এখনো অবহেলায় সূর্য সেন পল্লি by মীর আসলাম

রাউজানের নোয়াপাড়া পথেরহাট থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক মাস্টারদার স্মৃতিবিজড়িত সূর্য সেন পল্লি। এই পল্লিতে যাওয়ার সড়ক এবং বাড়ির চার পাশের পরিবেশই বলে দেয় পল্লিটি এখনো কত অবহেলিত, কত বঞ্চিত।


এ নিয়ে অনেক ক্ষোভ জমে আছে এলাকার মানুষের মনে। তবে এই পল্লির উন্নয়ন ও আশপাশের এলাকার শ্রীবৃদ্ধির জন্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার সুফল পেতে কিছুটা সময় লাগবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, পথেরহাট থেকে সূর্য সেন পল্লিতে যাওয়ার সড়কটির প্রায় অর্ধেকই স্যাঁতসেঁতে, নোংরা ও খানাখন্দের কারণে চলাচলের অনুপযোগী। মাস্টারদার বাস্তুভিটায় প্রতিষ্ঠিত মা ও শিশুকল্যাণকেন্দ্র এলাকাটি সংরক্ষিত থাকলেও চারপাশের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর। স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রতিষ্ঠিত এ কেন্দ্রে কাঙ্ক্ষিত সেবাও পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেন এলাকার লোকজন।
জানা যায়, দুই হাজার সালে কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন বন ও পরিবেশমন্ত্রী সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। কেন্দ্রের ফার্মাসিস্ট সৈয়দ আবুল ফজল জানান, এখানে কোনো চিকিৎসক নেই। একজন দারোয়ানকে নিয়ে তিনি কেন্দ্রটি চালাচ্ছেন। কয়েক মাস আগে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলেও তাঁকে আবার নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গশ্চি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কামরুল ইসলাম বলেন, সূর্য সেন পল্লি দেখতে, প্রগতিশীল বলে পরিচিত অনেকেই মাঝেমাঝে আসেন। কিন্তু এই খ্যাতিমান পুরুষের বাড়ির চারপাশের অবস্থা দেখে তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশের গ্রাম পাঁচখাইনের বাসিন্দা স ম জাফর উল্লাহ বলেন, মাস্টারদার জন্ম-মৃত্যু উপলক্ষে স্থানীয় কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন উল্লেখযোগ্য কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করে না। এটি দুঃখজনক।
তবে সূর্য সেন পল্লিসহ আশপাশের এলাকার শ্রীবৃদ্ধি ও গুণী ব্যক্তিদের স্মরণীয় রাখার জন্য সাম্প্রতিক সময়ে কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রাউজান কলেজের কাছে নোয়াপাড়া-সড়কের মুখে মাস্টারদার নামে পাকা তোরণ নির্মাণ এবং তাঁর নামে নোয়াপাড়া ও রাউজানে ভাস্কর্য ও বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা।
এলাকার সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী এ উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ জনেরা। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি ক্ষমতাসীন হলে চেষ্টা করে ইতিহাস থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নাম মুছে ফেলতে। বর্তমান সরকারের আমলে রাউজানের বিভিন্ন স্থানে এখানকার সূর্যসন্তানদের স্মৃতি রক্ষার জন্য স্থায়ীভাবে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে।
জানা যায়, জেলা পরিষদের অর্থায়নে প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে পশ্চিম গুজরায় মহাকবি নবীন সেনের স্মৃতিসৌধের কাছে নির্মিত হচ্ছে নবীন সেন কমপ্লেক্স। স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে উপজেলা সদরে চলছে স্বাধীনতাস্তম্ভের নির্মাণকাজ। এরই মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে গহিরায় গণপাঠাগার। স্বাধীনতাযুদ্ধ চলাকালে শহীদ ব্যক্তিদের স্মরণে ঊনসত্তরপাড়া ও জগৎমোল্লাপাড়ায় নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দর্শনীয় স্থানে নির্মিত হয়েছে নতুন অর্ধশতাধিক শহীদ মিনার।
এসব উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন মাস্টারদার অনুসারী সহযোদ্ধা বিপ্লবী বিনোদ বিহারী চৌধুরী। সম্প্রতি নির্মাণাধীন তোরণটি দেখতে রাউজান এসে সাংসদকে বুকে জড়িয়ে ধরে তিনি বলেন, ‘সমাজের অকৃতজ্ঞ মানুষের পাহাড়সম প্রাচীর ডিঙিয়ে এসেছ হে বীর, বহু দিন পর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে। এসো ওহে কৃতজ্ঞ, তোমায় জানাই লাল সালাম’।
সূর্য সেন পল্লির নোংরা পরিবেশ এবং মা ও শিশুকল্যাণকেন্দ্রে স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া প্রসঙ্গে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা কুল প্রদীপ চাকমা বলেন, ‘জনবল নিয়োগের ব্যাপারে এলাকার সাংসদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। এ ছাড়া সূর্য সেন পল্লিতে যাওয়ার সড়কটি উন্নয়নের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।’

No comments

Powered by Blogger.