বাংলাদেশের আপত্তি মেনে নেয়ার আশ্বাস যুক্তরাষ্ট্রের- আমরা টিকফা সই করতে চাই ॥ কায়েস

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোন মতভেদ থাকলে টিকফা চু্িক্ত হবে না। তবে বাংলাদেশ সব ধরনের মতপার্থক্যের অবসান ঘটিয়েই ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা চুক্তি’ (টিকফা) স্বাক্ষরের আশা করছে। এ কথা জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস।


তিনি শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চুক্তি সই করতে চাই। তবে কোন ধরনের মতপার্থক্য থাকলে আমরা চুক্তিটি স্বাক্ষর করতে পারব না।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও আমেরিকার মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োাগ সহযোগিতা চুক্তি (টিকফা) নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের কিছু দাবি-দাওয়া রয়েছে। দাবিগুলো নিয়ে সমঝোতা হলেই এ চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে মতভেদ থাকলে টিকফা চুক্তি হবে না।
গত চার বছর ধরে এই চুক্তির বিষয়ে আলোচনা চললেও কয়েকটি বিষয়ে ঐকমত্য না হওয়ায় তাতে ছেদ পড়ে। টিকফার বিষয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আপত্তির কথা ওয়াশিংটনকে জানানো হয়েছে। ফলে এ আপত্তিগুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় ফিরতে রাজি হয়েছে। আলোচনা পুনরায় শুরুর বিষয়ে বাংলাদেশও আশাবাদী।
এ প্রসঙ্গে মিজারুল কায়েস বলেন, ‘টিকফা নিয়ে বাংলাদেশের দাবিগুলো মেনে না নেয়া পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য এ দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে।’
গত জুলাই মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা সইয়ে অচলাবস্থার জন্য বাংলাদেশ দায়ী নয়। তবে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য বাংলাদেশ সব সময়ই প্রস্তুত।
গত বুধবার ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির সঙ্গে এক বৈঠকে টিকফা আলোচনা পুনরায় শুরুর আগ্রহ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়ায় বাণিজ্য বিষয়ক সহকারী প্রতিনিধি মাইকেল ডিলানি ও সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম জে বার্নস।
শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ‘ফরেন সার্ভিস ক্লাব ফ্যামিলিস’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে টিকফা ছাড়াও ওয়াশিংটনের সঙ্গে সামরিক সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন মিজারুল কায়েস। তিনি জানান, খুব শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই অঙ্গরাজ্যে সামরিক সহযোগিতা বিষয়ক এক আলোচনায় বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। শুধু বলেন, এটি হবে কৌশলগত আলেচনা।
ওই বৈঠকের সিদ্ধান্তই ১৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র অংশীদারিত্ব সংলাপের আলোচ্য বিষয় হবে বলেও সচিব জানান। এর আগে গত মার্চে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জেনারেল ফ্রান্সিস জে উইয়েরকিনস্কি জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র একটি শক্তিশালী সামরিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়।
ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের প্রস্তাবিত ১৫টি রুটে ট্রানজিট নিয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন আছে।
মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের ঢাকা সফর পিছিয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঈদ-উল-ফেতরের পরে তাঁর সফরে আসার কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গা-রাখাইন দাঙ্গার কারণে তা পিছিয়ে গেছে। তবে তাঁর বাংলাদেশে আসার প্রক্রিয়া চলছে। যদিও এখনও দিন-তারিখ ঠিক হয়নি।
প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সৌহার্দ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমার-চীন-কুনমিং সড়কে আগামী বছরের প্রথম মাসেই কার র‌্যালি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েস।

No comments

Powered by Blogger.