পকেটমারদের টার্গেট বিআরটিসি বাস by ইমরান আলী

গত ১ সেপ্টেম্বর শাহবাগ মোড় থেকে বিআরটিসির বাসে উঠে মধ্যবয়সী আলাউদ্দিন (৪৫)। গন্তব্য উত্তরা। ফার্মগেট আসার পর ওই গাড়িতে আরো যাত্রী উঠায় ভিড় হয়ে যায়। এক পর্যায়ে তিনি দেখেন তার প্যান্টের পকেটে রাখা ৩৬ হাজার ৫শ’টাকা নাই।

একইভাবে গত ৩ সেপ্টেম্বর ফার্মগেট থেকে বিআরটিসির দোতালা বাসে ভিড়ের মধ্যে উঠেন তেজগাঁও কলেজের ছাত্র আশিক। গন্তব্যস্থল বনানী হলেও মহাখালী যাওয়ার পর তার পকেটে থাকা স্যামসং মোবাইল ফোনটি হারিয়ে যায়।
এভাবেই প্রতিনিয়ত বিআরটিসির বাসগুলোর যাত্রীরা পকেটমারদের টার্গেটে পড়ছেন। তাদের কবলে পড়ে টাকা ও মোবাইল ফোন খুইয়ে চলেছেন তারা। বিআরটিসির ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, যাত্রী বেশে পকেটমার বিআরটিসির বাসগুলোতে উঠছে। ভিড়ের কারণে চক্রটি হাতিয়ে নিচ্ছে মোবাইল ফোন ও টাকা পয়সা।

৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ফার্মগেট থেকে বাসে উঠার পর জনাকীর্ণ বাসের অবস্থা দেখে নিজের টাকা হারানোর কথা বলছিলেন ভুক্তভোগী আলাউদ্দিন। ফার্মগেট থেকে উত্তরা পর্যন্ত আসার পুরোটাই সময় সে এই পকেটমারদের বিষয়ে নানা কথা বলে। তার মতে এক শ্রেণীর পকেটমারের টার্গেট এখন বিআরটিসি বাস। 

অনুসন্ধানেও জানা যায়, রাজধানীতে আগে ৪/এ, ৭, ৮, ৩ এবং ৬ নম্বর গাড়িতে পকেটমারদের দৌরাতœ থাকলেও বর্তমানে টার্গেট বিআরটিসি বাস। রাজধানীর বিভিন্ন কাউন্টারে যাত্রী সেজে গাড়িতে উঠে তারা এই কাজ করে চলেছে। বিআরটিসি বাসগুলোতে বিশেষ করে চাকরিজীবী ও ছাত্ররাই বেশিরভাগ যাত্রী হয়ে থাকেন। গুলিস্থান ও মতিঝিলের শেষ গন্তব্য এই বাসগুলো রাজধানীর মিরপুর, আব্দুল্লাহপুর, গাবতলী, বালুঘাট থেকে ছেড়ে আসে।

অনুসন্ধানে  আরো জানা যায়, পকেটমাররা মূলত অফিস থেকে যখন যাত্রীরা বিকেলে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয় ঠিক তখনই টার্গেট করে। গুলিস্থান অথবা মতিঝিলে এরা যাত্রীর মতো বাসে উঠে। সুযোগ বুঝে কাজ করে গন্তব্যের মাঝখানে কোথাও নেমে যায়।

ভুক্তভোগীরা বলেন, মতিঝিল কিংবা গুলিস্থান থেকে বাস ছেড়ে আসলেও পকেটমারদের মূল তৎপরতা শুরু হয় ফার্মগেট থেকে। কেননা এখান থেকে সবচেয়ে বেশি যাত্রীরা বাসে উঠে। এ কারণে বাসগুলোতেও ভিড় থাকে। আর এই সুযোগটিই কাজে লাগায় পকেটমাররা। বিআরটিসি বাস স্বল্পতার কারণে যাত্রীদের এত ভিড় উল্লেখ করে তারা রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে বিআরটিসি বাস বাড়ানোর দাবি করেন।

ফার্মগেটের বিআরটিসির কাউন্টারে থাকা সুপার ভাইজার আব্দুল জলিল বাংলানিউজকে বলেন, বাস স্বল্পতার কারণে যাত্রীরা এত ভিড় করেন। বিআরটিসির সেবা ভালো হওয়ার কারণে অধিকাংশ যাত্রী বিআরটিসির বাস পছন্দ করেন। যার কারণে বিআরটিসির গাড়িতে অনেক বেশি ভিড় হয়। আর এই সুযোগে পকেটমারদের শিকার হয় যাত্রীরা।

তিনি ভিড়ের সময় যাত্রীদের সাবধান থাকার পরামর্শ দেন।

এদিকে পকেটমারদের বিষয়ে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের এডিসি (পশ্চিম) মশিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশের বিভিন্ন টিম বাস টার্মিনাল এবং অভ্যন্তরীণ রুটের কাউন্টারগুলোতে থাকে। পকেটমাররা লোকজনের হাতে ধরা না পড়লে আসলে চিহ্নিত করা কঠিন ব্যাপার।

এলাকা ভিত্তিক পকেটমারদের তালিকা করে গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করবে বলেও জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.