তুরাগ তীরে বিশ্ব এজতেমা শুরু, উদ্বোধনী দিনে আম বয়ান- প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত রবিবার

নজিরবিহীন ৪ স্তরের নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে তবলীগ জামাতের বিশ্ব এজতেমা শুক্রবার থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমার কাল রবিবার হবে আখেরি মোনাজাতা।
বিশ্ব এজতেমায় যোগ দিতে হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি এজতেমা ময়দানে ছুটে আসছেন। রবিবার আখেরি মোনাজাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত মুসল্লিদের এ ঢল আব্যাহত থাকবে। শুক্রবার প্রথম দিনে বাদ ফজর থেকে আমবয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব এজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। এজতেমার শুরুর দিন শুক্রবার হওয়ায় জুমার নামাজে অংশ নিতে মুসল্লিদের প্যান্ডেল কানায় কানায় ভরে যায়। প্যান্ডেলের নিচে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা অংশ নেন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ওপরে। জুমার নামাজে অংশ নিতে সকাল থেকেই টঙ্গী ও আশপাশ এলাকার হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন টঙ্গী এজতেমা ময়দানে।
এ বয়ান বাংলায় তরজমা করেন বাংলাদেশের মুরুব্বি হযরত মাওলানা দেলোয়ার হোসেন। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে যথারীতি ঈমান, আমল, আখলাক ইত্যাদি বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে এজতেমার প্রথম পর্বের ৩ দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৩ জানুয়ারি রবিবার জোহরের নামাযের পূর্বে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। ১৮ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা।
প্রথম পর্বের বিশ্ব এজতেমার প্রথম দিনে জুমার জামাতকে কেন্দ্র করে টঙ্গীতে মুসল্লিদের ঢল নামে। জুমার মূল জামাত এজতেমা ময়দান ছাড়িয়ে আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করে। স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় এবারই প্রথম তুরাগ নদীর পশ্চিম তীরে ইমামের মেহরাব স্থানান্তর করা হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহনী কর্তৃক স্থাপিত ৮টি ভাসমান ব্রিজের মাধ্যমে মেহরাবের সঙ্গে নদীর পূর্ব তীরে মূল ময়দানের সেতুবন্ধ স্থাপিত হয়। ফলে এবছর ভাসমান সেতুতেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসল্লি জুমার জামাতে শরিক হন। জুমার জামাতে ইমামতি করেন কাকরাইল মারকাজ মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা জোবায়ের। গতকাল জুমার আগ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশের প্রায় ৮ হাজার মুসল্লি এজতেমায় অংশ নিয়েছেন। অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও সমবেত লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে তবলীগের ৬ উসূল অর্থাৎ কালেমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলিমিন, সহীহ নিয়ত ও তাবলীগ ইত্যাদি বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে এজতেমার প্রথম পর্বের ৩দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। আজ শনিবার বাদ আছর প্রতিবছরের ন্যায় যৌতুকবিহীন বিয়ে সম্পন্ন করা হবে বলে ইজতেমা সূত্রে জানা গেছে। এসব বিয়ে বর ও উভয়পক্ষের অভিভাবকদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে বর ও কনের নাম তালিকাভুক্তি হচ্ছে। ১৩ জানুয়ারি রবিবার জোহরের নামাজের পূর্বে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে প্রথম পর্বের সমাপ্তি ঘটবে। ১৮ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের ৩ দিনব্যাপী বিশ্ব এজতেমা।
বয়ান
শুক্রবার বাদ ফজর তাবলীগ জামাতের পাকিস্তানের মারকাজ মসজিদের ইমাম মাওলানা জামিল হাসানের আম (সার্বিক) বয়ানের মধ্য দিয়ে বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হয়। তার উর্দু ভাষায় প্রদত্ত বয়ান বাংলায় তরজমা করেন তাবলীগ জামাতের স্বাগতিক বাংলাদেশের মুরুব্বি মাওলানা দেলোয়ার হোসেন। এর পর বাদ জুমা বয়ান করেন কাকরাইল মারকাজ মসজিদের ঈমাম হাফেজ জোবায়ের। তিনি ঈমান ও ইয়াকিনের ওপর বয়ানে বলেন, মহান আল্লাহ জাল্লে জালালুহু তাঁর রসুলদের যেমন মর্যাদা দিয়েছেন, তেমনই উম্মতদেরও তাদের রসুলের কথার মর্যাদা দিতে হবে। তিনি পবিত্র কোরানের একটি আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন, ইহকালীন জিন্দেগি আমাদের যেন ধোঁকায় না ফেলে। কারণ আমরা ইচ্ছা করলেই বার্ধক্যকে ফিরাতে পারব না। মৃত্যুর স্বাদ আমাদের গ্রহণ করতেই হবে। আমলের ওপর নির্ভর করবে আমাদের পরকালীন জীবন। যাঁরা বেহেশতে যাবেন তাঁরা অফুরন্ত আরাম আয়েশে থাকবেন। প্রত্যেকের উচ্চতা হবে আদমের (আ) মতো ৬০ হাত লম্বা, চেহারা হবে হযরত ইউসূফ (আ) মতো সুন্দর এবং আখলাক হবে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা)-এর মতো। জান্নাতীরা যা ইচ্ছা করবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাই পাবে। কেউ যদি মনে করে আমি কৃষি কাজ করব তাহলে তাঁকে দেয়া হবে স্বর্ণের লাঙ্গল। বেহেশতীদের উদ্দেশে আল্লাহ বলবেন, ‘তোমরা দুনিয়াতে সারা জীবন আরাম আয়েশে থাকতে চেয়েছিলে কিন্তু তা পার নাই। আজ আমি তোমাদেরকে এমন পরিবেশে দেব যেখানে খুশির কোন সীমা থাকবে না। দুনিয়াতে থাকতে তোমরা সারা জীবন সুস্থ ছিলে না। কখনও সুস্থ আবার কখনও অসুস্থ থাকতে। এখন তোমাদের বেহেশতী জীবনজুড়ে থাকবে পরম সুস্থতা।’
এজতেমায় ৮৫ দেশের মুসল্লির অংশগ্রহণ ॥ জুমার আগ পর্যন্ত বিশ্বের ৮৫টি দেশের ৭৯৪৬ মুসল্লি এজতেমায় অংশ নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৪৯৬৬ জন বিভিন্ন মেয়াদের চিল্লাধারী মুসল্লি এবং বাকি ২৯৮০ জন শুধু এজতেমায় অংশ নিয়ে আখেরি মোনাজাত শেষে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাবেন বলে ইজতেমায় বিদেশী মুসল্লিদের ইজতেকবাল (অভ্যর্থনা) কক্ষ সূত্রে জানা গেছে। এবছর পাকিস্তান থেকে সর্বেচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ ৭৬৯ মুসল্লি এজতেমায় অংশ নিয়েছেন। ভারত থেকে এসেছেন ৩৩১ জন এবং সৌদি আরব থেকে ১৬৭ জন। এছাড়া বর্মা, মালদ্বীপ, আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ইরাক, ইরান, ওমান, ব্রুনাই, কুয়েত, কুরিয়া, চীন, জর্দান, তুরস্ক, থাইল্যান্ড, আরব আমিরাত, বাহরাইন, ফিলিপিন্স, মালয়েশিয়া, সিরিয়া, মিশর, সিঙ্গাপুর, লেবানন, আলজেরিয়া, মরক্কো, সোমালিয়া, তাঞ্জানিয়া, চাঁদ, ইয়েমেন, নাইজেরিয়া, তিউনেসিয়া, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়াম, কানাডা, কম্বোডিয়া, ফিনল্যান্ড, ফিজি, জাম্বিয়া, ফ্রান্স, আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কেনিয়া, মৌরিতানিয়া, মালি, নরওয়ে, আফ্রিকা, ফিলিস্তিন, জিবুতি, ঘানা, কাতার, জাপান ও জার্মানি মুসল্লিরা এজতেমায় অংশ নিয়েছেন।
এজতেমায় আরও ১ মুসল্লির মৃত্যু ॥ বৃহস্পতিবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানে চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার কয়ড়াডাঙ্গা গোকুলখালী গ্রামের ফজলুর রহমান (৩০) নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে এজতেমা ময়দানে ৩ মুসল্লির মৃত্যু হলো।
ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প উদ্বোধন ॥ শুক্রবার এজতেমায় আগত মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবার জন্য ড্যাব ও টঙ্গী থানা স্বেচ্ছা সেবক দলের উদ্যোগে পৃথক দুটি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্প উদ্বোধন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.