ভ্রূণও দোল খেতে চায় by মইনুল ইসলাম

শিশু দোল খেতে খেতে ঘুমুতে পছন্দ করে। ভ্রূণও দোল খেতে পছন্দ করে। ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা গবেষণাগারে ডিম্বাণু ও শুক্রাণু কৃত্রিমভাবে নিষিক্তকরণের সময় মৃদু দোল দিয়ে ইঁদুরের গর্ভসঞ্চারের হার বিজ্ঞানীরা শতকরা ২০ ভাগেরও বেশি বাড়াতে সৰম হয়েছেন।
সাম্প্রতিক গবেষণায় এই তথ্য জানা গেছে। মিশিগান ইউনিভার্সিটির স্ত্রী রোগ ও ধাত্রীবিদ্যা বিভাগের এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর গ্যারি স্মিথ বলেছেন, বছরের পর বছর আমাদের অন্যতম লৰ্য হচ্ছে ল্যাবরেটরিতে আমরা যে ভ্রূণ সৃষ্টি করি তা যেন মানবদেহে গড়ে ওঠা ভ্রূণের মতো স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে। কারণ আমরা জানি মানবদেহের অভ্যনত্মরে প্রাণ সবচেয়ে স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে।
চলমান ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) প্রক্রিয়ায় একটি ডিম্বাণু ও শুক্রাণু মিলিত করে কালচার করা হয় যা প্রেটিডিশ যা গবেষণাগারের বিশেষ পাত্রে স্থির থাকে কিছুদিন। ভ্রূণ মাতৃগর্ভে প্রতিস্থাপিত হওয়ার আগ পর্যনত্ম এই অবস্থা চলতে থাকে। একজন মায়ের দেহের অভ্যনত্মরে ভ্রূণ যেভাবে বেড়ে ওঠে অনেকটা সেরকমভাবেই গবেষণাগারে বিষয়টি ঘটে।
স্মিথ বলেন, মাতৃগর্ভে তরল পদার্থ প্রবাহিত হতে থাকে এবং সবসময়ই এতে থাকে গতি।
স্মিথ বলেন, ইঁদুরের ওপরে পরিচালিত গবেষণা কৌশল গর্ভসঞ্চারে সমস্যা হয় এমন প্রতি ছয় দম্পতির একজনের ৰেত্রে সহায়ক প্রতিপন্ন হতে পারে। অবশ্য, আইভিএফ পদ্ধতি যে শুধু ব্যয়বহুল তাই নয়, বীমার সুবিধা এতে পাওয়া যায় না। এ কৌশল প্রয়োগে সাফল্যের হার শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ।
স্মিথ এ সম্পর্কে বলেন, আমরা যদি নতুন কৌশল প্রয়োগ করে কৃত্রিম গর্ভসঞ্চারের হার শতকরা মাত্র ৪৫ ভাগেও উন্নীত করতে পারি, তাহলে তা হবে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি বলেন, (গবেষণাগারে) আমরা স্বাস্থ্যবান ভ্রূণ তৈরি করছি যা কেবল গর্ভসঞ্চারের হারই বাড়াবে না, এর ফলে কিছু ভ্রূণচক্রও স্থানানত্মর করতে সৰম হব আমরা। এতে দুই বা তিনটি যমজ সনত্মান ভূমিষ্ঠ হওয়ার হার কমে যাবে।
স্মিথ ও তার সহযোগীরা এমন একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন যাতে মাতৃদেহের অভ্যনত্মরে থাকতে ভ্রূণের মধ্যে দোলের মতো অনুভূতি হয়। স্ত্রী জাতীয় সত্মন্যপায়ী প্রাণীর ফেলোপিথান টিউব থেকে ইউটেরাস বা জরায়ু পর্যনত্ম ঐ অনুভূতির সঞ্চার করা হয়।
এ সংক্রানত্ম গবেষণায় প্রধান মিশিগান ইউনিভার্সিটির বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর শুতাকাইয়ামা বলেন, জীবকোষসমূহের মধ্যে অধিকতর প্রাকৃতিক পরিবেশের মতো অনুভূতি সৃষ্টি করে আমরা অপেৰাকৃত ভাল কোষ পেয়েছি। যা সনত্মান ধারণ করতে না পারার সমস্যা নিরসনের প্রধান উপায়।
যন্ত্রটি ঠুসি (সেলাইয়ের সময় সুইয়ের খোঁচা থেকে রৰা পেতে আঙ্গুলে ব্যবহৃত) আকৃতির একটি ফানেল এবং ফানেলের তলদেশে রয়েছে ছোট ছোট চ্যানেল যার মধ্য নিয়ে পুষ্টি সমৃদ্ধ তরল প্রবাহিত হতে পারে এবং বর্জ্য বেরিয়ে যেতে পারে।
ফানেল থাকে ব্রেইলি পিনের সারির ওপর। নাড়ির ওঠানামার জন্য এই পিন সাজানো হয়। এতে তরল পদার্থ ভেতরে ঢোকার এবং মাইক্রোচ্যানেল দিয়ে বাইরে বের হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। নাড়ির স্পন্দন দেহে গতিসঞ্চার করে যা দেহে চূড়ানত্ম পর্যায়ে নিষিক্ত ডিম্বাণুগুলোকে জরায়ুর মধ্যে ঢুকিয়ে দেয় এবং ডিম্বাণু থেকে সৃষ্ট বর্জ্য বের করে দেয়।
তাকাইয়ামা এ সম্পর্কে বলেন, এতে ভ্রূণ সময়ে সময়ে দোল খায় কিংবা ফুইড প্রবাহিত হয়। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছে ভ্রূণ বিষয়টি লৰ্য রাখে।
ভ্রূণের দোল খাওয়া পরীৰা করতে বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের প্রাথমিক পর্যায়ের ভ্রূণ প্রতিটি পেমিলের মাথার আকৃতির ইউকিউবিটরে রাখেন। এদের স্টেটিক ডিশ (আইভিএ পদ্ধতির অনুরূপ) বা নতুন রকিং ডিভাইস (দোল খাওয়া যন্ত্র)-এ রেখে প্রতিক্রয়া পর্যবেৰণ করা হয়। চার দিন পর বিজ্ঞানীরা দেখতে পান দোল খাওয়া ভ্রূণগুলো স্থির অবস্থায় রাখা ভ্রূণগুলোর তুলনায় অপেৰাকৃত সুস্থ ও সবল। বিজ্ঞানীদের এই গবেষণা 'হিউমান রিপ্রোডাকশন সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে'।

No comments

Powered by Blogger.