কুরিয়ারে নিষিদ্ধ পণ্য-স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করা হোক

একটা সময় ছিল যখন চিঠিপত্র, পার্সেলসহ যে কোনো পণ্য দেশে কিংবা বিদেশে পাঠাতে ডাক বিভাগই ছিল একমাত্র মাধ্যম। যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চিঠিপত্র, বিভিন্ন ডকুমেন্ট এবং নানারকম পণ্যের পার্সেল পাঠাতে এখন কুরিয়ার সার্ভিসের ওপরই নির্ভরশীলতা বেশি।


সরকারি ডাক বিভাগ যুগোপযোগী হতে না পারায় তাদের স্থানটি দখল করে নিয়েছে বেসরকারি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত দেশি-বিদেশি কুরিয়ার সার্ভিস। দ্রুততম সময়ে পার্সেল বা চিঠিপত্র প্রাপকের কাছে পেঁৗছে দিয়ে গত দুই দশকে একটা আস্থার জায়গা তৈরি করে ফেলেছে কুরিয়ার সার্ভিস। কিন্তু সব ইতিবাচকতার আড়ালেই আশঙ্কা থেকে যায় নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের, যা থেকে মুক্ত নয় কুরিয়ার সার্ভিসও। ১৭ অক্টোবর বুধবার সমকালের শেষ পৃষ্ঠায় মুদ্রিত 'কুরিয়ারে নিষিদ্ধ পণ্য বহনে বাংলাদেশ নিরাপদ রুট' শিরোনামের খবরে এই জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যমটি যে এখন কতটা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে, তারই সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেল। দেশি-বিদেশি অনেক কুরিয়ার সার্ভিসই অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও বিস্ফোরকসহ নিষিদ্ধ পণ্য পরিবহন করে_ এমন অভিযোগ আগেও শোনা গেছে। দু'একটি চালান ধরাও পড়েছে। কিন্তু 'বাংলাদেশকে নিষিদ্ধ পণ্য পরিবহনের নিরাপদ রুট' করে তুলবে কুরিয়ার সার্ভিস? এমন ঘটনা দেশের জন্য যেমন ক্ষতিকর তেমনি গ্গ্নানির। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল এক ই-মেইল বার্তায় 'কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলাদেশকে চোরাচালানের রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে' বলে জানিয়েছে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা সংশ্লিষ্টদের। এ ব্যাপারে দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে ইন্টারপোল বিশেষভাবে বাংলাদেশে সক্রিয় পাকিস্তানের দুটি সিন্ডিকেটের ওপর গোয়েন্দা নজরদারির গুরুত্ব আরোপ করেছে। সমকালের শেষ পৃষ্ঠায় প্রকাশিত এই বিশেষ রিপোর্ট থেকে দেশের অভ্যন্তরে এবং বহির্বিশ্বে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে হেরোইন, বিস্ফোরক, গুলি-অস্ত্রসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ পণ্য পাঠানোর ঘটনাও সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কুরিয়ার সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের নেতাসহ সংশ্লিষ্টদের মন্তব্য, এ ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে অভিমতও পাওয়া গেছে প্রতিবেদনে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, কুরিয়ার সার্ভিসে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধ পণ্যের চালান কেমন করে নিরাপদে বের হয়ে যায়! অথচ ধরা পড়ে হিথরো বিমানবন্দরে, হংকং বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের হাতে। তার মানে কুরিয়ার সার্ভিসের সঙ্গে যুক্ত একটি চক্রও এর সঙ্গে জড়িত। যেসব প্রতিষ্ঠান বা কুরিয়ার সার্ভিস এসব পণ্য পরিবহনে সংশ্লিষ্ট তারা কিছুতেই দায়মুক্ত হতে পারে না। কেননা গোয়েন্দা রিপোর্টেও দেখা যাচ্ছে, কুরিয়ার সার্ভিসের কতিপয় সদস্যও এই পাচারকারীচক্রের সঙ্গে সক্রিয়। বিদেশে টি-শার্টের প্যাকেটে হেরোইন পাচারের মতো নিষিদ্ধ পণ্য পাঠানোর ঘটনায় দেশের ভাবমূর্তি যে কীভাবে নষ্ট হচ্ছে, তা সহজে অনুমেয়। এসব অবৈধ পণ্য প্রেরণে আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস যেমন ব্যবহৃত হচ্ছে, তেমনি দেশীয় কুরিয়ার সার্ভিসও দেশের অভ্যন্তরে অস্ত্র, মাদক, গুলি, বিস্ফোরকসহ নিষিদ্ধ পণ্য পাঠাচ্ছে। সুতরাং উভয় রুটেই কুরিয়ার পার্সেল প্যাকেট, খামসহ যাবতীয় প্যাকেটের নিবিড় স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। তা না হলে ভয়াবহ এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অসম্ভব। ১৮৯৮ সালের প্রাচীন পোস্টাল আইন দিয়ে এ যুগের ডাক কুরিয়ারে পণ্য পরিবহনও চলতে পারে না। কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা ২০১১ এখনও আদালতে ঝুলে আছে এর বিরুদ্ধে রিটের কারণে। আমরা মনে করি, অবিলম্বে রিটের মীমাংসা হওয়া দরকার এবং এ ধরনের বিপজ্জনক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সরকারের সংশ্লিষ্ট সবার কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। তা না হলে শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ ক্ষতিই হবে না, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করবে, যা কারও কাম্য হতে পারে না। সুতরাং, অবিলম্বে সংশোধিত আইনি ব্যবস্থা সক্রিয় করা উচিত। পাশাপাশি কুরিয়ার প্যাকেট স্ক্যানিং বাধ্যতামূলক করার পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
 

No comments

Powered by Blogger.