বেহাল রেলপথ-বৃহৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা দরকার

অর্থনীতি ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কানেকটিভিটি কথাটি এখন বহুল ব্যবহৃত। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির পরিধি বিস্তারের স্বার্থে আন্তঃআঞ্চলিক, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংযোগকে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করাই এখন বাস্তবতা। এই সংযোগ যেমন নৌ, রেল ও সড়কপথে; তেমনি সমুদ্র ও আকাশপথেও।


এমনকি ইন্টারনেট মাধ্যমে মুক্ত সংযোগের গুরুত্বও অপরিসীম। বিশ্বের দেশগুলো যেমন সবদিকেই দরজা খুলছে, তেমনি সবার দরজা দিয়ে প্রবেশের জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। বাণিজ্যেই লক্ষ্মীর বসতি। ফলে এ ক্ষেত্রে অগ্রগতির ক্ষেত্রে কার্পণ্য নেই। কিন্তু কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পিছিয়ে আছে সব দিক থেকেই। বৈশ্বিক কানেকটিভিটির সঙ্গে যুক্ত হতে যে আত্মশক্তি দরকার, তা অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের নেই। ফলে, এ সংক্রান্ত আগ্রহ, উদ্যোগ অনেক ক্ষেত্রেই ফাঁকা বুলিতে পর্যবসিত হতে চলেছে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ক্ষেত্রগুলোর দিকে তাকালে হতাশ না হওয়ার বিকল্প পাওয়া যায় না। বড় বড় শহরের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, দ্রুততর যোগাযোগের জন্য উন্নততর ব্যবস্থা আত্মস্থ করার উপায় এখনও সুদূর পরাহত। ভাঙাচোরা মহাসড়ক চলছে জোড়াতালি পদ্ধতিতে। সংস্কারের অভাবে অনেক নৌপথই নাব্যতা হারিয়েছে। রেলও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। প্রধান যোগাযোগ ব্যবস্থাগুলোরই যদি এমন নাজুক দশা থাকে, তবে অভ্যন্তরীণ ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে কীভাবে? দ্রুত মাল ও যাত্রী পরিবহনের উপায়ই বা কী? আর এই অবকাঠামো নিয়ে আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থাতেই বা আমরা যুক্ত হওয়ার স্বপ্ন কীভাবে দেখি? বাস্তবতা হলো, আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় যে শ্ল্নথ গতি, তার পেছনে অনেক কারণের মধ্যে দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি বড় কারণ। ভাঙাচোরা পথ, শ্লথ গতি, জ্যাম, দুর্ঘটনা নাগরিকদের জীবনের মতো রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকেও ধীর করে দিয়েছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কোনো মহাপরিকল্পনার দেখা কি সহসা মিলছে? হতাশ হওয়ার মতো খবর হলেও এটি সত্য যে, অনেক আশাবাদ ও স্বপ্ন সত্ত্বেও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের বিশেষ কোনো সম্ভাবনা নেই। রাতারাতি পরিবর্তন করার মতো অবস্থা নেই। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা কি আছে? শনিবারের সমকালে দেশের রেলপথ নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তাতে দ্রুত গতিসম্পন্ন, আধুনিক ও কার্যকর এ যোগাযোগ ব্যবস্থাটি যে এখানে পুরোপুরি উপেক্ষিত_ তা স্পষ্ট। রেলের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো হচ্ছে না। উপেক্ষা, অনাদর, দুর্নীতি, অনিয়মে এ খাতটি ক্রমবর্ধমান লোকসানি খাত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। বহু স্থানে রেলপথ ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে উঠছে। দুর্ঘটনাও বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। অথচ সঠিক পরিকল্পনা, যথাসময়ে সংস্কার ও উন্নয়নের ব্যবস্থা হলে দ্রুতগতির পরিবহন ব্যবস্থা হিসেবে অর্থনীতিতে রেলের বিশেষ ভূমিকা থাকতে পারত। সে সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। কিন্তু বেহাল পরিস্থিতি থেকে রেলকে বাঁচাতে হলে বড় বিনিয়োগ দরকার। খোলনলচে পাল্টে রেলকে নবযৌবন দেওয়ার উদ্যোগ দরকার। রেলের পুরনো ইঞ্জিন, পুরনো অবকাঠামো, সেবা ব্যবস্থা বদলে ফেলা দরকার। বর্তমানে যে বিস্তীর্ণ রেলপথ বাংলাদেশকে সূত্রবদ্ধ করে রেখেছে, সেটি গতিশীল হলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে বড় পরিবর্তন আসবে_ সন্দেহ নেই। নীতিনির্ধারণী মহলে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের প্রয়োজনটা গভীরভাবে অনুভূত হওয়া দরকার। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উপেক্ষা করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন যে কোনোভাবেই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়_ সে সত্য যত দ্রুত উপলব্ধ হবে ততই মঙ্গল। উন্নয়ন ও সংস্কারের পরিকল্পনা রেল থেকে শুরু হলে ক্ষতি কী? তেমন বড় উদ্যোগ আসুক। প্রয়োজনে বিদেশি ও বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা হোক। নইলে যা আছে তাও আমাদের চোখের সামনেই হারিয়ে যাবে।
 

No comments

Powered by Blogger.