কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় নিন্দা-প্রতিবাদ-প্রক্টরের আগে কর্মচারীর ঘুষি by নিয়ামুল কবীর সজল

শুধু প্রক্টর ড. এম এ সালাম নন, আরেকজন কর্মচারীও গত ৯ অক্টোবর আন্দোলনকারী ওই ছাত্রীকে সজোরে ঘুষি মারেন। কালের কণ্ঠের কাছে এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। সেই কর্মচারীর নাম মো. মাসাদুল হাসান বলে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।


মাসাদুল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখায় কর্মরত।
তবে মাসাদুল হাসান দাবি করেছেন, তিনি ঘটনার সময় তাঁর অফিসে ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা বলেও নিজের পরিচয় দেন।
গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীকে প্রক্টর সালামের ঘুষি মারার ছবি ছাপা হয়। একই সঙ্গে মার খাওয়া শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের খবরও প্রকাশিত হয়। প্রক্টরের হাতে ছাত্রী লাঞ্ছনার এই ছবি দেখে নিন্দা ও প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। তাদের বক্তব্য- 'বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কিভাবে একজন ছাত্রীকে ঘুষি মারতে পারেন? এঁরা কি শিক্ষক, নাকি অন্য কিছু! এঁদের কাছে আমাদের ছেলেমেয়েরা কী শিখবে!'
শুধু সমালোচনা নয়, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়মনসিংহ শহরে মানববন্ধনের ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন সংগঠন।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ওই দিন (৯ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান নেওয়ার চেষ্টা করেন। ওই সময় সেখানে নিরাপত্তারক্ষী ও পুলিশ উপস্থিত ছিল। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে আন্দোলনকারীরা প্রশাসনিক ভবনে আসেন। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন প্রক্টর ড. সালাম এবং আরো কয়েকজন শিক্ষক। এ ছাড়া কয়েকজন প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীও ছিলেন সেখানে। সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে। এরই মধ্যে একজন শিক্ষক ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে আনেন। এর পরই সেখানে চলে তাণ্ডব।
সেই সময়ের তোলা একটি ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, হইহল্লা ও মারপিটের সময় আন্দোলনকারী এক ছাত্রীকে পেছন থেকে সজোরে ঘুষি মারেন একজন কর্মচারী। ঘুষিটি মেরেই ওই কর্মচারী কেটে পড়েন। তখন ওই ছাত্রীর সামনে ছিলেন প্রক্টর। কর্মচারীর ঘুষির পরপরই সামনে থেকে ওই ছাত্রীকে আবার ঘুষি মারেন প্রক্টর। মেয়েটিকে যে বিনা কারণে প্রক্টর ঘুষ মারছেন, তা ওই ভিডিওচিত্রটি দেখলেই বোঝা যায়।
ওই ঘটনায় মঙ্গলবার প্রক্টর বলেছেন, তিনি ছাত্রীটিকে ঘুষি মারেননি; বরং মারামারি ঠেকাতে ভূমিকা রেখেছেন।
বিভিন্ন মহলের নিন্দা-প্রতিবাদ: জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মনিরা বেগম অনু কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমরা কি সভ্য আচরণ ভুলে গেছি! আমাদের শিক্ষকদের নৈতিকতার মান কোথায় গিয়ে ঠেকেছে। একজন ছাত্রীকে এভাবে প্রকাশ্যে ঘুষি মারা কোনোভাবেই মানা যায় না। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাই।'
জেলা নারী নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, একজন ছাত্রীকে একজন পুরুষ শিক্ষক কোনো যুক্তিতেই এভাবে প্রকাশ্যে লাঞ্ছনা করতে পারেন না। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। শিক্ষকদের সম্মানেরও হানি হয়েছে।
এদিকে পুরো বিষয়টি নিয়েই উদ্বিগ্ন হয়ে এ ব্যাপারে করণীয় নির্ধারণে গতকাল বিকেলে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) ময়মনসিংহ জেলা শাখা কার্যালয়ে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও নারী সংগঠন যৌথ মতবিনিময় সভা করে। সভায় বক্তারা বলেন, এমন ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ঘটনার প্রতিবাদে আন্দোলনের কর্মসূচিও হাতে নেওয়া হয়।
জেলা সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, প্রতিবাদ হয় না বলেই এসব শিক্ষক নিজেদের অনেক কিছু মনে করেন। কিন্তু ময়মনসিংহবাসী বিষয়টিকে সহজে ছেমড় দেবে না। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় শহরের প্রধান সড়কের ফিরোজ-জাহাঙ্গীর সড়কে মানববন্ধন করা হবে বলে তিনি জানান।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য শওকত মোমেন শাহজাহান এমপি বলেন, বহিষ্কারের খবর তিনি জানেন। পুরো ঘটনাটির খোঁজখবরই তিনি নিচ্ছেন। এর পরই আসলে বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা যাবে। তবে সিন্ডিকেট সব ঘটনাই খতিয়ে দেখবে বলে তিনি জানান।
উপাচার্য ড. মো. রফিকুল হক বলেন, যেসব বিষয় পত্রিকায় আসছে, তা সত্য নয়। এসব সংবাদ একপেশে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, একদিন সত্য প্রকাশ পাবে।
উপাচার্য বলেন, তিনি কোনো শিক্ষার্থীরই অমঙ্গল চান না। ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বহাল রাখার ব্যাপারে তিনি কতটুকু ভূমিকা রাখছেন, তা সবাই জানে।

No comments

Powered by Blogger.