আসিফ হতাশ করলেও আরও একটি স্বর্ণ শূটিংয়ে by মজিবর রহমান

 আসিফ হোসেন খানের মুখে ইপ্সিত হাসি_ সবাই ধরে নিয়েছিলেন ভাল স্কোর করে স্বর্ণ নিশ্চিত করেছেন এই কৃতী শূটার। হয়ত এ কারণে প্রতিযোগিতাস্থল থেকে সবার পরে বের হওয়ার মুহূর্তে তার মুখে সাফল্যের লুকানো হাসি।
কর্মকর্তা, সাংবাদিক, দর্শক সবারই হুমড়ি খেয়ে পড়ার মতো অবস্থা। ছবি তোলার হিড়িক, টিভি ক্যামেরার ব্যসত্মতা_ যদিও অফিসিয়ালি চূড়ানত্ম স্কোর ঘোষণা করা হয়নি তখন। কিন্তু দেশের কৃতী শূটার আসিফের মুভমেন্ট দেখে সবাই আশান্বিত। আগের দিন ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে একক ও দলগত_ দুই বিভাগেই স্বর্ণপদক গলায় ঝুলিয়ে বাজিমাত করেছিলেন বাংলাদেশের মেয়েরা। বুধবার ছিল ছেলেদের পালা। মেয়েদের এই প্রাপ্তি প্রত্যশা বাড়িয়ে দিয়েছিল ছেলেদের নিয়েও। সঙ্গত কারণে পুরম্নষ বিভাগেও চমক সৃষ্টির মতো কিছু ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছিল। কিন্তু না, চূড়ানত্ম ফল ঘোষণার পর জানা গেল অল্পের জন্য পারলেন না আসিফ। এককের স্বর্ণ ফস্কে গেছে হাতের মুঠো থেকে। রৌপ্যই সঙ্গী হয়েছে তার। স্বর্ণপদক ছিনিয়ে নিয়েছেন ভারতের ইমরান হাসান খান। আসিফ ভাগ্যবিড়ম্বনার শিকার হন শূট অফে গিয়ে। তবে আসিফ এককে না পারলেও মন্দের ভাল হিসেবে দিনটা খারাপ যায়নি বাংলাদেশের শূটিংয়ের। দলগত বিভাগের স্বর্ণ ঠিকই গলায় ঝুলিয়েছেন বাংলাদেশের শূটাররা। এতে আরও একটি স্বর্ণ যোগ হলো বাংলাদেশের ঝুলিতে। যার তিনটিই শূটিংয়ের। যদিও একই দিন অনুষ্ঠিত মেয়েদের ৫০ মিটার রাইফেল প্রনে পদকই পায়নি বাংলাদেশ। দেশের কৃতী তথা অভিজ্ঞ শূটার সাবরিনা সুলতানা হতাশ করেন এখানে।
উলেস্নখ্য, এবারের এসএ গেমসে নিজ মাটিতে প্রথম স্বর্ণপদক জয় করেন ভারোত্তোলক হামিদুল। সবচেয়ে বড় কথা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে স্বর্ণপদক পাচ্ছে বাংলাদেশ। এখন গেমস আয়োজক কর্মকর্তাদের ছুড়ে দেয়া সংখ্যাটা পূরণ হলেই হয়। প্রসঙ্গত, ১৭ স্বর্ণপদকের প্রত্যাশা নিয়ে গেমস মিশন শুরম্ন করেছে বাংলাদেশ। মেয়েদের পর পুরম্নষদের দলগত বিভাগেও স্বর্ণপদক জয় ছিল দিনের আলোচিত ঘটনা। শূটিংয়ে তো স্বর্ণ প্রায় অধরাই হয়ে গিয়েছিল। গেমসে শূটিং যোগ হওয়ার পর শতভাগ নিশ্চয়তা তো ছিলই। ক'টি স্বর্ণপদক জিতবে শূটিং দল_ এটাই ছিল বাসত্মব চিত্র। কিন্তু অমিত সম্ভাবনার এই শূটিং এগিয়ে যাবার পরিবর্তে প্রদীপের আলোর মতোই যেন ধপ করে নিভে যায়। ফেডারেশন কর্মকর্তাদের দুর্নীতি, লুটপাট, সাংগঠনিক ব্যর্থতায় শূটিংয়ের মান ক্রমান্বয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। বিশেষ করে ১৯৯৫ মাদ্রাজ সাফ গেমসপরবর্তী আর ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি দেশের শূটিং ক্রীড়া। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নামতে থাকে নিচের দিকে, যা এক পর্যায়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকে। এই দুরবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে দেশের জনপ্রিয় শূটিং ক্রীড়া। বিগত দু'দিনের সাফল্য তা-ই প্রমাণ করছে। এখন আগামী দিনগুলোতে কি ঘটে তা-ই দেখার বিষয়।
দৰিণ এশিয়ার মর্যাদার ক্রীড়া আসর এসএ গেমসের শূটিংয়ে সমৃদ্ধ তথা পরাশক্তি ভারতকে পেছনে ঠেলে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলের দলগত বিভাগে স্বর্ণ জেতে বাংলাদেশ। তবে সাফল্যটা মেয়েদের মতো হয়নি ব্যক্তিগত ইভেন্টে স্বর্ণ জিততে না পারায়। সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ নিয়ে। বয়সে তরম্নণ হলেও মেধায় অভিজ্ঞ আসিফ হোসেন খান, আবদুলস্নাহ হেল বাকি ও শোভন চৌধুরীকে নিয়ে গড়া দল বাংলাদেশকে এই স্বর্ণ উপহার দেয় বুধবার গুলশানের জাতীয় শূটিং কমপেস্নক্সে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতায়। আসিফ (৫৯৬), বাকি (৫৯১) ও শোভন (৫৮৮) মিলে মোট ১৭৭৫ পয়েন্ট অর্জন করেন। এ ইভেন্টে রৌপ্য জেতে ভারত। ব্রোঞ্জ নেপালের। ভারতের ইমরান হাসান খান (৫৯৪), সত্যেন্দর সিং (৫৮৮) ও ধীরেন্দর সিং (৫৮২) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭৬৪ স্কোর করেন। নেপালের স্কোর ১৭১৯। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের পয়েন্ট পার্থক্য ১১। সাফ ও কমনওয়েলথ গেমসে স্বর্ণজয়ী আসিফ হোসেন খানকে নিয়ে অনেক আশা ছিল। কিন্তু ভারতের ইমরান হাসান খানকে হারাতে পারেননি তিনি শূট অফে স্কোর ২.৯ কম করায়। ভারতের ইমরান স্বর্ণ জেতেন ৬৯৭.৩ পয়েন্ট পেয়ে। স্বর্ণ হাতছাড়া হওয়া আসিফ ৬৯৪.৪ স্কোর করে রৌপ্য জেতেন। ব্রোঞ্জজয়ী শোভন চৌধুরীর পয়েন্ট ৬৯০.৩।
আসিফের জায়গায় আগের দিন একই বিভাগে স্বর্ণ জয় করেছিলেন শারমিন আক্তার রত্না ৪৯৯.৪ স্কোর করে। স্বদেশী সৈয়দা সাদিয়া সুলতানাকে (৪৯৮.৩) পেছনে ফেলেছিলেন তিনি।
দলগত ইভেন্টে স্বর্ণ জয়ের পর আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন বাংলাদেশ শূটাররা। কিন্তু তখনও আসিফ জানতেন না ব্যক্তিগত ইভেন্টে তার আশার প্রদীপ নিভে গেছে। ফলে আনন্দের পর হতাশায় ডুবলেন আসিফ। যার প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আশা ছিল কিছু একটা করে দেখানোর। স্বর্ণের ল্যই নিয়েছিলাম। কিন্তু হলো না। এখন হতাশ হওয়া ছাড়া বলার কিছু নেই। ইসলামাবাদ নবম সাফ গেমসে স্বর্ণ জিতেছিলাম। এবারও আশা করেছিলাম স্বর্ণ জিতব। কিন্তু হলো না।
এদিকে গতকাল অনুষ্ঠিত অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে পুরম্নষ কাবাডিতে ভারতের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বাংলাদেশ। পরাজিত হয় ৩৪-১১ পয়েন্টে। তবে মেয়েরা টিকে আছে স্বর্ণপদকের লড়াইয়ে। প্রতিপৰ ভারত, যাদের বিরম্নদ্ধে গতকাল হারলেও আজ আবার ফাইনালে খেলবেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ফাইনাল মানে কাবাডিতে মেয়েদের রৌপ্য নিশ্চিত। এখন প্রবল প্রতিপৰ ভারতকে ফাইনালে হারাতে পারলে স্বর্ণ। কাজেই সময় ভাল বলতে পারবে রবিন লীগের মতো পরাজয় নাকি ফাইনালে জয়। এ ছাড়া হকিতে নেপালকে ২৪-০ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আজ ভারতকে হারাতে পারলে ফাইনাল। অর্থাৎ রৌপ্য নিশ্চিত। ভারত গতকাল ৫-১ গোলে হারিয়েছে স্বর্ণপ্রত্যাশী পাকিসত্মানকে। হ্যান্ডবলে গ্রম্নপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। পুরম্নষ ফুটবলেও ইতোমধ্যে পেঁৗছে গেছে সেমিফাইনালে নেপাল ও ভুটানকে হারিয়ে।

No comments

Powered by Blogger.