রক্তাক্ত পাকিস্তান- সিরিজ বোমা হামলায় নিহত ১২২ ॥ অধিকাংশ শিয়া ॥ দায়িত্ব স্বীকার লস্কর-ই-ঝাংভির by আজিজুর রহমান

 অস্থির পাকিস্তান ফের রক্তাক্ত হলো। সিরিজ বোমায় কেঁপে উঠল পাকিস্তানের বেলুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়া। বৃহস্পতিবার রাতে প্রদেশের শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ কোয়েটা ও মিংগোরা নামক দুটি শহরে স্মরণকালের এই ভয়াবহ বোমা হামলায় মুহূর্তেই ১২২টি তাজা প্রাণ ঝড়ে যায়।
৬ দফা বোমা হামলায় আহত হয়েছেন আরও দু’শ’ ৭০ জন। এর মধ্যে অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। এ ঘটনার পর বেলুচিস্তানে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। গোটা এলাকায় চলছে শোকের মাতম। এই ভয়াবহ হামলায় প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকার স্তম্ভিত। সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কোয়েটা শহরের আলমদার রোডে একটি স্নুকার হলে। এই হলেই জোড়া বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় কমপক্ষে ৮৮ জন এবং আহত হয় শতাধিক।
শিয়া অধ্যুষিত ঐ এলাকায় হামলার পর পরই স্থানীয়রা উদ্ধার অভিযানে ঝাঁপিয়ে পড়ে, পরে যোগ দেয় স্থানীয় প্রশাসন। হামলার পর দীর্ঘ সময় চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায় মানুষের মৃতদেহ। আহতদের গোঙানি আর চিৎকারে গোটা এলাকার বাতাস তখন ভারি হয়ে ওঠে। স্থানীয় প্রশাসন আহতদের দ্রুত হাসপাতালে নেয়ার জন্য তৎপর হয়ে ওঠে। আহত অনেককে বিমানে করে করাচী নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। গত কয়েক বছরের মধ্যে পাকিস্তানে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা। পাকিস্তানে জঙ্গী গ্রুপ বেলুচ আর্মির মুখপাত্র বকর সাদিক কোয়েটার বাচা খান এলাকায় হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সুন্নি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী লস্কর-ই-ঝাংভি স্নুকার হলে পর পর দু’দফা হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে। শিয়াদের হামলার লক্ষ্যে পরিণত করেছে এই গোষ্ঠীটি। বেলুচিস্তানে দীর্ঘদিন ধরেই গোষ্ঠীগত হানাহানি চলছে। এ ঘটনার আগে বিকেলে কোয়েটার বাচা খান চক এলাকায় আরেকটি বোমা হামলায় ১২ জন নিহত হয়। সোয়াতের মিংগোরা শহরের উপকণ্ঠে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বাইরে এক বিস্ফোরণের ঘটনায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে। আহত অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। খবর বিবিসি ও এএফপি অনলাইনের।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে পাকিস্তানের কোয়েটা ও মিংগোরা শহরে এসব হামলা চালানো হয়। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলেছেন, হামলায় আহত অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজন। পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বেলুচিস্তান প্রদেশের প্রধান শহর কোয়েটায় পরপর দুটি বোমা হামলায় অন্তত ৮৮ জন নিহত ও ১২১ জনেরও বেশি মানুষ আহত হয়। এটিকে একটি আত্মঘাতী হামলা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সাংবাদিকরা ছুটে আসার পর আরেকটি দূরনিয়ন্ত্রিত বোমার বিস্ফোরণ ঘটান হয়। এতে উদ্ধার করতে আসা পুলিশসহ ২২ জন নিহত হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সুন্নি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী লস্কর-ই-ঝাংভি কোয়েটায় হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে। পাকিস্তানের ১৮ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ শিয়া মতাবলম্বী। এই হামলা এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর এ পর্যন্ত চালানো সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। আল কায়েদা নেতা ওবামা বিন লাদেনকে হত্যার অল্প দিন পর ২০১১ সালের ১৩ মে শবকদর শহরে একটি থানায় চালানো আত্মঘাতী হামলার পর এটি পাকিস্তানে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা, ওই হামলায় ৯৬ জন নিহত হয়। বৃহস্পতিবার সকালে কোয়েটার জনবহুল অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি যানে পৃথক বোমা হামলায় ১১ জন নিহত ও কয়েক ডজন আহত হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা জুবাইরা মেহমুদ জানান, স্নুকার ক্লাবে প্রথম আত্মঘাতী হামলাকারী ক্লাব ভবনের ভেতরে বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। এর ১০ মিনিট পর যখন পুলিশ, মিডিয়া কর্মী ও উদ্ধারকর্মীরা ঘটনাস্থলের দিকে ছুটে আসছিলেন তখন ভবনের বাইরে একটি কারে দ্বিতীয় হামলা চালানো হয়। নিহতদের মধ্যে নয়জন পুলিশ কর্মকর্তা, একজন স্থানীয় টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান রয়েছেন। পুলিশ জানায়, স্নুকার ক্লাবটিতে প্রধানত শিয়া মুসলিমদের যাতায়াত ছিল।

No comments

Powered by Blogger.