ভিনসন ম্যাসিফ জয়ে বাংলাদেশী ওয়াসফিয়া

বাংলাদেশের নারীর সাফল্যের আরও একটি অধ্যায়ের সূচনা হয় গত ৫ জানুয়ারি। দেশের সর্বকনিষ্ঠ এভারেস্ট বিজয়ী ওয়াসফিয়া নাজরীন জয় করেন এন্টার্কটিকার উচ্চতম পর্বতশৃঙ্গ ভিনসন ম্যাসিফ। আর এর ফলে রচিত হয় নতুন এক ইতিহাস।
ওয়াসফিয়া প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে দুর্গম অঞ্চলের এ পর্বত আরোহণ করেন। ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ ক্যাম্পেইনের অংশ হিসেবে এটি তাঁর চতুর্থতম পর্বতচূড়া জয়। তার এ অর্জন শুধু নারী জাতির জন্য নয়, বাঙালী জাতির জন্য, বাংলাদেশীদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও গৌরবেরও বটে। ওয়াসফিয়া নাজরীন এর আগে দ্বিতীয় এভারেস্ট বিজয়ী বাংলাদেশী নারী হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখান। নিশাত মজুমদার এভারেস্ট জয়ের মাত্র এক সপ্তাহ পরেই ওয়াসফিয়া এভারেস্ট জয় করেন। দ্বিতীয় নারী পর্বতারোহী হিসেবেই নয়, সবচেয়ে কম বয়সী বাংলাদেশী পর্বতারোহী হিসেবেও তিনি ইতিহাস গড়েন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ওয়াসফিয়া বাংলাদেশের লাল-সবুজের পতাকা ওড়ায় এভারেস্টের চূড়ায়। ওয়াসফিয়া তার এ জয়কে উৎসর্গ করেছিলেন বাংলাদেশের নারীদের প্রতি। যারা স্বাধীনতা, শান্তি ও সমতার জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ ও সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। ওয়াসফিয়া নাজরীন এ পর্যন্ত যে কয়টি পর্বত আরোহণ করেন তন্মধ্যে ভিনসন পর্বত আরোহণ করা ছিল অত্যন্ত দুঃসাধ্য কাজ। এ পর্বতও জয়ের অভিব্যক্তিতে তিনি খুব উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। দেশের জন্য তিনি এ কঠিন কাজটি করেছেন বলে উল্লেখ করেন। নতুন বছরে নতুন আশা নিয়ে যাত্রা করেন ওয়াসফিয়া। আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে গেলে সাফল্য অর্জন সম্ভব বলে তিনি জানান। ওয়াসফিয়ার এ সাফল্যে দেশবাসী আজ গর্বিত ও আনন্দিত।
‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ওয়াসফিয়া তার পর্বতারোহণ অভিযান শুরু করেন। ২০১১ সালে পৃথিবীর সাত মহাদেশের সাতটি চূড়া আরোহণের ঘোষণা দেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। তার লক্ষ্য ধরে ২০১১ সালের ২ অক্টোবর তিনি আফ্রিকার সর্বোচ্চ পর্বতসৃঙ্গ কিলিমানজারো জয় করেন। এরপর একই বছরের ১৬ ডিসেম্বর দক্ষিণ আমেরিকার সর্বোচ্চ পর্বতসৃঙ্গ আগঙ্কাওরাও জয় করেন এই সাহসী নারী। ২০১২ সালের ২৬ মে এভারেস্ট জয়ের মাধ্যমে তিনি সাতটি পর্বত চূড়ার তিনটি জয় করেন ওয়াসফিয়া। গত বছর ৮ নবেম্বর পতাকা প্রদান অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি ‘ভিনসন ম্যাসিফ’ পর্বত অভিযানের সূচনা করেন। এ উদ্দেশে ২৯ নবেম্বর কালাডায় পৌঁছান। সেখানে তিনি প্যাট্রিক মোরোর কাছে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। যিনি ৩০ বছর আগে প্রথম সেভেন সামিট জয় করেন। শীতল উষ্ণ ও জনহীন প্রান্তরে তিন সপ্তাহ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন ওয়াসফিয়া। এরপর ২৯ ডিসেম্বর চিলি থেকে এন্টার্কটিকার উদ্দেশে যাত্রা করেন তিনি। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে তিনি ৫ জানুয়ারি এ পর্বতসৃঙ্গ জয় করেন। আনন্দে উদ্বেল করেন দেশবাসীকে।
বাংলাদেশে নারী প্রগতির ৪০ বছর উদ্যাপন এবং অজস্র প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে মানুষের সাফল্যকে তুলে ধরতে ওয়াসফিয়া পর্বতারোহণের চ্যালেঞ্জ নেন। সাতটি মহাদেশের সাতটি শীর্ষ পর্বতের চূড়ায় বাংলাদেশ নিয়ে যাওয়াই তার এ চ্যালেঞ্জের উদ্দেশ্য। দেশব্যাপী প্রতিদিনই নারী নির্যাতনের ঘটনা পত্রিকার শিরোনম হচ্ছে। এ সময়ে ওয়াসফিয়ার ভিনসন পর্বত জয়ের খবর নারীর সাফল্যেরই সম্ভাবনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে বার বার। নারীর প্রতি সমাজের আচরণ বদলে দেয়ার ইঙ্গিতই যেন করছে আমাদের।
ওয়াসফিয়া নাজরীন নারী সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। তার এ সাফল্য নারীর সামর্থ্য ও যোগ্যতারই প্রমাণ করে। তাই এ জয়ের মাধ্যমে নারীরা শুধু অনুপ্রাণিত হবে না, হবে দৃঢ়প্রত্যয়ী এ প্রত্যাশা সবার। যোগ্যতা ও সাফল্যের বিচারে নারীরা যে কোন অংশে পিছিয়ে নেই তা ওয়াসফিয়া প্রমাণ করেছে। তাই নারীর প্রতি প্রচলিত সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণ পরিবর্তন করা একান্ত প্রয়োজন। আর তা সম্ভব হলে নারী নির্যাতনের ঘটনা নয়, নারীর সাফল্যের খবরই পত্রিকার শিরোনাম হবে। সকল ক্ষেত্রে নারীর ক্ষমতায়ন বাড়বে।
সাবিনা ইয়াসমিন

No comments

Powered by Blogger.