মনমোহনের সঙ্গে আজ মালদ্বীপে বৈঠক-তিস্তা নিয়ে হতাশার কথা জানাবেন শেখ হাসিনা

তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণের হতাশার কথা আজ বৃহস্পতিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংকে জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মালদ্বীপের আদ্দু নগরীর সাংগ্রিলা ভিলেঙ্গি রিসোর্টে স্থানীয় সময় আজ দুপুর ১টার দিকে দুই প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার পর দুই প্রধানমন্ত্রীর এটিই হবে প্রথম বৈঠক। সার্কের ১৭তম শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে শেখ হাসিনা বর্তমানে মালদ্বীপে রয়েছেন।আধা ঘণ্টার ওই বৈঠকের প্রস্তুতি-সংশ্লিষ্ট এক বাংলাদেশি কর্মকর্তা মঙ্গলবার ঢাকা থেকে মালদ্বীপে যাওয়ার পথে বিমানে কালের কণ্ঠকে জানান, 'বৈঠকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সব ইস্যুতে আলোচনা হবে।


তবে প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) আগ্রহ প্রকাশ করেছেন যে, তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলবেন, গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরটি ছিল ঐতিহাসিক। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ মনে করে, তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় ওই সফরের অনেক অর্জনই ম্লান হয়ে গেছে।'
পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েসও ওই দিন আদ্দু নগরীতে সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তাসহ সব ইস্যুতে আলোচনা হবে। নতুন বিষয়ও আসতে পারে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা নদীর পানিবণ্টনের বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। অন্যদিকে ভারত নিয়মিত ট্রানজিট-ট্রান্সশিপমেন্টের বিষয়টি তুলবে বলে বাংলাদেশ ধারণা করছে। সম্ভাব্য আলোচ্যসূচি সম্পর্কে ওই কর্মকর্তা বলেন, 'দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়েই আলোচনা হবে। আর তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুটি যে আলোচনায় বাংলাদেশ পক্ষের প্রধান এজেন্ডা হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।'
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় তিস্তাচুক্তি না হওয়ায় বিভিন্ন পর্যায় থেকে হতাশা প্রকাশ করা হয়েছিল। এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই মনমোহন সিংকে জানাবেন যে, তিস্তাচুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণ হতাশ হয়েছে।
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে সহযোগিতা করতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অনুবিভাগের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার ঢাকা থেকে মালদ্বীপে গেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অপর এক কর্মকর্তা বলেছেন, বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তিস্তা ও ট্রানজিট বিষয়ে নেওয়া সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে। বৈঠক থেকে এমন ধারণা দেওয়া হতে পারে, তিস্তার পানিবণ্টন ইস্যুটি সুরাহা হওয়া পর্যন্ত ট্রানজিট ইস্যুটিরও সুরাহা হতে পারে না। তিনি আরো বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তির আওতায় দুই দেশের মধ্যে ছিটমহল ও অপদখলীয় ভূমি বিনিময়ের বিষয়েও বাংলাদেশ আলোচনা করতে চায়।
অন্যদিকে পররাষ্ট্র সচিব মোহাম্মদ মিজারুল কায়েস আদ্দু নগরীতে সাংবাদিকদের বলেন, সার্ক সম্মেলনে যোগদানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং নানা ইস্যুতে বৈঠক করবেন। এতে তিস্তাচুক্তিসহ কানেকটিভিটির বিষয় স্থান পাবে।
এদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণ গতকাল আদ্দু নগরীতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিস্তাচুক্তি নিয়ে আলোচনার বিষয়ে সরাসরি জবাব দেননি। তিনি বলেন, দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয়ে আলোচনা হবে।
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব রঞ্জন মাথাই এর আগে শনিবার নয়া দিলি্লতে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় ছাড়াও আঞ্চলিক সহযোগিতা এগিয়ে নিতে আলোচনা করবেন। এই বৈঠকে তিস্তার পানিবণ্টন ও ট্রানজিট নিয়েও আলোচনা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত সেপ্টেম্বরে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় 'অমীমাংসিত' বিষয়গুলো নিয়ে মালদ্বীপে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হতে পারে।
গতকাল সন্ধ্যায় সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি দুই নেতার আজকের বৈঠক প্রসঙ্গে বলেন, 'দ্বিপক্ষীয় অনেক বিষয়েই আলোচনা হবে। ইতিমধ্যে অনেক বিষয়ে মীমাংসা হয়েছে। সামনে আরো সুযোগ আছে।' তিস্তা চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'খুব শিগগির চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে বাংলাদেশ আশাবাদী।'
প্রায় একই সময়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রানজিট, কানেকটিভিটিসহ দ্বিপক্ষীয় সব বিষয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে সন্ত্রাসবাদ দমনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।
উল্লেখ্য, গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তির মুখে তা স্থগিত হয়ে যায়। দৃশ্যত এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের মধ্যে ট্রানজিটের সম্মতিপত্র বিনিময়ের বিষয়টিও স্থগিত করে বাংলাদেশ। তিস্তা চুক্তি না হওয়ায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারতের গণমাধ্যমেও ব্যাপক সমালোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী মনমোহনও হতাশা প্রকাশ করে বলেন, চুক্তি না হওয়াটা দুঃখজনক।

প্রধানমন্ত্রী এখন মালদ্বীপে
সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের ১৭তম শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল দুপুরে মালদ্বীপের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। স্থানীয় সময় বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে মালদ্বীপের আদ্দু নগরীর গান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পেঁৗছালে সে দেশের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদ তাঁকে স্বাগত জানান। এ সময় বিমানবন্দরে একটি ছোট শিশু শেখ হাসিনাকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করে। এ সময় বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়।
বিমানবন্দরে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মিজারুল কায়েস, মালেতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রিয়ার অ্যাডমিরাল আ স ম আবদুল আওয়াল ও মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে পরে একটি রাজকীয় নৌবহরে করে শাংগ্রি-লা'র ভিলিংজিলির অবকাশ যাপন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। শীর্ষ সম্মেলন চলাকালে অন্যান্য রাষ্ট্রীয় অতিথির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সেখানেই অবস্থান করবেন।
রাজধানী মালে থেকে ৫০০ কিলোমিটার দূরে মালদ্বীপের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবসতিপূর্ণ দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপ শহর আদ্দুতে আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে দুই দিনব্যাপী সার্ক শীর্ষ সম্মেলন। এবারের শীর্ষ সম্মেলনের প্রতিপাদ্য 'সেতু বন্ধন'। শেখ হাসিনা ১২ নভেম্বর দেশে ফিরবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
সার্ক সম্মেলনে চার চুক্তি ও ঘোষণা চূড়ান্ত

No comments

Powered by Blogger.