হুমকির মুখে পৃথিবী by ইব্রাহিম নোমান

পরমাণু বোমা বহনকারী ৰেপণাস্ত্রের আঘাত থেকে রৰা পাওয়ার উপায় নিয়ে ভাবা হচ্ছে। বানানো হয়েছে ৰেপণাস্ত্র বিধ্বংসী ৰেপণাস্ত্র। যার ফলে শত্রম্নদেশের ৰেপণাস্ত্র নির্দিষ্ট লৰে আঘাত হানার আগে আকাশেই তা ধ্বংস করা সম্ভব।
ৰেপণাস্ত্ররোধী এই অত্যাধুনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার নেতৃত্বে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে আমাদের পৃথিবী গ্রহাণুর সম্ভাব্য আঘাত থেকে ঝুঁকিমুক্ত নয়। সম্প্রতি মার্কিন বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, পৃথিবীতে গ্রহাণুর আক্রমণের বিষয়টি যথাযথ গুরম্নত্ব পাচ্ছে না। যুক্তরাষ্ট্রকে কেবল পরমাণু বোমাবাহী ৰেপণাস্ত্র নিয়ে ভাবলে চলবে না। গ্রহাণুর আঘাতে যে পৃথিবীতে ধ্বংসলীলা সৃষ্টি হতে পারে তা রোধে পদৰেপ নিতে হবে। এক নতুন রিপোর্টে একথা বলা হয়েছে।
ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সেস প্রকাশিত ১৩৪ পৃষ্ঠার রিপোর্টে বলা হয়েছে, পৃথিবীর নিকটবতর্ী সকল বিপজ্জনক গ্রহাণু চিহ্নিত করতে যুক্তরাষ্ট্র যে ৪০ লাখ ডলার ব্যয় করে তা ২০০৫ সালে কংগ্রেস কর্তৃক অনুমোদিত নয়। চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নাসার আরও তহবিল প্রয়োজন এবং ১০ লাখ ডলারেরও কম পরিমাণ অর্থ পৃথিবীকে বিপন্ন করতে পারে এমন গ্রহাণু মোকাবেলার উপায় উদ্ভাবনে বর্তমানে পৃথক করে রাখা হয়েছে। এর পরিবর্তে 'ডিফেন্ডিং দ্য আর্থ : নিয়ার আর্থ অবজেক্ট সার্ভেজ এ্যান্ড হ্যাজার্ড মিটিগেশন স্ট্র্যাটেজিস' শিরোনামে আগের খসড়া প্রতিবেদনটি ২০০৯ সালের আগস্টে প্রকাশিত হয়েছে। বিশেষজ্ঞ বিজ্ঞানীদের একটি কমিটি লেখা চূড়ানত্ম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীর নিকটবতর্ী শতকরা ৯০ ভাগ গ্রহাণু চিহ্নিত করার মতো উপায় উপকরণ নাসার নেই। এসব গ্রহাণু কংগ্রেসের নির্ধারিত বিপজ্জনক আকার অনুযায়ী ৪৬০ ফুট (১৪০ মিটার) প্রশসত্ম বা তার চাইতেও বড়। রিপোর্টে বলা হয়, অদূর ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রহাণুর হুমকি থেকে পৃথিবীকে রৰার বিষয়ে আরও পদ্ধতি নিয়ে ভাবতে হবে। এ ৰেত্রে পরমাণু অস্ত্র হওয়া উচিত সর্বশেষ অবলম্বন। কিন্তু তা কাজে লাগবে যদি পৃথিবী কয়েক বছর আগে গ্রহাণুর আঘাত সম্পর্কে আগাম নোটিস পায়। একইভাবে একটি গ্রহাণুকে শক্তি প্রয়োগ করে ধাক্কা দিয়ে পৃথিবীর কৰপথ থেকে সরিয়ে দিতে বা ধ্বংস করতে হলে প্রয়োজনীয় মহাশূন্য যান তৈরি ও উৎৰেপণের জন্য কয়েক দশকের আগাম নোটিস প্রয়োজন। নাসার গ্রাহাণু ও পৃথিবীর নিকটবতর্ী বস্তু সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই মহাকাশ গবেষণা সংস্থা পৃথিবীর নিকটবতর্ী গবেষণা প্রায় ৮৫ ভাগ গ্রহাণুর সন্ধান পেয়েছে। এদের মধ্যে কোন কোনটি আধা মাইল (১ কি. মি.) পর্যনত্ম প্রশসত্ম। কিন্তু পৃথিবীর নিকটবতর্ী এ পর্যনত্ম ৪৬০ ফুট চওড়া শতকরা ১৫ ভাগ গ্রহাণু আবিষ্কৃত হয়েছে। আর পৃথিবীর নিকটবতর্ী ১৬৪ ফুট (৫০ গজ) প্রশসত্ম বিশিষ্ট গ্রহাণুর মধ্যে শতকরা মাত্র ৫ ভাগের সন্ধান পাওয়া গেছে। নাসার নিয়ার-আর্থ অবজেক্টস প্রোগ্রামের ম্যানেজার লিন্ডসে জনসন বলেছেন, পৃথিবীর জন্য হুমকি সৃষ্টি করতে পারে এমন নিকটবতর্ী সকল গ্রহাণু খুঁজে বের করার লৰ্যমাত্রা পূরণ করতে হলে আগামী ১৫ বছরে নাসার এক শ' কোটি ডলারের অতিরিক্ত তহবিল প্রয়োজন।
কিন্তু বর্তমানে পৃথিবীর নিকটবতর্ী বস্তু সম্পর্কে গবেষণার জন্য আলাদা কোন তহবিল রাখা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিক উল্কাপাতের ঘটনা ছোট ছোট গ্রহাণুর সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কেও আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। তাই নাসাকে এখন ৩০ ও ৫০ মিটারের মাঝামাঝি আকারের বস্তু সম্পর্কেও খোঁজ খবর নিতে হবে। সম্প্রতি আধা পাউন্ড ওজনের একটি ছোট উল্কা ভার্জিনিয়ায় এক ডাক্তারের অফিসের ছাদ ভেঙ্গে দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে দোতলায় পড়ে কয়েক টুকরা হয়ে যায়। দোতলায় কংক্রিটের ফোরে আঘাত হানার সময় উল্কাটির গতি ঠিক ঘণ্টায় ২শ' মাইল। এতে কেউ আহত না হলেও ঐ সময় ডাক্তারের অফিসে লোকজন ছিল। প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্পের আওতায় হিসাব করে দেখা গেছে যে, মহাশূন্য থেকে পড়া শিলাখ-ের কারণে বছরে এক শ' জনের মতো লোকের মৃতু্য ঘটতে পারে। যদিও ভার্জিনিয়ার মতো বিরল ঘটনা আমলে আনলে এ হিসাবে অনেক হেরফের হতে পারে। তবে ভার্জিনিয়ার ঘটনায় আধা পাউন্ড ওজনের উলকার স্থলে গ্রহাণু হলে কত বড় ধ্বংসলীলা সাধিত হতো তা কেবল অনুমানই করা যায়। গ্রহাণু সংক্রানত্ম প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পৃথিবীতে গ্রহাণুর আঘাতের বিষয়টি একাধারে ভীষণ বিরল এবং ভীষণ গুরম্নত্বপূর্ণ ঘটনা। বিজ্ঞানীদের বিশেষজ্ঞ কমিটি এ বিষয়ে বীমার কথাও বিবেচনা করছেন।
সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে গ্রহাণুর হুমকি থেকে পৃথিবীকে রক্সা করতে যুক্তরাষ্ট্র কি এগিয়ে আসবে? প্রয়োজনে পরমানু অস্ত্র নিৰেপ করে হলেও পৃথিবীর দিকে ধাবমান গ্রহানুকে সরিয়ে দিতে হবে। তবে এৰেত্রে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারকে বিজ্ঞানীরা সর্বশেষ উপায় হিসেবে বিচেনা করছেন। দেখা যাক, মার্কিন বিজ্ঞানীরা পৃথিবীকে গ্রহাণুর হুমকিমুক্ত করতে কোন পথ বেছে নেন।

No comments

Powered by Blogger.