স্বপ্ন, শঙ্কা আর আশার মাঝে মাঠে গড়াচ্ছে বিপিএল by মিথুন আশরাফ

বিপিএল নিয়ে সাবেক এক ক্রিকেটারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তার সঙ্গে আলাপের সময়েই বিপিএল শুরু হওয়ার আগে এ তিনটি দিক বের হলো। একটি স্বপ্ন, বিপিএল আগের চেয়েও অনেক উত্তেজনা ছড়াবে।
দ্বিতীয়টি শঙ্কা, বিপিএলে পাকিস্তান ক্রিকেটাররা আদৌ খেলবে কিনা। তৃতীয়ত আশা, শেষপর্যন্ত যেন পাকিস্তান ক্রিকেটাররা খেলে এবং বিপিএলে যেন আর কোন অঘটন না ঘটে। স্বপ্ন, শঙ্কা আর আশা এই তিনটি দিক নিয়েই শুক্রবার শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগের (বিপিএল) দ্বিতীয় আসর। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে আগেরদিন হবে টুর্নামেন্টের জমকালো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠান দিয়েই মূলত বিপিএলের দ্বিতীয় আসরের যাত্রা শুরু হয়ে যাবে। এবারের আসরে আরেকটি দল যুক্ত হচ্ছে, রংপুর রাইডার্স। সঙ্গে আগের ছয়টি দল থাকছেই ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স, বরিশাল বার্নার্স, দুরন্ত রাজশাহী, খুলনা রয়েল বেঙ্গলস, চিটাগাং কিংস ও সিলেট রয়্যালস। বিপিএলের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। আর রানার্সআপ হয় বরিশাল বার্নার্স। এবার প্রতিটি দলই হয়েছে শক্তিশালী। আর প্রতিটি দলই ফাইনালে খেলতে চায়। কিন্তু ১৯ ফেব্রুয়ারি শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে খেলার স্বপ্ন সফল হবে যে কোন দুটি দলেরই। এই স্বপ্ন সফল করার জন্য মাঠে নামার আগেই অবশ্য হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়ে গেছে। আর সেই অবস্থার ভিত্তিতেই সাবেক ক্রিকেটারের কণ্ঠে স্বপ্ন, শঙ্কা আর আশার তিনটি দিক বের হয়েছে।
সব ঠিক ছিল। তবে পাকিস্তান ইস্যুটি অনেক আগে থেকেই বিপিএলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। কিন্তু এ বিষয়টি নিয়ে এত গভীরে পিসিবির অবস্থান দাঁড়িয়ে যাবে তা বোঝা যায়নি। এখন পর্যন্ত যে অবস্থা তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে পাকিস্তান সফরে বাংলাদেশ না গেলে, লিখিত নিশ্চয়তা পিসিবিকে না দিলে এবং পাকিস্তান সুপার লীগে বাংলাদেশ থেকে ক্রিকেটার খেলার অনুমতি না দিলে বিপিএলে পাকিস্তান ক্রিকেটারদেরও খেলতে দেবে না পিসিবি। আর যদি পাকিস্তান ক্রিকেটাররা না খেলে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই বিপিএল জৌলুস হারাবে। তবে সবারই আশা, শেষপর্যন্ত পাকিস্তান ক্রিকেটাররা খেলবে। এই যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে তা দূর হয়ে যাবে এবং বিপিএলও আগের আসরের চেয়েও বেশি জৌলুস ছড়াবে। তবে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি চিন্তার সেটি যেন দূর হয়। সেই আশা করা হচ্ছে। পাকিস্তান ক্রিকেটাররা না এলেও শেষপর্যন্ত বিপিএল হবে। অবিক্রীত ক্রিকেটারদের নিয়েই হয়ত হবে। কিন্তু আশা যেন পারিশ্রমিক নাটক, ফিক্সিং নাটক এবং পয়েন্ট টেবিল নিয়ে ঝামেলা এবার আর না হয়। বিপিএলের গায়ে কালিমা না যুক্ত হয়। এরই মধ্যে জানা গেছে আগের আসরের পাওনা এবং এবারের টুর্নামেন্ট শুরু হওয়ার ২৫ শতাংশ অর্থ না দেয়া হওয়াতে ক্রিকেটাররাও ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছে অনাপত্তিপত্র জমা দিচ্ছে না। বিষয়টি এ রকম দাঁড়িয়ে গেছে যে আগে টাকা, পরে অনাপত্তিপত্র। বুধবারই এই সমস্যা সমাধান হওয়ার কথা রয়েছে। সমাধান হলেই দেশীয় ক্রিকেটারদের নিয়ে সমস্যা দূর হয়ে যাবে। তবে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের নিয়ে আশঙ্কা এখনও দূর হয়নি। পারিশ্রমিক নিয়ে অনেক নাটক হয়েছে, ঝামেলা হয়েছে প্রথম আসরে। এবার বিসিবি দায়িত্ব নিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এবার আর কোন ঝামেলা হবে না। ফিক্সিং নিয়ে এবার বিসিবিও তৎপর। আশা করা হচ্ছে প্রথম আসরের ফিক্সিং ইস্যু নিয়ে একজনের শাস্তি হওয়ায় এবার আর দেশী কেউ এর মধ্যে জড়িত থাকবে না। আর বিদেশীদের মধ্যে ফিক্সিং করার ভাবনা থাকলে সেটি বিসিবি ও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো রুখার চেষ্টা করে যাবে। আর পয়েন্ট তালিকা নিয়ে যে সমস্যা হয়েছে সেটি এবার আর হবে না বলেই আশা প্রকাশ করা হয়েছে বিসিবি থেকেই। এবার টিকেট বিক্রি নিয়েও মহা সমস্যা শুরু হয়ে গিয়েছিল। শেষপর্যন্ত ইউসিবি ব্যাংক টিকেট বিক্রি করবে বলে জানা গেছে। একটিভ সার্ভিস ২০ কোটি টাকায় টিকেট কিনে যেন মহা ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল। তার সমাধানও হয়েছে।
অনেক সমস্যা চলছে। তবে এর মধ্যেই বিপিএলে অংশ নিতে যাওয়া দলগুলো ঠিকই অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে। সব দলই মাঠে নেমে পড়েছে। তবে কোন দলই এখন পর্যন্ত পাকিস্তান ক্রিকেটারদের নিয়ে মাঠে অনুশীলনে নামতে পারেনি। দেশী ক্রিকেটারদের সঙ্গে দু’একটি দল বিদেশী ক্রিকেটারদের নিয়েও অনুশীলন করছে। তবে সবার মধ্যেই যেন একটা আতঙ্কও কাজ করছে। হাতে আছে আর মাত্র ২দিন। এর মধ্যে পাকিস্তান ক্রিকেটারদের নিয়ে ইস্যুটির নিষ্পত্তি না হলে কী হবে? বিপিএল সঠিক সময়ে হলেও দলগুলো কীভাবে নিজেদের গুছিয়ে নেবে। এই রকম আশঙ্কা কাজ করছে।
এই দিকটি দিয়ে সবচেয়ে বেশি সমস্যাও পড়েছে খুলনা রয়্যাল বেঙ্গলস দলটি। এই দলে আছে ৭ পাকিস্তান ক্রিকেটার। ৯ দেশী ও ৯ বিদেশী ক্রিকেটার দলে ভিড়িয়েছে। এরমধ্যে ৭ জনই যদি না থাকে তাহলে নতুন ক্রিকেটার নিতেও হিমশিম খাবে দলটি। হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গেলে নাকি আবার সময়ই চেয়ে বসে দলটি। তাহলে বিপিএলে আবার শুরুতেই ঝামেলা পাকিয়ে যাবে।
গত আসরের চ্যাম্পিয়ন দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। এবারও দলটির অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই। এই দলে সবচেয়ে দামী ক্রিকেটার শাকিব আল হাসান আছেন। কিন্তু মাশরাফির ওপরই ভরসা দলটির। সিলেট রয়্যালস যেহেতু মুশফিকুর রহীমকে কিনে নিয়েছে, স্বাভাবিকভাবেই মুশফিক অধিনায়ক থাকছেন। দুরন্ত রাজশাহীর নেতৃত্ব পাকিস্তান ক্রিকেটার আব্দুর রাজ্জাকের কাঁধে দেয়ার কথা রয়েছে। যদি রাজ্জাক না আসেন সে ক্ষেত্রে তামিম ইকবালের কাঁধে সেই দায়িত্ব পড়তে পারে। চিটাগাং কিংসও এবারও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকেই অধিনায়ক করেছে। খুলনা রয়েল বেঙ্গলস শাহরিয়ার নাফিসকে অধিনায়ক করার কথা। বরিশাল বার্নার্স আজহার মেহমুদকে অধিনায়ক করেছে। রংপুর রাইডার্স আবদুর রাজ্জাকে ভরসা করছে। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স-খুলনা রয়েল বেঙ্গলস দিয়ে শুরু হবে বিপিএলের দ্বিতীয় আসর। এ ম্যাচটি শুরু হওয়ার আগেরদিন পাকিস্তানী গায়ক আতিফ আসলাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠান মাতাবেন। পারফর্ম করবেন শ্রীলঙ্কান নায়িকা জ্যাকলিন ফার্নান্দেজ, গান গাইবেন দেশীদের মধ্যে রুনা লায়লা, জেমস, হাবিব ও ওয়াহিদ। থাকবেন দেশের সেরা নায়ক-নায়িকারাও। মনোমুগ্ধকর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। কিন্তু টুর্নামেন্ট কতটা জৌলুস ছড়াবে সে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
স্বপ্ন, যেন টুর্নামেন্ট আগের আসরের চেয়েও বেশি জাঁকজমকপূর্ণ হয়। কিন্তু সেই স্বপ্ন সফল হওয়ার সম্ভাবনা এখনও দেখা যাচ্ছে না। শঙ্কা, পাকিস্তান ক্রিকেটাররা কি আদৌ খেলবে? এখন পর্যন্ত বিপিএল গবর্নিং কাউন্সিল থেকে নিশ্চয়তা দেয়া হলেও দৃষ্টি কাউকেই দেশের মাটিতে খুঁজে পাচ্ছে না। যেখানে আর দুইদিন বাকি মাত্র। আশা, যেন আর কোন অঘটন না ঘটে। বিপিএল যেন আবারও কলঙ্কিত না হয়। পারিশ্রমিক নিয়ে, ফিক্সিং নিয়ে এবং পয়েন্ট নিয়ে যেন আর কোন কালি বিপিএলের গায়ে না লাগে। এখন দেখা যাক স্বপ্ন সফল হয় কিনা। শঙ্কা দূর হয় কি না এবং আশা পূরণ হয় কিনা। বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। আর শুক্রবার টুর্নামেন্ট শুরু। এ তিনটি বিষয় যুক্ত থেকেই শুরু হচ্ছে বিপিএল।

No comments

Powered by Blogger.