রাজনীতির কিচিরমিচির by একরামুল হক শামীম

জ্যাক ডোর্সি, ব্রিজ স্টোন ও ইভান উইলিয়ামসরা যখন একটি মাইক্রোব্লগিং সাইট তৈরির কথা ভেবেছিলেন তখন তার জন্য একটা নাম খুঁজছিলেন। অনেক ভেবেচিন্তে তারা নাম রেখেছিলেন টুইটার, যার বাংলা কিচিরমিচির করে বলা। কয়েক বছরের মধ্যেই ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তম সাইটের একটি হয়ে ওঠে তাদের সেই কিচিরমিচির করার সাইট।


টুইটার এখন নানা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ কিংবা বার্তা প্রেরণের মাধ্যমের পাশাপাশি টুইটার যে এক সময় রাজনৈতিক ক্যাম্পেইনের জন্য ব্যবহৃত হবে এমনটা কি ভেবেছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতারা? যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বর্তমান ক্যাম্পেইন প্রক্রিয়ার দিকে নজর রাখলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। অবশ্য রাজনৈতিক ক্যাম্পেইনে টুইটারের ব্যবহার ২০০৮ সালের প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনেই হয়েছিল। তখন সেই লড়াইয়ে এগিয়ে ছিলেন বারাক ওবামা। সেই নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী জন ম্যাককেইনের চেয়ে টুইটার অনুসারী পাওয়ার দিক থেকে অনেক এগিয়ে ছিলেন তিনি। এবারের নির্বাচনেও টুইটার ক্যাম্পেইনের বিষয়টি সামনে এসেছে।
২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারপর্ব চলছে এখন। সম্প্রতি ডেমোক্রেটিক দলের কনভেনশনে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের মনোনয়ন গ্রহণ করেছেন বারাক ওবামা। অন্যদিকে রিপাবলিকান দলের প্রার্থী মিট রমনি জোরতালে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রচারের গুরুত্বপূর্ণ টুল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার। টুইটারে কার অনুসারী কতজন, কাকে নিয়ে বেশি টুইট হচ্ছে সেই পরিসংখ্যান আগ্রহ নিয়ে হাজির করেছে বিভিন্ন মিডিয়া। কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান তো নির্বাচনের ফলের ওপর টুইটার কার্যকলাপের প্রভাব নিয়ে রীতিমতো গবেষণাপত্র ফেঁদে বসেছে। পিউ রিসার্চ সেন্টার নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে দেখিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের ১৩ ভাগ টুইটারে রয়েছেন। এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। প্রত্যক্ষভাবে ভোটারদের ওপর টুইটার কর্মকাণ্ডের খুব বেশি ভূমিকা না থাকলেও পরোক্ষ অনেক ভূমিকা রয়েছে। লোকজন তাদের মতামত তুলে ধরছেন টুইটারে টুইট করার মাধ্যমে।
নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে যে টুইটার কর্মকাণ্ডের গুরুত্ব রয়েছে তা বোধগম্য হয়েছে বারাক ওবামার ভাষণের মাধ্যমে। যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত ডেমোক্রেটিক দলের জাতীয় সম্মেলনে দলীয় মনোনয়ন লাভের পর প্রথা অনুযায়ী ভাষণ দিয়েছেন ওবামা। আবেগী সেই ভাষণ ভীষণ রকমের সাড়া জাগিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ সাইটগুলোতে। টুইটার তার ভাষণকে চিহ্নিত করেছে টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ সাইটের সেরা রাজনৈতিক মুহূর্ত হিসেবে। রেকর্ড সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে ওবামার ভাষণ। বারাক ওবামার ভাষণ চলাকালে তা নিয়ে টুইটারে প্রতি মিনিটে ৫২৭৫৬টি টুইট হয়েছে। ভাষণের কিছু কিছু আবেগী লাইনের পর টুইট সংখ্যা বেড়ে গেছে। সবমিলিয়ে ওবামার ভাষণ মোট ৪ মিলিয়ন টুইট তৈরি করেছে। রিপাবলিকান দলের সব জাতীয় কনভেনশনগুলো মিলিয়েও এত টুইট হয়নি। এখানেই এগিয়ে আছেন বারাক ওবামা। মিডিয়া বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, এর মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ওবামার জনপ্রিয়তা বোঝা যাচ্ছে। মিডিয়া বিশ্লেষক রবার্ট থম্পসন বলেছেন, ওবামার ভাষণগুলোতে এমন কিছু কথা থাকে যা সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারকারীদের আকৃষ্ট করে।
যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের ক্যাম্পেইনে টুইটার ও অন্যান্য সোস্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে যেখানে এত মাতামাতি, সেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান কোথায়? এখানে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলা হলেও রাজনৈতিক ক্যাম্পেইনে সামাজিক যোগাযোগ সাইটের ব্যবহার দেখা যায় না। অথচ তরুণ ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির সবচেয়ে
সহজ মাধ্যম এই সামাজিক
যোগাযোগ সাইট। বিষয়টি বারাক ওবামা বেশ ভালো করেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন।
 

No comments

Powered by Blogger.