দুদকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদে ঘুষ নেওয়ার স্বীকারোক্তি by হায়দার আলী

অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনে প্রথমবারের মতো সোনালী ব্যাংক ও হলমার্ক কর্মকর্তাদের মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান


কার্যালয়ে হলমার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদ, মহাব্যবস্থাপক তুষার আহমেদ এবং সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখার উপমহাব্যবস্থাপক আজিজুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মুখোমুখি এই জিজ্ঞাসাবাদে সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তা আজিজুর রহমান ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে দায় স্বীকার করে নিয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন বলে দুদক সূত্রে জানা যায়।
জিজ্ঞাসাবাদে আজিজুর রহমান জানান, সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে তানভীরকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি সহায়তা করেছেন। বিনিময়ে আর্থিক সুবিধাও নিয়েছেন তিনি। তবে এ কাজে তিনি ছাড়াও সোনালী ব্যাংকের একাধিক পরিচালক ও কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। সূত্রে জানা যায়, এ সময় আজিজুর রহমান ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন কবিরের নামও উল্লেখ করেন। উল্লেখ্য, হুমায়ুন কবির হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে দুদকের দায়ের করা মামলার অন্যতম আসামি। বর্তমানে তিনি পলাতক। দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক জয়নাল আবেদীন শিবলী, উপপরিচালক আকতার হামিদ ভূঁইয়া উপসহকারী পরিচালক মজিবুর রহমানসহ ছয় সদস্যের একটি তদন্তদল হলমার্ক ও সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। একই টিম গতকাল সোনালী ব্যাংকের এমডি প্রদীপ কুমার দত্তের সঙ্গেও কথা বলে। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, জালিয়াতির ঘটনা ধরার পর হলমার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংককে ২৩২ কোটি টাকা ফেরত দিয়েছে এবং ৪৮ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা শাখা থেকে আত্মসাত করা টাকা দেশের বাইরে পাচার হয়েছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে দুদক কমিশনার মো. সাহাবউদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, হলমার্ক গ্রুপ বিদেশে টাকা পাচার করেছে কি-না কিংবা দেশে এই টাকা থাকলেও তা কোথায় বিনিয়োগ করা হয়েছে- এসব বিষয় খতিয়ে দেখছে দুদকের অনুসন্ধান টিম। তিনি বলেন, 'হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় এজাহারভুক্ত আসামিদের বাইরে প্রভাবশালী আর কেউ আছে কি-না, তাও খোঁজা হচ্ছে। তানভীর, তুষার ও আজিজকে একসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের সময় ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের কথা স্বীকার করলেও কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেননি হলমার্কের এমডি।' দুদক কমিশনার আরো বলেন, 'হলমার্ক গ্রুপের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় সহায়তা করতেই সোনালী ব্যাংকের এমডি (প্রদীপ কুমার দত্ত) দুদকে এসেছিলেন। ওনার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, হলমার্কের ঋণের বিপরীতে কী কী মর্টগেজ রাখা হয়েছে, কী পরিমাণ সম্পদ রাখা হয়েছে এবং এসব বিষয়ে বিষয়ে তাঁর কাছ থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।'
জালিয়াতির মাধ্যমে সোনালী ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া দুই হাজার ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে ২৩২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়ার কথা জানিয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডি প্রদীপ কুমার দত্ত সাংবাদিকদের বলেন, 'হলমার্কের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি সোনালী ব্যাংক খতিয়ে দেখছে। তবে মামলার ব্যাপারে কিছু জটিলতা রয়েছে। ঋণ জালিয়াতির ঘটনা খতিয়ে দেখতে দুজন আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এবং ১২টি সার্ভে টিম কাজ করছে। কাগজপত্র ঠিকঠাক করে মামলার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।' তিনি জানান, কোনটা কোন মামলা, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া আইনের আশ্রয় নিলে ব্যাংকের হেরে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এটা ব্যাংকের জন্য বিরাট ক্ষতিকর হবে।
অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনায় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে প্রদীপ কুমার দত্ত বলেন, 'আমি সোনালী ব্যাংকের এমডি হওয়ার আগেই এই জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত ছিলাম না। আমার নিয়োগের পর কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, তা দুদককে জানিয়েছি।' তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে তিনি দুদকে আসেননি। মামলার বিষয়ে কিছু তথ্য দিতে এসেছেন। তবে দুদক সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দুদকের অনুসন্ধান টিম তাঁকে বিভিন্ন বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।

No comments

Powered by Blogger.