দুর্নীতি-অনিয়মে বিপন্ন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়- উপাচার্যের গাড়িবিলাস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও তাঁর সহযোগীদের জ্ঞানের প্রতি তেমন আকর্ষণ না থাকলেও দামি গাড়ি ও নগদ অর্থের প্রতি প্রবল আকর্ষণ পরিলক্ষিত হচ্ছে। আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ১৫ থেকে ২৫ লাখ টাকা


দামের গাড়ি ব্যবহারের কথা থাকলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের নামে বরাদ্দ আছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা দামের দুটি গাড়ি। উপাচার্যের নামে কেনা একটি গাড়ি ব্যবহার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ, আর কোষাধ্যক্ষের গাড়িটি ব্যবহার করেন রেজিস্ট্রার। যদিও আইন অনুযায়ী তাঁর সার্বক্ষণিক গাড়ি পাওয়ার কথা নয়। তিন মহারথীর এই গাড়িবিলাসের পাশাপাশি ছাত্র ভর্তির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত অর্থের বিশাল অংশ হাতিয়ে নেওয়ারও সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।
গত মঙ্গলবার প্রথম আলোয় এ-সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে বক্তব্য দিয়েছে, তা সত্য আড়াল করার ব্যর্থ প্রয়াস মাত্র। ওই দিনই কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিবাদে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন, যাতে সরকার-সমর্থক ছাত্রসংগঠনটির এক নেতাও সংহতি প্রকাশ করেছেন।
যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় শ্রেণীকক্ষ, যানবাহন ও আবাসিক হল নেই; সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের গাড়ি কিনতে এক কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় গুরুতর অন্যায়। সিন্ডিকেট ও প্রশাসনের দোহাই দিয়ে ছাত্র ভর্তির নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থের সিংহভাগ হাতিয়ে নেওয়া জায়েজ করা যায় না। এ খাতে অর্জিত অর্থের ৩০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়ার কথা থাকলেও কেন তাঁরা মাত্র ২০ শতাংশ জমা দিলেন, তার ব্যাখ্যা নেই।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক, সেটাই সবার দাবি। যে উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ ও রেজিস্ট্রার দামি গাড়ি ও ভর্তি পরীক্ষার সামান্য অর্থের লোভ সংবরণ করতে পারেন না, তাঁদের নিজ নিজ পদে থাকার অধিকার নেই। সিন্ডিকেট ও প্রশাসনের নাম ভাঙিয়ে তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে থাকলে তা-ও ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.