হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানানত্মর নিয়ে সংশয়

 সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি) নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরম্ন হলেও শিল্প উদ্যোক্তারা এখনও অবকাঠামো গড়ে তোলেনি। এতে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে কবে নাগাদ ট্যানারি স্থানানত্মরিত হবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তবে এ নিয়ে সরকার এবং ব্যবসায়ীরা এখনও পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়ে গেছে।
চামড়া শিল্পের কারণে হাজারীবাগসহ আশপাশের এলাকার পরিবেশ মারাত্মক হুমকির মধ্যে রয়েছে। শিল্পের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলায় বুড়িগঙ্গাসহ ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর পানিও বিষিয়ে উঠেছে। দ্রম্নত এ শিল্পকে রাজধানীর বাইরে স্থানানত্মরের দাবিও রয়েছে ঢাকাবাসীর। অন্যদিকে চামড়া শিল্পকে সাভারে স্থানানত্মরের যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল হাইকোর্ট, আগামী মাসে তা শেষ হচ্ছে।
সোমবার শিল্প মন্ত্রণালয়ের সংশিস্নষ্ট সূত্র জানিয়েছে, দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর অবশেষে গত বছর ১৮ নবেম্বর সিইটিপির জন্য আনত্মর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। আগামী ২৮ জানুয়ারি দরপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হচ্ছে। ৩৯৭ কোটি টাকা ব্যয়ে শিল্প মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাসত্মবায়ন করবে।
হাজারিবাগ থেকে ট্যানারিসমূহ সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে স্থানানত্মরের জন্য আজ মঙ্গলবার ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশন, ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশনসহ সংশিস্নষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শিল্পমন্ত্রী দীলিপ বড়ুয়া সাভারে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকে শিল্প মন্ত্রণালয়ের তরফ থেকে শিল্প মালিকদের দ্রম্নত ট্যানারি স্থানত্মরের জন্য আহ্বান জানানো হবে বলে জানা গেছে।
লেদার গুডস এ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্ট এ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রেসিডেন্ট বেঙ্গল লেদারসের চেয়ারম্যান মোঃ টিপু সুলতান এ বিষয়ে সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, এখনই সিইপিটির কাজ শুরম্নই হয়নি। সিইপিটির কাজ শুরম্ন হলেও শেষ করতে ২ বছর সময় লেগে যাবে। সিইপিটি স্থাপন শেষ না হওয়া পর্যনত্ম চামড়া শিল্প স্থানানত্মর করলে সাভারের পরিবেশও হাজারিবাগের মতো বিষিয়ে উঠবে। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রণালয় চামড়া শিল্পের জন্য যে প্রতিশ্রম্নত দিয়েছিল তাও এখনও বাসত্মবায়ন করেনি। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হলেও সরকার তাদের মাত্র ২৫০ কোটি টাকা দেয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকিং সংক্রানত্ম সমস্যা সমাধান এবং চামড়া শিল্প নগরীকে বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা ঘোষণার যে দাবি ছিল সরকার এখনও তা বাসত্মবায়ন করেনি।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ শহিদুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, চামড়া শিল্প নগরীতে এখনও শিল্প মালিকরা তাদের অবকাঠামো গড়ে তোলেনি। শিল্প উদ্যোক্তাদের আর্থিক সাহায্য চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শিল্প মালিকদের বৈঠক হয়েছে। তবে এখনও কোন সিদ্ধানত্ম হয়নি। তিনি জানান, চামড়া শিল্প নগরীর সঙ্গে আর্থিক সাহায্যের বিষয়টি সম্পৃক্ত নয়।
বিসিক সূত্রে জানা গেছে, সাভার চামড়া শিল্প নগরীতে সব ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রোম শেষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫৪ শিল্প প্রতিষ্ঠানকে পস্নট বরাদ্দ করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৪৬ প্রতিষ্ঠানকে পস্নট বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের জন্য পস্নটগুলোতে এখনও অবকাঠামো নির্মাণ করেনি উদ্যোক্তারা। পস্নটগুলোতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কাজ শুরম্ন করলেও হাজারীবাগ থেকে স্থানানত্মরের জন্য এক বছর সময় লেগে যাবে। এ জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোকে এখনই তাদের নিজস্ব অবকাঠামো নির্মাণ শুরম্ন করতে হবে। সাভারে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থানানত্মরের জন্য চামড়া শিল্পের ব্যবসায়ীরা সরকারের কাছে আর্থিক সহায়তা চাচ্ছে বলে জানা গেছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব অবকাঠামো গড়ে তুললে সরকার বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণকাজ আরও গতিশীল করতে বাধ্য হবে বলে বিশেস্নষকরা মনে করছে।
সূত্রমতে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে ১৯ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে সাভারে ১৯৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। ২০০৪-০৬ অর্থবছরে ৩২ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ভূমি উন্নয়ন করা হয়। ১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রশাসনিক ভবন, পুলিশ ফাঁড়ি, ফায়ার ব্রিগেড শেড, পাম্প ড্রাইভারস কোয়ার্টার ও পাম্প হাউস নির্মাণ করা হয়। এ ছাড়া ৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯ লাখ ৫৮৬ বর্গফুট রাসত্মা, ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৫ হাজার ৯৬ বর্গফুট ড্রেন, ১৭টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। সাড়ে ৩ কোটি প্রকল্প এলাকায় বিদু্যত,গ্যাস লাইন ও পানির লাইন স্থাপন করা হয়। পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়। এ ছাড়া প্রকল্পটির পরিবেশগত ছাড়পত্রও নেয়া হয়। তবে প্রকল্প এলাকায় বর্জ্য শোধনাগার না থাকায় সরকারের এই বিশাল বিনিয়োগ দীর্ঘদিন পড়ে রয়েছে।
সূত্র জানায়, সিইপিটি নির্মাণের জন্য ২০০৭ সালের ১২ ফেব্রম্নয়ারি আনত্মর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই সময় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কার্যাদেশ দেয়ার বিষয়টি সরকার অনুমোদন করে। তবে কোম্পানিটির বিরম্নদ্ধে অভিযোগের প্রেৰিত্রে কার্যাদেশ বাতিল করলে তারা হাইকোর্টে রিট আবেদন করে যাতে সিইপিটি প্রকল্পটি ঝুলে যায়। গত বছর ২২ জুলাই হাইকোর্ট রিট খারিজ করে সিইপিটি স্থাপনের নির্দেশ দেয়। রায়ে আগামী ২৮ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে চামড়া শিল্পকে সাভারে স্থানানত্মরের আদেশ দেয় হাইকোর্ট। তবে শিল্প মন্ত্রণালয় এজন্য আদালতের কাছে আরও ২ বছর সময় চাইবে বলে জানা গেছে।
বিসিক বলছে কারখানা স্থানানত্মর, লেআউট পস্নান ও নক্সা জমা দেয়ার জন্য সকল ট্যানারি মালিক এর মধ্যে দুই দফা চিঠি দেয়া হয়েছে। একই বিষয় নিয়ে বিসিক গত বছর ২৩ নবেম্বর এবং গত ১০ জানুয়ারি চামড়া শিল্প মালিকদের সঙ্গে বৈঠক করে। তবে এখনও কোন প্রতিষ্ঠান নকশা জমা দেয়নি বলে জানা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.