মুঘল আমলের অনন্য স্থাপত্য, শায়েস্তা খান পরী বিবির স্মৃতি- লালবাগের কেল্লা by মোরসালিন মিজান

নামটি মূলত কেল্লা আওরঙ্গাবাদ। তবে লালবাগের কেল্লা হিসেবে বেশি পরিচিত। এটি প্রাচীন দুর্গ। পুরনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত স্থাপনাটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অপরিসীম। মোঘল আমলে এটি নির্মাণ করা হয়। কেল্লার চত্বরে রয়েছে দরবার হল ও হাম্মাম খানা, পরী বিবির সমাধি এবং শাহী মসজিদ। এ সবই পুরনো দিনের ঘটনাবহুল ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে।


সম্রাট শাহজাহান, এবং তাঁর পুত্রসম্রাট আওরঙ্গজেবের কথা প্রায় সকলের জানা। তবে লালবাগ দুর্গ নির্মাণের সঙ্গে যে নামটি বিশেষভাবে যুক্ত সেটিÑ শাহজাদা আজম শাহ। তিনি সম্রাট আওরঙ্গজেবের পুত্র। পিতার নামে ১৬৭৮ খ্রিস্টাব্দে এ দুর্গ নির্মার্ণের কাজ শুরু করেন তিনি। ঢাকার সুবেদারের বাসভবন হিসেবে এটি ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন। কিন্তু একটি মসজিদ ও দরবার হল নির্মাণের পর মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য সম্রাট তাঁকে দিল্লী ডেকে পাঠান। এ সময় দুর্গ নির্মাণ কাজ থেমে যায়। এরপর নবাব শায়েস্তা খাঁ ১৬৮০ সালে সুবেদার হয়ে ঢাকায় এসে পুনরায় দুর্গের নির্মাণকাজ শুরু করেন। তবে এবারও নির্বিঘেœ এগোতে পারে না। শায়েস্তা খানের স্নেহের কন্যা পরী বিবির অকাল মৃত্যু হয় এখানে। পরী বিবিকে দরবার হল এবং মসজিদের ঠিক মাঝখানে সমাহিত করা হয়। পরী বিবির সঙ্গে শাহজাদা আজমের বিয়েও ঠিক হয়েছিল। কিন্তু সেটি আর হয়নি।
পরী বিবির অকাল মৃত্যুর কারণে অনেকে এ দুর্গকে অপয়া জ্ঞান করতে শুরু করেন। অভিন্ন বিশ্বাস থেকে শায়েস্তা খান ১৬৮৪ খ্রিস্টাব্দে দুর্গের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেন। শায়েস্তা খাঁ দরবার হলে বসে প্রশাসনিক কাজ পরিচালনা করতেন। ১৬৮৮ সালে শায়েস্তা খাঁ অবসর নিয়ে আগ্রা চলে যান। দুর্গের মালিকানা বুঝে পায় তাঁর উত্তরাধিকারীরা। তবে শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছাড়ার পর নানা কারণে লালবাগ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে বলে জানা যায়। ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। মূলত এ সময় দুর্গটি লালবাগ দুর্গ নামে পরিচিতি লাভ করে।
একটি ভবন সুবেদার শায়েস্তা খানের প্রিয় কন্যা পরী বিবির সমাধি নামে পরিচিত। বাংলাদেশে এই একটি মাত্র ইমারতে মার্বেল পাথর, কষ্টি পাথর ও বিভিন্ন রংয়ের ফুল-পাতা সুশোভিত চাকচিক্যময় টালির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ নয়টি কক্ষ অলঙ্কৃত করা হয়েছে। কক্ষগুলোর ছাদ কষ্টি পাথরে তৈরি। মূল সমাধি সৌধের কেন্দ্রীয় কক্ষের ওপরের কৃত্রিম গম্বুজটি তামার পাত দিয়ে আচ্ছাদিত। ২০.২ মিটার বর্গাকৃতির এই সমাধিটি ১৬৮৮ খ্রিস্টাব্দের পূর্বে নির্মিত। তবে বিশেষজ্ঞদের অভিমতÑ এখানে পরী বিবির মরদেহ নেই।
জানা যায়, ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধীনে আনা হয়। নির্মাণের ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে লালবাগ দুর্গের সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর দর্শনার্থীদের জন্য তা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সেই তখন থেকে আজ অবদি প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ লালবাগের কেল্লা দেখতে আসছেন। ঢাকায় অসংখ্য ইমারত থাকলেও ইতিহাসের অনন্য স্মারক হয়ে আছে লালবাগের কেল্লা।

No comments

Powered by Blogger.