শিক্ষার্থীকে শিক্ষকের ঘুষি-মর্যাদাহানিকর এবং পরিত্যাজ্য

শিক্ষার্থীকে শারীরিক কিংবা মানসিকভাবে লাঞ্ছিত করা নতুন শিক্ষানীতি অনুযায়ী সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। অবশ্য এগুলো স্কুল পর্যায়ে চলে। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এক ছাত্রীর গায়ে হাত তুলেছেন। তাও সেই শিক্ষার্থী কোনো অনৈতিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না কিংবা শৃঙ্খলা ভঙ্গের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন না।


শিক্ষার্থীরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্ধিত ফি আদায়ের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করছিলেন, যা তাঁদের অধিকার। সেই দাবি মানা-না মানার এখতিয়ার যেমন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আছে, তেমনি শিক্ষার্থীদেরও অধিকার আছে কোনো সিদ্ধান্তে তাঁদের দ্বিমত প্রকাশের। কিন্তু প্রক্টর যেভাবে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীর গায়ে হাত তুলেছেন, তাঁকে ঘুষি মেরেছেন, একে অশালীন না বলে উপায় নেই। সংবাদমাধ্যমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর গোটা শিক্ষকসমাজ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কমে যেতে পারে- এমন কাজ করার আগে প্রক্টর সেই চিন্তা করেছিলেন বলে মনে হয় না। তার পরও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে প্রক্টরের আচরণকে সমর্থন দিয়েছে, যাকে স্বাভাবিক ন্যায়বিচারের নীতির পরিপন্থী বলা ছাড়া কোনো উপায় নেই। দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা মেধায় ও মননে উঁচু স্তরের হবেন, শিক্ষকরাও নৈতিকতায় উঁচুমাপের হবেন- এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চিত্র আমাদের ধারণার ওপর আঘাত হেনেছে। সংগত কারণেই প্রশ্ন আসবে, একজন শিক্ষক হয়ে তিনি কিভাবে তাঁর শিক্ষার্থী, তাও আবার একজন মহিলার গায়ে হাত তুললেন?
প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষার্থীদের দাবি যদি অযৌক্তিক হয়ে থাকে কিংবা তাঁদের কর্মকাণ্ডে যদি সামগ্রিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি-শৃঙ্খলা ও শিক্ষার পরিবেশ বিঘি্নত হয়, তাহলে অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু বিনা বিচারে শাস্তি দেওয়াটা কতটা যৌক্তিক, তা ভেবে দেখা দরকার।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রতিবাদী কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে প্রশাসন ও সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কর্মীরা। স্পষ্টত বোঝা যায়, আন্দোলন থেকে শুরু করে বাধা প্রদান- সবই হয়েছে ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে। সেই আন্দোলন বেআইনি না হলেও সেখানে শিক্ষক ও প্রশাসন জড়িয়ে পড়েছে। তারা স্পষ্টত সরকারি দল সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। স্বাভাবিক কারণেই প্রশ্ন আসে, একজন শিক্ষক কোনোভাবে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে কিংবা বিপক্ষে গিয়ে এ ধরনের কাজ করতে পারেন কি না। ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে যদি এই মারমুখী সম্পর্ক থাকে, তাহলে শিক্ষার্থীরা কী শিক্ষা পাবেন? এ মুহূর্তে তাই ছাত্রদের আন্দোলনের যৌক্তিকতার চেয়ে শিক্ষকের আচরণের বৈধতা নিয়েই মানুষের মনে বড় প্রশ্ন দেখা দিচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি তদন্ত করতে হবে, ওই শিক্ষক ছাত্রীর গায়ে হাত তোলার মতো অশালীন কাজ করলেন কেন। এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে যাতে না ঘটে, তাও নিশ্চিত করতে হবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেই। শিক্ষক যাতে শিক্ষকের মর্যাদা রক্ষা করেন আর শিক্ষার্থী যাতে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষালাভ করতে পারেন, সেদিকটিও নিশ্চিত করতে হবে তাদেরই।
প্রক্টরের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকারের এই নির্দেশনা সময়োচিত। আমরা দ্রুত এর কার্যকারিতা দেখতে চাই।

No comments

Powered by Blogger.