গোলাপ গাঁদা চন্দ্রমল্লিকা মাধবীলতার হাসিতে প্রকৃতি সজীব- বসনত্মের আবাহন- সমুদ্র হক

 যদিও ফাগুন আসতে কিছুটা সময় বাকি তার পরও মধুময় প্রেমের বসন্ত বেলার ফাগুনের হাওয়া এখনই বইতে শুরম্ন করেছে। ফুলের গানে ভ্রমরাও উঠেছে উড়ে। স্বপ্ন ভরা সম্ভাষণের পালা যেন এখনই, তর আর সইছে না।
ফুলের বাগানে এখনই ফুটেছে কতই না ফুল। পঞ্জিকার শীতকাল চলে যেতে দু'সপ্তাহেরও কম বাকি। তাই বলে ফুলেরা বসে নেই মোটেও। আম্রকুঞ্জে যখন ডালে ডালে মঞ্জরির মিষ্টি ঘ্রাণ ছড়িয়ে দিয়েছে তখন আর ফুলের পাপড়ি মেলতে দেরিই বা কেন! ফাল্গুনের গাঁদা ফুল তো এবার আগেভাগেই ফুটে জানান দিয়েছে বসনত্ম দুয়ারে দাঁড়িয়েছে। কবির কথায় 'ইফ উইন্টার কামস ক্যান সপ্রিং বি ফার বিহাইন্ড...।' বসনত্মেরই হাওয়া তাই এখনই। এই তো দু'দিন আগেই পূর্ণিমার ভরা চাঁদের সি্নগ্ধ মায়াবী আলোয় শীতের অবগুণ্ঠন খুলে দিয়ে প্রকৃতিতে বসনত্ম আমন্ত্রণ জানাল। রাত শেষ না হতেই ফুলে ফুলে পাপড়িও মেলেছিল। গোলাপ গাঁদা, চন্দ্রমলিস্নকা, মাধবীলতা, রজনীগন্ধার হাসিতে প্রকৃতি সজীব। এই ফুলগুলোকে নিয়ে কত যে কথা যার অনেক কিছুই হয়ে আছে কিংবদনত্মি। বিশেষ করে ফুলের রানী গোলাপের কথাই বেশি। ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়নের বলেছিলেন 'যে জায়গায় ফুল বিলুপ্ত হতে থাকে সেখানে মানুষ বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।' সম্রাটের কথা হয়ত অতিকথন (!) তাই বলে একেবারে উড়িয়েও দেয়া যায় না। ফুলের প্রতি ভালবাসা বিশ্বজনীন। ফুল শুধুই কি সৌন্দর্যের প্রতীক! শুধুই কি বসনত্মের! উত্তর একটাই_ মোটেও তা নয়। ফুল পবিত্রতার ভালবাসার, শ্রদ্ধার অর্ঘ্য। পুজোর নৈবেদ্য। বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন ফুল শুধুই সৌন্দর্যের প্রতীক নয়। প্রত্নতাত্তি্বকরা ৫০ বছর আগের পুবনো ফুলের তোড়ার খ-াংশ খুঁজে পেয়েছেন নেদারল্যান্ডসের এক সমাধি থেকে। বিজ্ঞানীরা গোলাপের প্রায় তিন কোটি বছরের প্রাচীন জীবাশ্মর সন্ধানও পেয়েছেন। এ থেকে প্রত্নতাত্তি্বকদের ধারণা সভ্যতার প্রথম প্রহর থেকেই গোলাপ পুষ্পকুলের সেরা। গোলাপকে নিয়ে আছে মিথ, আছে কিংবদনত্মি, আছে ইতিহাস। পৌরাণিক কাহিনী থেকে জানা যায়, পদ্মকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ফুল হিসেবে দাবি করেছিলেন ব্রহ্মা। বিষ্ণু তা ভুল প্রমাণের জন্য ব্রহ্মাকে স্বর্গে আমন্ত্রণ জানালেন। শুভেচ্ছা জানালেন গোলাপ দিয়ে। গোলাপের গন্ধে ও সৌন্দর্যে ব্রহ্মা এতটাই বিমোহিত হলেন যে স্বীকার করে নিলেন গোলাপই শ্রেষ্ঠ। গ্রীক উপাখ্যানেও মধুময় প্রেমের সা্য হয়ে আছে গোলাপ। প্রেমের দেবী ভেনাস যখন সমুদ্র থেকে উঠে আসে তখন শরীরের যে জল গড়িয়ে পড়ছিল তাঁর প্রতিটি ফোটাই পরিণত হচ্ছিল লাল গোলাপে। রোমান উপাখ্যানেও বর্ণিত আছে গোলাপকে নিয়ে শত কথা। গোলাপের উপাখ্যানে বাদ যায়নি মিসর। মিসরীও উপাখ্যানে বলা হয়েছে, কিওপেট্রা যখন জুলিয়াস সিজারের সেনাপতি মার্ক এন্টনিকে তাঁর (কিওপেট্রা) প্রাসাদে আমন্ত্রণ জানান, তখন হাঁটু সমান গোলাপ বিছানো হয়েছিল। রোমান সম্রাট নিরো তাঁর রাজপ্রাসাদের মেঝে ঢেকে রাখতেন গোলাপ দিয়ে।
ফুলের কদর কোথায় না নেই। বসনত্ম বেলায় বাংলাদেশে মেয়েদের খোঁপায় হলুদ গাঁদা ফুল কিই না সৌন্দর্য এনে দেয়। প্রণয়ের কাছে গোলাপের সম্ভাষণ কত যে মধুময়তা তা নিজের হৃদয়ে প্রশ্ন করলেই উত্তর মেলে। বসনত্মের প্রাক্কালে ফেব্রম্নয়ারি মাসের শুরম্ন থেকেই ফাল্গুনের প্রস্তুতিও শুরম্ন হয়ে গিয়েছে। এই প্রস্তুতিতে প্রথমেই আসে ফুল। আর ফাল্গুনের ফুলের সারিতে প্রথমেই গোলাপ ও গাঁদা। তারপর সকল ফুলই আসে একে একে। রজনীগন্ধা ফুল এখন এমনই যে ফুলর গুচ্ছে রজনীগন্ধা না হলেই নয়। কোন ফুলকে বাদ দেয়া যাবে! সবই তো পাপড়ি মেলে তাকিয়ে আছে। ব্যর্থ প্রেমের প্রতীক হিসেবে অনেকেই কবি ওয়ার্ডসওয়ার্থের 'ড্যাফোডিল' ফুলকে মনে করেন। সত্যিই কি ড্যাফোডিল প্রেমে ব্যর্থতা আনে! এর উত্তর খুঁজ পায়নি গবেষকগণ। তবে বলা হয়েছে ওয়ার্ডসওয়ার্থ ড্যাফোডিলকে প্রেমের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন তাঁর কবিতায়।
ফুলকে ভালবাসার ও ভাললাগার দিন এসেই গেল। এই সময়টায় রৌদ্র ছায়াতেও এসেছে পরিবর্তন। ফেব্রম্নয়ারি মাস বাংলা ভাষাকে মর্যাদার আসনে স্থান দেয়ার গৌরবের মাস। বাঙালী সংস্কৃতির শেকড় থেকে নানা ব্যঞ্জনা উঠে আসে এই মাসে। ফুল ছাড়া কোন আয়োজনেই আসে না পরিপূর্ণতা। ফুলের পবিত্রতা দিয়ে ফুটে ওঠে প্রতিটি আয়োজন। বসনত্মেরও আগমন এই মাসেই। বসনত্মের দিনে লাল পেড়ে হলুদ শাড়ি পরে খোঁপায় গাঁদা ফুল গুঁজে দেবে মেয়েরা। ঋতুর প্রতীক হয়ে থাকে ফুল। ফুলকে দিয়েই ভালবাসার, শ্রদ্ধার অর্ঘ্যের সকল আয়োজন আলাপন...।

No comments

Powered by Blogger.