গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা- শিশুর জন্য বুকের দুধ, সম্পূরক খাবার ও সমন্বিত কার্যক্রম জরুরি

দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টির ফলে দেশের ৪১ শতাংশ শিশুর উচ্চতা বয়স অনুযায়ী কম বা বেঁটে। এই শিশুদের বুদ্ধি কম হয়। এ ধরনের অবস্থা থেকে উত্তরণে, নিয়ম অনুযায়ী শিশুকে বুকের দুধ এবং সম্পূরক খাবার খাওয়াতে হবে। এ জন্য সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত কার্যক্রম হাতে নিতে হবে।


গতকাল শনিবার ডেইলি স্টার কার্যালয়ে মায়ের বুকের দুধ ও সম্পূরক খাবার বিষয়ে আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকেরা এসব কথা বলেন। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপের প্রাথমিক ফলাফল অনুযায়ী, বর্তমানে ছয় মাস বয়সী শতকরা ৬৪ শতাংশ শিশুকে শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে। কিন্তু ছয় মাস পর্যন্ত এক ফোঁটা পানিও না দিয়ে কত শতাংশ শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো হচ্ছে, তা জানা জরুরি। অন্যদিকে ছয় মাসের পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি সব নিয়ম মেনে সম্পূরক খাবার পাচ্ছে মাত্র ২১ শতাংশ শিশু।
ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার, ব্র্যাক এবং সিভিল সোসাইটি অ্যালায়েন্স ফর সান, বাংলাদেশ ‘ইনফ্যান্ট অ্যান্ড ইয়ং চাইল্ড ফিডিং (আইওয়াইসিএফ) প্র্যাকটিসেস ইন দ্য কমিউনিটি’ শীর্ষক এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন ডেইলি স্টার পত্রিকার ডিফেন্স অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক বিভাগের সম্পাদক শাহেদুল আনাম খান।
আলোচকেরা বুকের দুধ ও সম্পূরক খাবার খাওয়ানোর বিষয়ে মায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, পরিবারের স্বামী বা পুরুষ সদস্যদের সম্পৃক্তকরণ, নারীর শিক্ষা বাড়ানো, খাদ্যনিরাপত্তা এবং বিশেষ করে সচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্ব দেন। সরকারের চলমান কার্যক্রমের গুণগত মান ও কর্ম এলাকা বাড়ানোরও সুপারিশ করেন তাঁরা। কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকে শুধু পুষ্টিকেন্দ্রিক একজন কর্মকর্তাকে নিয়োগ দেওয়ারও সুপারিশ করেন আলোচকেরা।
বৈঠকের মূল বক্তব্যে ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির জ্যেষ্ঠ কর্মসূচি ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ রাইসুল হক বলেন, ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ খাওয়ালে (পানিও নয়) পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর মৃত্যুঝুঁকি ১৩ শতাংশ কমে। ছয় মাস বয়সের পর মায়ের দুধের পাশাপাশি সুষম পুষ্টিকর খাবার খাওয়ালে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি কমে আরও ছয় শতাংশ। তিনি শিশুখাদ্য বিষয়ে ব্র্যাকের কর্মসূচি তুলে ধরেন।
আলোচনায় আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিসিডিআরবি) পুষ্টি ও খাদ্যনিরাপত্তা কেন্দ্রের পরিচালক তাহমিদ আহমেদ খাদ্যনিরাপত্তাহীনদের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় আনা এবং মানুষগুলোর জীবিকা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেন।
আন্তর্জাতিক জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সুলতানা খানম শুধু রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নয়, পরিবারভিত্তিক খাদ্যনিরাপত্তা এবং দেশে মজুদ থাকা খাবারে আসলেই কতটুকু প্রবেশযোগ্যতা আছে, তা আলোচনায় আনেন।
জাতিসংঘের শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) পুষ্টি বিশেষজ্ঞ মহসিন আলী বলেন, অনেক পরিবার আছে যেখানে খাদ্যের অভাব নেই, তারা শুধু সচেতনতার অভাবে শিশুকে যথাযথ খাবার দিচ্ছে না। এ ছাড়া বস্তির বাবা-মাও শিশুদের পেছনে দৈনিক ১০ বা ১৫ টাকা খরচ করছে চিপস, চানাচুর বা এ ধরনের খাবার কেনার পেছনে।
ট্রেইনিং অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্স ফর হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান রোখসানা হায়দার বলেন, বেশির ভাগ নারী অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। সরকারের ছয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটির সুবিধা তাঁরা পাচ্ছে না।
ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মসূচির পরিচালক (স্বাস্থ্য) কাওসার আফসানা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়ের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর বাড়ানোর আহ্বান জানান।
ফান্টা ৩-এর দেশীয় ব্যবস্থাপক ফেরদৌসী বেগম বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ এবং সব ধরনের কর্মসূচিতে কিশোর-কিশোরীদের অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেন।
ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, শিশুখাদ্য নিয়ে শুধু গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন নয়, সচেতনতা তৈরি এবং ফলোআপ কার্যক্রমেও ডেইলি স্টার সব সময় সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল কবির, অ্যালাইভ অ্যান্ড থ্রাইভের জ্যেষ্ঠ দেশীয় পরিচালক টিনা জি সাংভি, মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট ইনিশিয়েটিভের দেশীয় পরিচালক জেবা মাহমুদ, আরডিআরএস বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক সেলিমা রহমান, কেয়ার বাংলাদেশের জাতীয় পুষ্টি সমন্বয়কারী শাহেদ রহমান প্রমুখ আলোচনায় অংশ নেন।

No comments

Powered by Blogger.