পরমাণু অস্ত্র বানাতে গবেষণা করছে ইরান : আইএইএ

রানের পরমাণু প্রকল্প নিয়ে আবারও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)। তাদের দাবি, তেহরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির ব্যাপারে কাজ করেছে। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত দীর্ঘ প্রতীক্ষিত প্রতিবেদনে আইএইএ জানায়, 'ইরান পরমাণু অস্ত্র-সংক্রান্ত সরঞ্জাম নিয়ে গবেষণা করছে'_এমন 'বিশ্বাসযোগ্য' গোয়েন্দা তথ্য তাদের কাছে রয়েছে। ইরান কম্পিউটারের যে মডেল নিয়ে কাজ করছে তা দিয়ে পরমাণু বোমার ট্রিগার তৈরি সম্ভব।
তেহরান 'ভারসাম্যহীন, অপেশাদারি ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' বলে উল্লেখ করে এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।


প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ গতকাল বুধবার বলেছেন, ইরান তার পরমাণু প্রকল্প থেকে এক চুলও নড়বে না।
পরমাণু প্রকল্পের ব্যাপারে ইরানের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের তাগিদ এবং ইসরায়েলের একতরফা সম্ভাব্য হামলার হুমকির মধ্যেই এ প্রবিবেদন প্রকাশ করল আইএইএ। ইরান প্রসঙ্গে এটিই তাদের সবচেয়ে কঠোর প্রতিবেদন।
ভিয়েনাভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা আইএইএ তাদের ২৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে জানায়, ২০০৮-০৯ সালে ইরান পরমাণু প্রযুক্তি সংক্রান্ত বেশ কিছু গবেষণা চালায়। এসব গবেষণা আইএইএকে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন করেছে। কারণ এসব গবেষণার লক্ষ্যই পরমাণু বোমা তৈরি। ইরানের পরমাণু প্রকল্প-সংক্রান্ত ত্রৈমাসিক এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, 'প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৩ সালের শেষের দিকে একটি কাঠামোগত প্রকল্পের আওতায় একই ধরনের তৎপরতা চালাত ইরান। ২০০৩ সালের পরও তারা পরমাণু বোমা তৈরির চেষ্টা চালিয়ে গেছে_এমন তথ্যও পাওয়া গেছে। এমন কিছু চেষ্টা সম্ভবত এখনো চলছে।' তবে বিবিসি জানায়, এ প্রতিবেদনে স্পষ্টভাবে ইরান পরমাণু বোমা তৈরি করছে_এমন দাবি করা হয়নি।
প্রতিবেদনে ইরান পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র তৈরির কম্পিউটার মডেল, তেহরানের নিকটবর্তী পারচিন সেনা ঘাঁটিতে বিস্ফোরকের পরীক্ষা এবং মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র শাহাব-তিনের মধ্যে পরমাণু যুদ্ধাস্ত্র স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণার কথা উল্লেখ করা হয়।
আইএইএ জানায়, সদস্য ৩৫ রাষ্ট্রের কয়েকটির কাছ থেকে পাওয়া গোয়েন্দা তথ্য, তাদের নিজেদের গবেষণা এবং ইরানের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দেরি না করে ইরানকে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইরান এ প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। আইএইএতে ইরানের দূত আলী আসঘার সোলতানিয়েহ বলেন, 'এ প্রতিবেদন ভারসাম্যহীন, অপেশাদারি ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য তৈরি করা হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থসিদ্ধিই এর উদ্দেশ্য। পুরনো অভিযোগগুলোই আবার তোলা হয়েছে এতে। যার জবাব ইরান আগেই দিয়েছে।' গতকাল রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ভাষণে প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ বলেন, 'আমাদের পরমাণু অস্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। তবে পরমাণু প্রকল্পের পথে এক চুলও ছাড় দেব না আমরা।' তিনি প্রতিবেদনকে 'ফাঁকা বুলি' হিসেবে উল্লেখ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র তাদের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের বিরুদ্ধে আরেক দফা অবরোধ আরোপের প্রস্তাব তোলা হতে পারে বলে জানিয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইতিমধ্যেই ইরানের ওপর চার দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যান বলেছেন, এ ধরনের 'পঙ্গু' নিষেধাজ্ঞায় কোনো কাজ হবে না।
এ প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই ইরানে সম্ভাব্য হামলার ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ইসরায়েলি গণমাধ্যম। গত রবিবার প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজও একই ইঙ্গিত দেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান ক্যাথেরিন অ্যাশটনের মুখপাত্র মাজা কোসিজানসিস বলেন, 'এই প্রতিবেদন ইরানে পূর্ণ পরমাণু অস্ত্র প্রকল্প অব্যাহত থাকারই প্রমাণ বহন করে।'
তবে চীন ও রাশিয়া হয়তো ইরানের ওপর আরেক দফা অবরোধ আরোপের প্রস্তাবে রাজি হবে না। রাশিয়া ইতিমধ্যেই এ প্রতিবেদনের ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেছে, এতে উত্তেজনা বাড়বে। এ ছাড়াও এতে ইরানের পরমাণু প্রকল্পের সামরিক আকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে নতুন ও বিশ্বাসযোগ্য তথ্য রয়েছে কি না, তা বিবেচনার জন্য আরো সময় প্রয়োজন।
অনেক পশ্চিমা বিশ্লেষক মনে করেন, আর এক বছরের মধ্যেই পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবে ইরান। সূত্র : এএফপি, দ্য টেলিগ্রাফ, বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.