাটা বেছে দিন:
কিছু কিছু খেলা বিশেষ করে যেগুলো অনেকণ ধরে খেলতে হয় অথচ বিরতি কম আছে সে খেলাগুলোতে স্বভাবতই আপনার বাচ্চার এ্যাজমা এ্যাটাকের প্রবণতা বেড়ে যায়, যেমন ধরম্নন
০ বাস্কেটবল খেলা
০ সাইকিং
০ আইস হকি
০ বড় লম্ব দৌড়
০ রাগবি
০ ফুটবল
আপনার শিশুর যদি সত্যিই শারীরিক কসরতে এ্যাজমা বাড়ে, তবে আপনি অন্য কিছু খেলা আপনার বাচ্চার জন্য ভাবতে পারেন। যেখানে এ্যাজমা এ্যাটাক কম হবে যেমন
০ বেসবল
০ গলফ
০ লাফদড়ি খেলা
০ সাঁতার
০ ভারোত্তোলন
যদিও লাফদড়ি খেলা এবং সাঁতার কাটার কসরত আছে তবুও দেখা যায় কম এ্যাজমা এ্যাটাক হয় শিশুদের েেত্র। লাফদড়িতে ব্যায়ামের তীব্রতা বেশি কিন্তু অনেকণের চেষ্টা দরকার হয় না।
সাঁতারে অধিক কসরত অধিক সহ্য মতা লাগে তবুও সুইমিংপুলের ঈষদুষ্ণ গরম পানিতে এ্যাজমা এ্যাটাক প্রতিরোধ হয়। গলফে কম কসরত। কিন্তু অনেক সময় আউটডোরে খেলার এ্যালার্জেন বা উত্তেজক উপাদনগুলো আপনার শিশুর এ্যাজমাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। যদিও কিছু খেলাধুলা লণগুলো বেশি বাড়ায় তবুও আপনার শিশু যেকোন খেলাধুলাতে অংশগ্রহণ করতে পারে যদি তার এ্যাজমা রোগের ওষুধ প্রয়োগ সঠিক হয় এবং সঠিকভাবে এ্যাজমা নিয়ন্ত্রিত থাকে। নিয়ন্ত্রণ থাকলে যতই কষ্টের খেলা খেলুক না কেন কিছু অসুবিধা হবে না।
কিছু সহজ উপায় মনে রাখুন লণগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে কিছু পরামর্শ মনে রাখতে পারেন যেগুলো আপনার বাচ্চার জন্য উপকারে লাগতে পারে।

সব সময় গা গরম এবং ঠা-াকরণ : আপনার বাচ্চাকে শেখান কিভাবে খেলাধুলার আগে ধিৎস ঁঢ় বা গা গরম করতে হবে। অনত্মত ১৫ মিনিট ব্যয় করতে পারে ধিৎসরহম ঁঢ়-এ।
তারপর খেলা শেষে আরও ১৫ মিনিট ধরে ঠা-া হতে হবে। যদিও সকল এ্যাথলেটের জন্য প্রয়োজন ধিৎসরহম ঁঢ় এবং পড়ড়ষরহম ফড়হি_ তবে এটা এ্যাজমা শিশুদের জন্য বেশি প্রয়োজন।

মনোযোগ দিন পরিবেশের দিকে : অনেক শীত, শৈত্যপ্রবাহ এবং যখন বাতাসে ফুলের রেণুর পরিমাণ বেশি তখন আপনাকে সজাগ হতে হবে। যখন বাচ্চাকে ইনডোর খেলাধুলাতে উৎসাহ যোগানোই ভাল। যখন আবহাওয়াতে শৈত্যপ্রবাহ তখন আপনার বাচ্চার মুখম-লে স্কার্ফ এবং মাস্ক ব্যবহার করম্নন, শীতের বাতাস যেন নাসিকা দিয়ে ফুসফুসে না ঢোকে।

যখন সুস্থ তখনই কেবল খেলবে : এ্যাজমা এ্যাটাক স্বভাবতই ঠা-া লাগার পর বা শ্বাসনালীর প্রদাহের পর পর হয়। আপনার শিশুকে কটা দিন অপো করতে বলুন। ঠা-া ভাব কমে যাক তখন আবার খেলবে।

পিক ফো মিটার ব্যবহার করম্নন :
পিক ফো মিটার এক ধরনের হাতে ব্যবহৃত ছোট যন্ত্র যা আপনার বাচ্চার ফুসফুস কেমন কাজ করছে তা প্রতিদিনের জন্য মনিটর করে। ডাক্তারের সাহায্যে, আপনি প্রতিদিন আপনার বাচ্চার পিক ফো মিটারের রিডিং দেখতে শিখবেন। যদি গড়ের চেয়ে কমে যায় তবে জানতে হবে এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না যা প্রদাহ হয়েছে, পিক ফো মিটার আপনি এবং আপনার বাচ্চাকে পূর্বসতকর্তা অবলম্বনে সাহায্য করবে। স্কুলের শিক এবং খেলার কোচকে আপনার বাচ্চার এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার সঙ্গে জড়াতে হবে। এ ব্যাপারে তারা প্রয়োজন পড়লে সাহায্য করতে পারে।

এ্যাজমা এবং খেলাধুলা দুটোতে আপনার বাচ্চার জয়ের সম্মিলন হোক। এ্যাজমার শিশুরা সমানভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে খেলাধুলাতে। এর জন্য প্রথমত দরকার এ্যাজমা নিয়ন্ত্রণের কর্মপরিকল্পনা দ্বিতীয়ত দরকার আপনার বাচ্চার শিক এবং কোচের সঙ্গে প্রতিদিনের সংযোগ।
এই সব সাধারণ অথচ ব্যবহারিক পদপে আপনার বাচ্চাকে এ্যাজমা ও খেলাধুলা দুটোতেই জয়ী করতে পারে।
রেজি: শিশু বিভাগ
হলিফ্যামিলি রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.