বিজিবির দোকানগুলো সমবায় বিভাগে

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ন্যায্যমূল্যের বিপণনকেন্দ্রগুলো পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগকে দিয়ে আবার চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে—এটি একটি ভালো খবর। কারণ, এই ন্যায্যমূল্যের দোকানগুলো যে নিম্ন আয়ের মানুষের উপকারে লাগে, তা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে লক্ষ করা গেছে। খোলাবাজারের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে দ্রব্যসামগ্রী পাওয়া যেত ওই সব দোকানে।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে সোমবার প্রথম আলোয় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে রাজধানীর আটটি বিপণনকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে ওই মন্ত্রণালয়ের অধীন সমবায় অধিদপ্তরকে। তারপর পর্যায়ক্রমে সারা দেশের ১০০টি বিপণনকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এগুলো নিয়মিতভাবে পরিচালিত হবে সমবায় অধিদপ্তরের দ্বারা। এই উদ্যোগের ইতিবাচক সম্ভাবনার দিকটি হলো এই যে, সমবায় অধিদপ্তর যদি দোকানগুলোর জন্য সরাসরি উৎপাদকদের কাছ থেকে দ্রব্যসামগ্রী কেনে, তাহলে উৎপাদকেরা তাদের পণ্যের ন্যায্যমূল্য পেতে পারে। এমনিতে কৃষিপণ্যের পাইকারি বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের সংঘবদ্ধ কারসাজির কারণে কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। আর মধ্যস্বত্বভোগী পাইকারি বিক্রেতারা কম দামে পণ্য কিনে অতিরিক্ত মুনাফার জন্য চড়া দামে বিক্রি করে। ফলে ক্রেতাসাধারণকে বেশি পয়সা গুনতে হয়। কৃষকদের তরফ থেকে কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য না পাওয়ার অভিযোগ, অন্য দিকে ভোক্তাসাধারণের দিক থেকে দ্রব্যসামগ্রীর উচ্চমূল্যের অভিযোগ—এ দুইয়ের মাঝখানে সংঘবদ্ধ মধ্যস্বত্বভোগীদের অনৈতিক মুনাফাখোরি কিছুটা হলেও হ্রাস পেতে পারে, যদি সমবায় অধিদপ্তর দক্ষতার সঙ্গে সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বিজিবির ন্যায্যমূল্যের দোকানগুলো পরিচালনা করতে পারে।
প্রশ্নটি এখানেই—দক্ষতাপূর্ণ সুব্যবস্থাপনা। বাংলাদেশে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সাফল্যের দৃষ্টান্ত অত্যন্ত বিরল। সমবায় অধিদপ্তর সরকারের একটি মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ কর্তৃপক্ষ। বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী; ওই বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা দোকানগুলো যেমন সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালিত হয়েছে, সমবায় অধিদপ্তর কি তেমনটি নিশ্চিত করতে সক্ষম হবে? সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, সমবায় সমিতির মাধ্যমে এই দোকানগুলো পরিচালিত হলে উৎপাদক ও ভোক্তা—উভয় পর্যায়েই ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত হবে। এটি একটি জনমুখী প্রত্যাশা; এই প্রত্যাশা কীভাবে পূরণ করা যায়, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জিত হলে অন্ততপক্ষে কৃষিপণ্যের বাজার-ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ও ন্যায্যতা ফিরিয়ে আনার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপিত হতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.