পাঠকের প্রশ্ন, আইনি পরামর্শ

যেকোনো আইনি সমস্যা ও প্রশ্ন থাকলে লিখুন। বিজ্ঞ আইনজীবীরা পরামর্শ দেবেন। ঠিকানা: আইন অধিকার, প্রথম আলো, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫। ই-মেইল ain@prothom-alo.info


বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্যই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন প্রযোজ্য হবে
অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন মোতাবেক সরকার কর্তৃক প্রকাশিত অর্পিত সম্পত্তির ‘ক’ তপসিলভুক্ত তালিকায় নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব, কৃপেশ চন্দ্র দেব, পিং-মৃত সুবোধ চন্দ্র দেব সাং-নিজ এই নামে ‘ক’ তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। ক. নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব ও কৃপেশ চন্দ্র দেব: নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব ও কৃপেশ চন্দ্র দেব, মৃত সুবোধ চন্দ্র দেবের ভারতপ্রবাসী দুই ছেলে। তাঁরা উভয়েই ১৯৬৫ সালের আগে পূর্ব পাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব ভারতে যাওয়ার পর সেখানে মৃত্যুবরণ করেন, কৃপেশ চন্দ্র দেব এখনো ভারতে জীবিত আছেন।
খ. মৃত সুবোধ চন্দ্র দেব: মৃত সুবোধ চন্দ্র দেব আমার পিতার আপন মামা ছিলেন। তিনি (সুবোধ চন্দ্র দেব) ১৯৫৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন, যার প্রমাণ আমার কাছে আছে। আমার পিতার নাম মৃত রাজেন্দ্র চন্দ্র দেব (১৯৯৪ সালে বাংলাদেশে মৃত্যুবরণ করেন)। তিনি মৃত সুবোধ চন্দ্র দেবের আপন বোনের ছেলে অর্থাৎ ভাগিনা। সেই মতে মৃত নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব ও কৃপেশ চন্দ্র দেব আমার পিতা মৃত রাজেন্দ্র চন্দ্র দেবের আপন মামাতো ভাই।
বর্তমান সম্পত্তির বিবরণ: ১৯৬৫ সালের পর থেকে সম্পত্তিটি একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী লোকের ভোগদখলে আছে। এবং তিনি প্রচার করছেন যে পাকিস্তান আমালে জনৈক সরকারি চাকরিজীবী এই সম্পত্তি প্রথমে তৎকালীন সরকারের কাছ থেকে নিলামে (অপ্রকাশ্য নিলামে) পাওয়ার পর এই লোকের কাছ থেকে দলিলের মাধ্যমে কিনেছেন। আমার প্রশ্ন হচ্ছে-

১. ‘ক’ তালিকাভুক্ত মৃত নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব ও কৃপেশ চন্দ্র দেবের (জীবিত) সম্পত্তি বর্তমান প্রত্যর্পণ সম্পত্তির সংশোধনীমতে, মৃত রাজেন্দ্র চন্দ্র দেব (অব্যাহতভাবে বাংলাদেশে বসবাসকারী) তাঁদের (মৃত নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব ও কৃপেশ চন্দ্র দেব) ‘উত্তরাধিকারী’ বা ‘উত্তরাধিকারীর স্বার্থাধিকারী’ হতে পারেন কি না?
উত্তর: মৃত সুবোধ চন্দ্র দেব তাঁর ত্যাজ্য বিত্তে বা সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সূত্রে দুই সন্তান নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব ও কৃপেশ চন্দ্র দেব মালিকসূত্রে উত্তরাধিকারী হন। তাঁদের অবর্তমানে ওই সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার সূত্রে সুবোধ চন্দ্র দেবের একমাত্র ভাগনে রাজেন্দ্র চন্দ্র দেব মালিক হবেন। পরবর্তী সময়ে রাজেন্দ্র চন্দ্র দেব মারা গেলে তাঁর একমাত্র পুত্রের ওপর মালিকানা বর্তায়। ‘ক’ তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি ভারতবাসী নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব ও কৃপেশ চন্দ্র দেবের সব ত্যাজ্য বিত্তে বাংলাদেশে বসবাসকারী মৃত রাজেন্দ্র চন্দ্র দেবের পুত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে দাবি করতে পারবেন।

২. যদি আমার পিতা তাঁদের ‘উত্তরাধিকারী’ বা ‘উত্তরাধিকারীর স্বার্থাধিকারী’ হতে পারেন, তবে আমার পিতার একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে আমি এই সম্পত্তির দাবিদার হতে পারি কি না?
উত্তর: আপনার পিতা জীবিত থাকলে যে সম্পত্তি দাবি করতে পারতেন, বর্তমান তালিকাভুক্ত সম্পত্তি আপনি উত্তরাধিকার সূত্রে দাবি করতে পারেন।

৩. যেহেতু প্রত্যর্পণ ‘ক’ তে মৃত নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব ও জীবিত কৃপেশ চন্দ্র দেবের সম্পত্তি তাঁরা এই দেশ ত্যাগ করেন বিধায় তালিকায় এসেছে এবং ১৯৬৫ সালের আগে দেশ ত্যাগ করেন সেই সূত্রে তাঁরা যে উভয়ই এই দেশ ত্যাগ করেছেন অথবা জীবিত বা মৃত, এরূপ কোনো নিদর্শন ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করতে হবে কি না?
উত্তর: অর্পিত সম্পত্তির হিসাবে গেজেট প্রকাশিত হলে ওই সম্পত্তি কোনো ভারতীয় নাগরিক মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। শুধু বাংলাদেশে বসবাসকারী ভারতীয় নাগরিকদের ‘উত্তরাধিকারী’ বা ‘উত্তরাধিকারীর স্বার্থাধিকারী’ ও সহ-অংশীদারেরা ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে পারবেন।

৪. যেহেতু মৃত নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেব ও জীবিত কৃপেশ চন্দ্র দেব এই দেশ ১৯৬৫ সালের আগে ত্যাগ করেছেন (অব্যাহতভাবে বাংলাদেশের নাগরিক নন) সেহেতু তাঁদের ‘উত্তরাধিকারী’ বা ‘উত্তরাধিকারীর স্বার্থাধিকারী’ হিসেবে আমার পিতা হওয়াতে কোনো আইনগত বাধা আছে কি না? কারণ, সরকার তো তাঁদের নামীয় সম্পত্তি প্রত্যর্পণ তালিকায় প্রকাশ করেছে। এর পরও মৃত নৃপেন্দ্র চন্দ্র দেবের উত্তরাধিকারী ও কৃপেশ চন্দ্র দেব উভয় পক্ষদ্বয়, আমার পিতার সূত্রে বর্তমানে আমিই তাঁদের এই সম্পত্তির একমাত্র উত্তরাধিকারী এরূপ স্বীকৃতিপত্র উভয় পক্ষই দিতে সম্মত আছে। তবে ভারত থেকে তাঁদের পাঠানো ডকুমেন্ট রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশে অর্থাৎ এই ট্রাইব্যুনালে গৃহীত হবে কি না?
উত্তর: ভারতীয় নাগরিকদের সম্পত্তি অর্পিত সম্পত্তির তালিকাভুক্ত হয়েছে। সুতরাং তাঁদের পুত্র, সন্তান বা নাতি পুতি তাঁরাও যদি ভারতীয় নাগরিক হন তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তির উত্তরাধিকার তাঁরা দাবি করতে পারবেন না। শুধু বাংলাদেশি নাগরিকেরা তাঁরা যদি দূরবর্তী উত্তরাধিকারীও হন, শুধু তাঁদের জন্যই অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন প্রযোজ্য হবে।

৫. বর্তমানে ওই সম্পত্তি ভোগদখলকারী ব্যক্তি আমার জানামতে বন্দোবস্ত এনেছিলেন বা সেই বন্দোবস্ত এখনো হয়তো চলমান আছে (আমি নিশ্চিত নই)। সেই সুযোগ নিয়ে দখলকারী ব্যক্তি এই সম্পত্তির ওপর ট্রাইব্যুনালে দাবি পেশসহ জাল দলিল, বন্দোবস্তের কাগজ, স্মরণলিপি দাখিল করলে তা এই ট্রাইব্যুনালে কতটুকু গৃহীত হবে?
উত্তর: অর্পিত সম্পত্তি বাংলাদেশের মালিক বা বংলাদেশে উত্তরাধিকার বা বাংলাদেশে স্বত্বাধিকারী বা বাংলাদেশি উত্তরাধিকার সূত্রে সহ-অংশীদার ছাড়া অন্য কোনো তৃতীয় পক্ষ তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি ইজারাভুক্ত করলেও নতুন আইনে সম্পত্তি ফেরত পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে কোনো তৃতীয় পক্ষ যদি আদালত বা অন্য কোনোভাবে ওই সম্পত্তিতে মালিকানা দাবিদার হয় তবে সেই বিষয়টি ট্রাইব্যুনাল বিবেচনা করতে পারবেন।

৬. বর্তমানে দখলদাররা অত্যন্ত প্রভাবশালী, তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমি ও আমার পরিবারের সদস্যদের বর্তমানে বা ভবিষ্যতে নিশ্চিহ্ন করতে পারে। এমতাবস্থায় আমাদের নিরাপত্তার জন্য করণীয় কী?
উত্তর: ট্রাইব্যুনাল থেকে যদি তালিকাভুক্ত সম্পত্তি আবেদনকারীর অনুকূলে রায় দেন এবং তিনি যদি মূল মালিকের উত্তরাধিকারী বা উত্তরাধিকারীর স্বার্থাধিকারী হন, তবে তিনি দখলে না থাকলেও ওই রায় কার্যকর করার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ডিক্রি জারি মামলা করা যাবে।

৭. ট্রাইব্যুনালের রায় আমার পক্ষে গ্রহণযোগ্য না হলে পরবর্তী সময়ে আমি কি আবার আপিল করতে পারব?
উত্তর: জেলা জজ আদালত বা ট্রাইব্যুনালের মালিকানা দাবিদারের আবেদন যদি খারিজ হয় সে রায়ের বিরুদ্ধে অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল এবং অ্যাপিলেট ট্রাইব্যুনাল রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সরাসরি লিভ টু আপিল দায়ের করতে পারবেন ।(প্রশ্নকর্তা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক)
পরামর্শ দিয়েছেন— সুব্রত চৌধুরী
আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট

No comments

Powered by Blogger.