ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করল কানাডা-* কানাডার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইসরায়েল -* ইরান বলেছে, কানাডা ইহুদি শক্তির দ্বারা প্রভাবিত। তারা ইরানি জনগণকে সমস্যায় ফেলতে চায়

ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে কানাডা। তেহরানে কানাডীয় দূতাবাস থেকে সব কর্মকর্তাকে তারা দেশে ফেরত আসতে বলেছে। পাশাপাশি ইরানি কূটনীতিকদের পাঁচ দিনের মধ্যে কানাডা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সিরিয়ার ক্ষমতাসীনদের প্রতি সমর্থন, বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে কানাডা ইরান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল।


গত শুক্রবার এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ইহুদি শক্তির প্রভাবে কানাডা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে সমালোচনা করেছে ইরান।
কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন বেয়ার্ড গত শুক্রবার জানান, তাঁর দেশ 'ইরানকে বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি' বিবেচনা করে। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রতি সমর্থন, বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি ও ক্রমাগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের কারণে ইরানের প্রতি তাদের এই মনোভাব। এ কারণেই ইরানের কানাডীয় দূতাবাস বন্ধ ও ইরানি কূটনৈতিকদের কানাডায় অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ইসরায়েল ইরানের পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পারে_এই আশঙ্কার সঙ্গে কানাডীয় দূতাবাস বন্ধের কোনো সংযোগ নেই বলেও জানান বেয়ার্ড। বেয়ার্ড বর্তমানে এশীয় প্রশান্তমহাসাগরীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা (অ্যাপেক) সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য রাশিয়ায় রয়েছেন।
কানাডার পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বেয়ার্ডের বরাত দিয়ে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়, 'ইরান সরকার ক্রমাগত আসাদ সরকারের প্রতি সহায়তা বাড়াচ্ছে। জাতিসংঘ পরমাণু কর্মসূচির বিষয়ে যেসব শর্ত বেঁধে দিয়েছে, সেগুলো পূরণে ক্রমাগত অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। ইসরায়েলের অস্তিত্বের প্রতি নিয়মিত হুমকি, বর্ণবাদী ভাষা ব্যবহার ও গণহত্যায় উসকানি দিয়ে যাচ্ছে। ইরান বিশ্বের গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী দেশগুলোর অন্যতম। তারা বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠনকে আশ্রয় ও সমর্থন দিচ্ছে। এসব কারণে কানাডা সরকার ইরানকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মদদদাতা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। উপরন্তু ইরান সরকার জেনেভা কনভেনশন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এই অবস্থায় ইরানের সঙ্গে আর কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। কানাডার কূটনৈতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান কাজ।'
বর্তমানে কানাডীয় যেসব নাগরিক ইরানে বসবাস করছে, তাদের তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার দূতাবাসের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কানাডা সরকার। পাশাপাশি কানাডীয় নাগরিকদের ইরান সফরের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। কানাডার পররাষ্ট্র বিভাগ জানায়, যেসব কানাডীয় নাগরিকের ইরানি নাগরিকত্ব রয়েছে, তাদের সতর্ক করা হচ্ছে। কারণ ইরান সরকার দ্বৈত নাগরিকত্ব অনুমোদন করে না। উল্লেখ্য, কানাডায় বর্তমানে প্রায় চার লাখ ইরানি বসবাস করছে। কানাডায় বর্তমানে ১৭ ইরানি কূটনৈতিক অবস্থান করছেন।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কানাডার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কানাডা যে দৃঢ়তা দেখিয়েছে তা ইরানকে এটা অনুধাবন করাতে পারবে যে তারা পরমাণু অস্ত্র ইস্যুতে খুব বেশি দূর যেতে পারবে না। এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আন্তর্জাতিক নৈতিকতার বাস্তব উদাহরণ।
এদিকে, কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে ইরান। ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রামিন মেহমানপারাস্ত বলেন, কানাডার বর্তমান সরকার চরমপন্থী। তারা ইহুদি শক্তির দ্বারা প্রভাবিত। ইরানি জনগণের ওপর চাপ তৈরি ও ইরানি নাগরিকদের সমস্যায় ফেলে দেওয়ার জন্যই তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
অবরোধ বাড়ানোর আহ্বান ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির : ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাকি সদস্যদের প্রতি ইরানের ওপর নতুন অবরোধ আরোপের আহ্বান জানিয়েছে। জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রী গিদো ভেস্টারভেলে এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি সাইপ্রাসে ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের বাইরে এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রী লরা ফ্যাবিয়াস ও ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রী উইলিয়াম হেগের সঙ্গে। বৈঠকের পর তিনি এও জানান, পরমাণু ইস্যুতে আলোচনার ব্যাপারে ইরান গঠনমূলক মনোভাব দেখাতে না পারায় দেশটির ওপর নতুন অবরোধ আরোপের কথা ভাবা হচ্ছে। সূত্র : বিবিসি, গার্ডিয়ান।

No comments

Powered by Blogger.