হায় ঢাকা! হা ঢাকা! তোমার যতন জানিনে!- মাসুদা ভাট্টি

ঢাকার প্রতিদিনের জীবন আর সকালে বেরিয়ে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে আসা নিয়ে চমৎকার একটি উপন্যাস লেখা যায় এরকম একটি মন্তব্য করলেন ঢাকায় কর্মরত এক বিদেশী উন্নয়নকর্মী বন্ধু। এ কথা সত্যি যে, ঢাকা আসলেই এক অদ্ভূত চরিত্রের নগরী হয়ে উঠছে ক্রমশ।
বিশ্বের অন্য অনেক মেগা সিটির মতো ঢাকার চাকচিক্য ক্রমশ বাড়ছে এ কথা যেমন সত্য তেমনই একই সঙ্গে এ কথাও সত্য যে, ঢাকা ধীরে ধীরে তার অন্তর্গত সৌন্দর্যও হারাচ্ছে। আমার মাঝে মাঝে মনে হয়, ঢাকা শহরের যদি কথা বলার মতা থাকত তাহলে তার হাহাকারে ঢাকাবাসীর ঘুম হারাম হয়ে যেত। এই কিছুদিন আগেও এই শহরের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে থাকত ভয়ঙ্কর কালো ধুয়ায়। সাদা কাপড় পরে বেরুলে সন্ধ্যায় তা নিকষ হয়ে যেত এই শহরের ধূলো, ধুয়া আর দূষণের ময়লায়। গাড়িতে তরল গ্যাসের ব্যবহার আমাদের সেই অন্ধকার থেকে মুক্তি দিয়েছে সন্দেহ নেই কিন্তু আজ আবার দেশবাসী বিশেষ করে ঢাকাবাসীর চুলো জ্বলছে না গ্যাসের অভাবে। মধ্যরাত পর্যন্ত গৃহিণীরা অপো করছেন রান্নার গ্যাসের জন্য। এ এক ভয়ঙ্কর টানাপোড়েন, এদিকে কাটলে ওদিকে খাটো হয়, মধ্যবিত্ত জীবন যেন তীব্র শীতে শরীরের মাপের চেয়ে খাঁটো একটি কম্বলকে সম্বল করে ঘুমোনোর মতো, মাথা ঢাকলে পা বাইরে থাকে আর পা ঢাকতে গেলে গলা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকে। ঢাকার আকাশকে কার্বনমুক্ত করতে গিয়ে গাড়ি চালানোর জন্য তরল গ্যাসের ব্যবহার ছিল একটি ভাল উদ্যোগ কিন্তু পরিবারের সদস্য সংখ্যা বেশি থাকলে যা হয়, একটি মুখ সোনা-রূপা দিয়েও ভরানো যায় কিন্তু কোটি মুখ ছাই দিয়েও ভরানো যায় না_ প্রবাদের মতো। সীমিত গ্যাস সম্পদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ায় এখন শিল্প কারখানায়তো বটেই, মানুষের সাধারণ প্রাত্যহিক জীবনেও তার বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আমি নিশ্চিত, আর কিছুদিনের মধ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দল এই গ্যাস ইস্যু নিয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন-হানাহানি শুরু করবে। তখন হবে আরেক সার্কাস। একদল মানুষ আরেক দল মানুষের দুর্দশা নিয়ে রাজনীতি করবে, তাদেরকে ইস্যু বানিয়ে নিজেদের মতায় যাওয়ার পথ পরিষ্কার করতে শুরু করবে।
সেদিন এক ঘরোয়া আলোচনায় ঢাকা শহরকে নিয়ে কথা হচ্ছিল, বিশেষ করে ঢাকা শহরের গোড়াপত্তন থেকে এ পর্যন্ত যত কিছুই হয়েছে তা হঠাৎ করেই পাওয়া বলে একজন মন্তব্য করলেন। বিশেষ করে সুবেদার ইসলাম খাঁর ঢাকা-পত্তনী অর্থাৎ ঢাকের বাদ্যি বাজিয়ে সেই আওয়াজ যতদূর অবধি যায় সেটুকুকে ঢাকা নাম দেয়া (যদিও ঢাকার এই ইতিহাস নিয়ে অনেক ঐতিহাসিকের আপত্তি আছে এবং এটা খুব প্রামাণ্য ইতিহাসও নয়, তবুও আলোচনার খাতিরে মেনে নেয়া) এই শহরটির এই জন্ম ইতিহাসকে মেনে নিলে বলা যায় যে, সেই সময়ের রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বাস্তবতায় ঢাকা মধ্য-গুরুত্বপূর্ণ একটি জনপদ ছিল। বিশেষ করে তিনদিকে নদী বেষ্টিত হওয়ায় ঢাকা ধীরে ধীরে গুরুত্ব পেতে থাকে। ব্রিটিশ আমলে ঢাকা সত্যিকার বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গ্রহণযোগ্যতা পেলেও এখানে সে রকম ব্রিটিশ ইনভেস্টমেন্টের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। দেশ ভাগের আগ পর্যন্ত ঢাকা আর কিছুতে না হোক একটি শিতি মধ্যবিত্ত শ্রেণী এবং তাদের হাত ধরে শিা ও শিল্প-সাহিত্যের এক অনন্য নিকেতন হয়ে ওঠে। আর দেশ ভাগের পর ঢাকার প্রাদেশিক রাজধানী হয়ে ওঠা এই শহরের ভাগ্য পরিবর্তনের নিঃসন্দেহে একটি বড় মাইলফলক। মজার ব্যাপার হলো পাকিস্তান আন্দোলনের সূতিকাগার এবং প্রধান কেন্দ্র হিসেবে ঢাকার আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কথা থাকলেও পাকিস্তান আমলে ঢাকা যে অবহেলা পেয়েছে তা আসলে এই শহরের পাওয়ার কথা ছিল না। যে কারণে এই দেশের মানুষের সঙ্গে এই শহরও পাকিস্তান-বিরোধিতায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে সন্দেহ নেই। কিন্তু সবকিছুর পরেও একটি কথা দৃঢ়ভাবেই বলা যায় যে, এই ঢাকা শহরের আজকের ঢাকা শহরে পরিণত হওয়াটা আসলে ভীষণ নাটকীয় এবং এই ঘটনাবলীর বিস্তারক্রম খুবই সংপ্তি। অনেকে হয়তো ঢাকার বয়স হিসেব করে বলতে চাইবেন যে, চার শ' বছর খুব দীর্ঘ সময় কিন্তু এই চার শ' বছরকালের ভেতর কিছু ঘটনার মোড় পরিবর্তনকারী সময়-নির্ধারককে চিহ্নিত করলে তা হাতে গুনে বলে দেয়া যায় বলে আমি মনে করি।
সে যাহোক, ঢাকার ইতিহাস থেকে এ কথাই বলতে চেয়েছিলাম যে, ঢাকা হঠাৎ করেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠার কারণেই হয়তো আজকে আমরা ঢাকা শহরের গুরুত্বটি ঠিক বুঝি না। সেদিনের আলোচনায় এক বন্ধু যুক্তি দিলেন যে, ঢাকা শহরকে আমরা আসলে কেউই 'ওউন' করি না বা এর দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করি না। কথাটি সর্বৈব সত্যি না হলেও খানিকটা সত্য বলে আমি মনে করি। এই ঢাকা শহরের আদি বাসিন্দা যারা, পুরনো ঢাকায় যারা এসে বসতি স্থাপন করেছিলেন তাদের একটি বিরাট অংশ নবাব-সুবেদারদের সঙ্গে আসা বহিরাগত। তারা এসে ঢাকার আদি বাসিন্দাদের নিজ এলাকা থেকে উৎখাত করেছিলেন এবং সেই ধারাবাহিকতা এখনও বর্তমান। শহর পত্তন করতে গিয়ে সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে যখনই 'ঢাকাইয়া'দের জমিজমা অধিগ্রহণ করা হয়েছে তখনই তাদেরকে নানা ভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই তাঁরা হয় সঠিক মূল্য পাননি কিংবা পেলেও সেই টাকা উদ্ধার করতে গিয়ে তাঁদের জুতোর তলা য় হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে পত্রপত্রিকার খবর কিংবা পরিচিতদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে, ঢাকার আশপাশে বিশেষ করে ফার্মগেট থেকে আরও উত্তরের দিকে যেতে থাকলে অনেক এলাকার মানুষই তাদের জমির ন্যায্য মূল্যতো পানইনি এবং কেউ কেউ এখনও ঘুরছেন সরকারের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের জন্য। ইতোমধ্যেই পার হয়ে গেছে প্রায় ত্রিশ চলি্লশ বছর। সম্প্রতি পাকিস্তান আমলে গ্রহণ করা জমির দাম আদায়ের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছেন একজন পরিচিত বন্ধুর বাবা। ঢাকা শহরের আদি বাসিন্দাদের বঞ্চিত করার এই ধারাবাহিকতা বহু পুরনো এবং ভবিষ্যতেও তা চলমান বলে মনে হয়। আর যারা বাইরে থেকে কর্মোপল েকিংবা স্থায়ী ভাবে বসবাসের জন্য ঢাকায় এসেছেন তাঁদের মধ্যে একটি প্রবণতা ল্য করা যায় যে, নিজেদের ছোট্ট মফস্বল বা জেলা শহরের স্মৃতিকেই তাঁরা আগলে রাখেন বুকের ভেতর। যে কারণে তাঁরা ঢাকাকে খুব করে আঁকড়ে ধরতে পারেন বলে মনে হয় না। এটা খুবই সাধারণ মানবীয় বৈশিষ্ট্য, মানুষ তার নিজস্বতাকে ছেড়ে যখন অন্য কোথাও যায় তখন তার ফেলে আসা অতীতের অনেক তুচ্ছতাও বিশাল আর সুন্দর হয়ে ওঠে। যেমন একজন প্রবাসী আজীবন প্রবাসে থেকেও বিদেশের প্রতিটি জিনিসকে দেশের সঙ্গে তুলনার নিক্তিতে যাচাই করেন এবং প্রায়শই মনের অজান্তে দেশের সঙ্গে তুলনায় বিদেশকে নরকবাস হিসেবে মনে করেন। যেহেতু জীবনের চাপ আসলে এড়ানোর উপায় নেই সেহেতু তাকে বাধ্য হয়েই সেই নরকবাস মেনে নিতে হয়।
ঢাকার েেত্রও তাই। বাইরে থেকে আসা বেশিরভাগ মানুষই ঢাকাকে 'আপন' করে নিতে দ্বিধান্বিত। তবে হয়তো দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্মে গিয়ে বিষয়টি ভিন্নতা লাভ করে। ঢাকায় এখন এমন অনেক পরিবারই আছে যাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্ম সম্পূর্ণ ঢাকাবাসী হয়ে গিয়েছে কিন্তু তাই বলে ঢাকাকে যে আমরা সকলেই 'ওউন' করি বা এর দায়-দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে এর জন্য 'কিছু' করার চেষ্টা করি তা কিন্তু নয়, বরং এই শহরের কাছ থেকে আমরা ক্রমাগত গ্রহণ করি, কিন্তু দেয়ার বেলায় ঠন্ঠনাঠন্। আমার মুঠো আলগা হয় না যেন কিছুতেই। আমাদের দেশে হাজার হাজার বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা কাজ করছে, বেশিরভাগই মানুষের অধিকারের কথা তথা নাগরিক অধিকারের কথা বলছে। কিন্তু আমরা কেউই হয়তো নাগরিক হিসেবে আমাদের দায়িত্বের কথা বলি না। ঢাকার রাস্তায় আমরা নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য মিছিল করি, মিটিং করি, হরতালের ডাক দেই কিন্তু নাগরিক হিসেবে ঢাকার প্রতি আমাদের কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য আছে তা পালনের কথা কি কখনও বলি? শুধু ঢাকার কথা কেন বলছি? আমরা যে যে শহরের বাসিন্দা সেই শহরের কথাও কি কখনও ভাবি? আমরা প্রায়শই বিদেশের শহরগুলোর উদাহরণ দেই। কিন্তু এ কথা যে কতখানি সত্য যে, একজন লন্ডন, প্যারিস বা নিউইয়র্কবাসী তার শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা থেকে তার নাগরিক দায়িত্ব পালনে যে কত বেশি সচেতন এবং উদ্যমী তা এসব শহরের রাস্তায় কয়েকদিন হাঁটলেই টের পাওয়া যায়। কোন নাগরিক যদি তার নাগরিক দায়িত্বে অবহেলা দেখিয়ে একটি কোকের খালি ক্যান বা কলা খেয়ে তার খোসা রাস্তায় ফেলেও যায় তাহলে তার পেছনে হাঁটা নাগরিক স্ব-উদ্যোগে তা তুলে ময়লা রাখার নির্দিষ্ট ঝুড়িতে রেখে দেয়। এই দায়িত্ব পালনের জন্য কিন্তু রাষ্ট্র তাকে পুরস্কৃত করবে না কিংবা আমি অন্যের ফেলে যাওয়া ময়লা তুলব কেন? আমি কি তার চাকর নাকি?_ এই জাতীয় হীনম্মন্যতা বোধও তার ভেতর কাজ করে না। এখানেই হচ্ছে একটি শহরকে 'ওউন' করা বা শহরটির দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করা বা না করার মধ্যে পার্থক্য। ঢাকাকে আমরা যদি নিজের মনে করি তাহলে এর ভাল-মন্দের দায়ভার আমাদের ওপরই বর্তায়। শুধুমাত্র সরকার বা কর্তৃপরে দিকে তাকিয়ে বসে থেকে বা তাদেরকে গালাগাল দিয়ে দায়িত্ব শেষ করলে দিন দিন ঢাকার পরিণতি কোন্ দিকে যাবে তা বোঝার জন্য নগরবিদ বা পরিবেশবিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই, সাদা মনেই তা উপলব্ধি করা সম্ভব।
কিছুদিন আগে এক বিদেশী বন্ধু এসেছিলেন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করা যায় কি না তার সম্ভাবনা যাচাইয়ের জন্য। এয়ারপোর্ট থেকে তাকে রিসিভ করে শহরের মধ্যবর্তী এলাকায় তার হোটেলে পেঁৗছে দিতে সময় লেগেছে পাক্কা আড়াই ঘণ্টা। এই আড়াই ঘণ্টা ধরে বেচারা কী ভেবেছেন তা বলতে পারব না কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, একজন ব্যবসায়ী হিসেবে তার সম্ভাবনা যাচাইয়ের সমস্ত উদ্যম ওই আড়াই ঘণ্টায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছে। দু'দিন ঢাকায় থেকে তিনি যত বৈঠক করতে চেয়েছেন তার অর্ধেকও করতে পারেননি এবং ফিরে গিয়ে তিনি তাঁর ধন্যবাদ-চিঠিতে একটি স্পষ্ট বার্তা লিখেছেন, তিনি বাংলাদেশে বিনিয়োগে খুবই আগ্রহী কিন্তু তার জন্য এই দেশের 'কানেকটিভিটি'র পরিবর্তন ঘটানো অতি জরুরী। আমি নিশ্চিত ভদ্রলোক অত্যন্ত ভদ্রগোছের, তাঁর জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো লিখতেন, "প্রিয় বন্ধুবর, তোমার দেশ সম্ভাবনার এ কথা সত্যি কিন্তু তোমরা সেই সম্ভাবনাকে ক্রমশ হত্যা করছ। একটি দেশের রাজধানী যদি সেই দেশটির মাথা হয় তাহলে তোমরা এই মাথাটিকে ক্রমশ মোটা করে তুলছ, এই মোটা মাথা দিয়ে তোমরা দেশটিকে রসাতলে নেয়া ুছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না।"
ঢাকার রাস্তার আর কোন যানবাহন ধারণের মতা নেই, তারপরও শুনি ঢাকায় প্রতিদিন তিন শ' করে নতুন গাড়ি নামছে। ঢাকার মতা নেই আর বাড়তি মানুষের চাপ গ্রহণের কিন্তু তারপরও সারা দেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসছে ঢাকার দিকে। আজকে গোটা বিশ্ব স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে হাইতির দুর্দশায়। হাজার হাজার মানুষ মারা গিয়েছে মাত্র এক রাতের দুর্ঘটনায়। ঈশ্বর না করুন, যদি ঢাকায় এরকম কোন দুর্ঘটনা ঘটে? আমরা এ কথাও ভাল করেই জানি যে, ঢাকা বিশ্বের অন্যতম ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে নগরায়নের যত অনিয়ম ঘটানো যায় ঢাকায় তা প্রতিদিন প্রতি পলে ঘটছে। একটি শহরকে যত ভাবে কষ্ট দেয়া সম্ভব আমরা দিয়ে চলেছি। কেউ হয়তো প্রশ্ন করবেন যে, আপনি এত সবক দিচ্ছেন, একটি সমাধান দিয়ে দিন পারলে? না ভাই, আমি নগর পরিকল্পনা শাস্ত্র সম্পর্কে কিছুই জানি না বলতে গেলে, তবে সাধারণ জ্ঞান দিয়ে যতটুকু বুঝি তাহলো, ঢাকার সমস্যাবলী অবিলম্বে সমাধান করতে হবে। এতে সরকারের সঙ্গে সঙ্গে একজন সাধারণ নাগরিক ও সমান দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। আমাদের বিরোধী দল প্রধানমন্ত্রী ভারতে গিয়ে দেশ বিক্রি করে দিয়ে এসেছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করলেন, অথচ একবারও তিনি ঢাকা বাঁচানোর কথা বলেন না। তিনি তাঁর বাড়ি বাঁচানোর জন্য সংসদ পর্যন্ত বর্জন করতে পেরেছেন কিন্তু ঢাকাকে বাঁচানোর জন্য তাঁর কোনই উদ্যোগ নেই। আবারও সেই নাগরিক দায়িত্ববোধের কথা এসে যায়। বিরোধী দলীয় নেতা বার বার নাগরিক অধিকারের কথা বলেন ঠিকই কিন্তু নাগরিক হিসেবে তাঁর দায়িত্ব পালনের কথা সম্পূর্ণ ভুলে যান।
আমরা জানি বর্তমান সরকার 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' গড়ার জন্য দিন বদলের কথা বলে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েছে। সরকার চাইলে সব হয়_ বাংলাদেশের মানুষ ঠিক এই সত্যে বিশ্বাস করে। এক বছর চলে গেছে, আমরা তেমন কিছুই দেখিনি এই ঢাকা শহরকে বাঁচানোর উদ্যোগ হিসেবে সরকারের প থেকে। আমরা অপো করছি, চেয়ে আছি সরকারের দিকে, কিন্তু খুব বেশিদিন কি মানুষ তাকিয়ে থাকতে পারে? মানুষের ধৈযের সত্যিই একটি সীমা-পরিসীমা আছে। দিন বদল ঘটানো সম্ভব, অসম্ভব কিছুই নয়। সঠিক পরিকল্পনা আর সঠিক নির্দেশনা মিললেই দিনের পরিবর্তন ঘটবে। আগেই বলেছি ঢাকা হচ্ছে বাংলাদেশের মগজ, এই মগজ ধোলাইয়ের কাজটিই যদি দিন বদলের সরকার করতে ব্যর্থ হয় তাহলে দিন বদলের পুরো প্রক্রিয়াটিই ব্যর্থ হতে বাধ্য। আমরা অবিলম্বে ঢাকা-সংস্কারের বাস্তবায়ন দেখতে চাই, কোন ফুলঝরা প্রতিশ্রুতি নয়, প্রয়োজনে যে কোন কঠোর সিদ্ধান্ত যেমন সরকারী যেসব কার্যালয় বা প্রতিষ্ঠান বিশাল এলাকা নিয়ে বসে আছে তাদেরকে প্রয়োজনে ঢাকার বাইরে ঠেলে সরিয়ে দিতেও যেন সরকার দ্বিধান্বিত না হয় তার নিশ্চয়তা চাই। আর তারপর ধীরে ধীরে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার ভিত্তিতে সরকার এগুবে সেটাই আমাদের কাম্য। সামনে আসছে ঢাকার মেয়র নির্বাচন। আমি নিশ্চিত যে, এই যানজট, গ্যাস সঙ্কট আর ঢাকা শহরের স্থবিরতাই হবে সরকারী দলের প্রার্থীর সবচেয়ে দুর্বল জায়গা। অবিলম্বে যদি সরকার এর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হয় তাহলে নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, মেয়র নির্বাচনের ফলাফল আওয়ামী লীগের অনুকূলে আসবে না_ এর জন্য জ্যোতিষী হওয়ার আসলেই প্রয়োজন নেই, ঢাকার রাস্তায় যানজটে কিছুণ বসে থাকলেই টের পাওয়া যায় এর সত্যতা।
একটি দু'টি নয়, পাহাড়প্রমাণ সমস্যা জর্জরিত ঢাকা, তবুও প্রিয় এই নগরী, এই জনপদ, এই ইট-কাঠের নগর, এই ভালবাসার নগরী।
ঢাকা, ২২ জানুয়ারি, ২০১০
বট্রলঢটঠদর্টর্ধআদর্মবটধফ.ডমব
বট্রলঢটঠদর্টর্ধআদর্মবটধফ.ডমব

No comments

Powered by Blogger.