টিভি টক-শোতে এবিএম মূসাঃ আগে বলত ‘তুই রাজাকার’ এখন বলতে হবে ‘তুই চোর’

‘‘এই সরকারের যাকে যেখানে দেখবেন, তাকে বলতে হবে, ‘তুই চোর, তুই বেটা চোর।’ চার হাজার কোটি টাকা চুরিকে (অর্থমন্ত্রী) চুরি মনে করেন না, নিজস্ব সম্পদ মনে করেন। আমরা চুরি মনে করি। এ ক্ষেত্রে মুহিত সাহেবকে তো প্রথমে চোর বলতে হবে।’’

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট এ বি এম মূসা হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক-শোতে এসব কথা বলেছেন।
প্রখ্যাত এই সাংবাদিক প্রয়াত জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নাটকের উদ্ধৃতি দিয়ে আরও বলেন, ‘‘তিনি (হুমায়ূন আহমেদ) একটা স্লোগান বের করেছিলেন ‘তুই রাজাকার’। এ কথায় আমি ওনার ভক্ত হয়ে যাই। এখন সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নামতে হবে। এই সরকারের যাকে যেখানে দেখা যাবে তাকেই (লক্ষ্য করে) স্লোগান দিয়ে বলতে হবে, ‘তুই চোর, তুই বেটা চোর’।’’

এ বি এম মূসা বলেন, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক বা হলমার্কের টাকা ফেরত দেওয়াটাই কি যথেষ্ট? গণমাধ্যম যদি ফাঁস না করতো, তাহলে কি হতো? এখন দরকার সংসদে বিষয়টি উঠানো। বিরোধী দলেরও দোষারোপ করে এ নিয়ে সংসদে কথা বলা উচিত।

৪ সেপ্টেম্বর রাতে এ বি এম মূসা ওই টক-শোতে আরও বলেন, গণমাধ্যম যদি না থাকতো, সাংবাদিকরা যদি কোনো ভূমিকা পালন না করতেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের কথা যদি সংবাদ, অবজারভার, আজাদসহ অন্যান্য দৈনিক পত্রিকা না বলতো, তাহলে এ দেশ কি স্বাধীন হতো? হতো না। মুজিব সাহেবও মুক্ত হতেন না।

এ বি এম মূসা বলেন, এখন একটা ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারের কাছে। যা হচ্ছে, গণমাধ্যমের প্রত্যেকটা খবর গায়ে ফোসকা লাগে। তার কারণ, সরকারের অনিয়ম, দুর্নীতি ফাঁস করে দিচ্ছে তারা। গণমাধ্যম যদি না জানাতো, চার হাজার কোটি টাকা গেছে, শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা গেছে, ডেসটিনি টাকা নিয়ে গেছে, তাহলে কি আজকে মুহিত সাহেবকে এ কথা বলতে হতো যে, চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা নয়।

তিনি আরও বলেন, এই সরকারের দুটি মাত্র শত্রু। এগুলো হচ্ছে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আর বিশ্বব্যাংক। এ ছাড়া আর কোনো শত্রু নেই। আর মিত্র নেই দলের লোক ছাড়া। গণমাধ্যম কারও শত্রুও নয়, মিত্রও নয়। গণমাধ্যম যে খবর পাচ্ছে তাই প্রকাশ করছে। এতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে এই যে, ‘বাংলাদেশের সবাই চোর’- বিশ্ব এ কথা জেনে যাচ্ছে। মিডিয়া যদি এগুলো আলোচনা না করতো, তাহলে চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা হয়ে যেতো। এই মহাবিদ্যা হলো না।

আর তাদের সাফাই গাচ্ছেন এ দেশের অর্থমন্ত্রী। যিনি সারা দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করবেন, উন্নয়ন করবেন। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক জীবনকে সহনীয় করার, সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব তার। আর তিনি যদি বলেন, চার হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই নয়, তাহলে কতো হাজার টাকা হলে তিনি বলবেন টাকা?

মুহিত সাহেব ও তার সরকার ড. ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংক কতো টাকা খরচ করেছেন, সেটার হিসাব নিয়ে তোলপাড় করে মাথা খারাপ করছেন। দেশ-বিদেশে সবাইকে ছোট করছেন। ড. ইউনূস সম্পর্কে সরকারের যে অভিযোগ তা হচ্ছে, ইউনূস টাকাটা নিজের পকেটে নেননি, ভিন্নখাতে নিয়ে গেছেন।

দেশের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ৩০ লাখ লোক প্রাণ দিয়ে স্বাধীনতা এনেছেন। যারা স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন, তারাই আজ রাজাকারি ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছেন। তার মতে, কোনো কোনো মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার। কিন্তু কোনো রাজাকারই মুক্তিযোদ্ধা নন। মুক্তিযুদ্ধের পর বহু মুক্তিযোদ্ধা রাজাকার হয়ে গেছেন। কিন্তু কোনো রাজাকারই মুক্তিযোদ্ধা হননি।

বুয়েটে অস্থিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘কেন দুটি লোককে রক্ষার জন্য সরকারের উচ্চ থেকে নিম্ন পর্যায়ের সবাই এতো বদনামের ভাগী হচ্ছেন। কি এমন সম্পর্ক তাদের সঙ্গে। শিক্ষামন্ত্রীর উচিত ছিল সমাধান দেওয়া। তিনি ভালো মানুষ। সহজ-সরল মানুষ। কিন্তু ছাত্রদের দাবিটা সঠিক কি না তা কেউ বলছেন না। এখানে ছাত্র-শিক্ষক এক হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু ছাত্ররা ক্লাসে গেলে তো হবে না।’’

‘‘আমার বক্তব্য হচ্ছে, তারা কেন মাঠে যাবেন? যেখানে ছাত্র-শিক্ষক এক হয়ে গিয়েছিল। সেখানে শিক্ষকদের আলাদা করা হয়েছে। আমি বলবো, ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকরা বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। ভিসিকে কেন সরানো হলো না, সেই রহস্যটা খুঁজে বের করতে হবে।’’

No comments

Powered by Blogger.