হার আর ক্লান্তি নিয়ে শুরু...

ছেলেদের ক্রিকেটে যখন ঈদের ছুটির আমেজ, মুশফিকরা সময় কাটাচ্ছেন পরিবারের সঙ্গে। মহিলা ক্রিকেটে তখন তুমুল ব্যস্ততা। বিশ্বকাপ বাছাই ক্রিকেটের স্বাগতিক বাংলাদেশ। ১০ দলের এ মহাআয়োজন প্রতিদিন নতুন নতুন দল আসছে ঢাকায়। শ্রীলংকা একটু আগেই এসে পড়েছে, এখন আমেরিকার মেয়েরাও ব্যাট-বল নিয়ে মিরপুরে হাজির। আজ দলবল নিয়ে আসছে আয়ারল্যান্ড। এদের প্রত্যেকেই আসছে বুকে বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন নিয়ে। ২০১৩-তে ভারতে যে বিশ্বকাপ হবে সে আসরের টিকিট পেতে হলে প্রথম চারে থাকতে হবে।


আর প্রথম ছয়ের মধ্যে থাকতে পারলে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাবে বাংলাদেশ। এমন একটা মাইলফলকের সামনে দাঁড়িয়ে ঘরের মেয়েরাও প্রায় তিন মাস আগে থেকেই মাঠে নেমেছেন। চট্টগ্রামে কন্ডিশনিং ক্যাম্প থেকে শুরু, এরপর মিরপুর, বিকেএসপি সব চষে ফেলেছেন সালমারা। ম্যাচ প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা দূর করে গত মাসেই দলটি ভারত এবং শ্রীলংকা সফর করেছে; কিন্তু এমন দৌড়াতে দৌড়াতেই বোধহয় ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন সালমা খাতুনরা। এদিন মিরপুরে লংকান মেয়েদের বিপক্ষে ৬৪ রানে হেরেছে বাংলাদেশি মেয়েরা। শ্রীলংকানদের তোলা ১৯৫ রানের পিছু নিয়ে ১৩১ পর্যন্ত পেঁৗছতে পেরেছে সালমারা। খারাপ লেগেছে এই দেখে যে, লংকান মেয়েদের ২২টা ওয়াইড বল উপহার দিয়েছেন বাংলাদেশি বোলাররা। মোট ৩৫টি অতিরিক্ত রান বিলিয়েছেন মেয়েরা। সেখানে লংকানরা দিয়েছে মাত্র ১১টি অতিরিক্ত রান।
শুধু বোলিংয়ের এই বেহিসাবিয়ানা নয়, ফিল্ডিংয় দুর্বলতাও আশাহত করেছে অনেককে। 'আসলে এতটা খারাপ খেলে না আমাদের মেয়েরা। শ্রীলংকাতেও এর চেয়ে ভালো খেলেছিল সালমারা। আমার কেন জানি মনে হলো, ক্লান্তি এসে পড়েছে ওদের মধ্যে।' বিসিবির উইমেন উইং চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল ফুহাদ রেদোয়ান বলছেন ক্লান্তির কথা। কোচ মমতা মাবেন অবশ্য ক্লান্তি নয় মেয়েদের সামর্থ্য নিয়েও আশাহত। 'একটু এভাবে ভেবে দেখুন, আমাদের এ দলটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও শিশু; কিন্তু আমাদের এখন পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো টেস্ট ক্রিকেটে স্বীকৃত দলের বিপক্ষে খেলতে হবে। বিশ্বকাপ বাছাই নিয়ে নিশ্চয়তা দেওয়ার মতো কোনো অবস্থা তৈরি হয়নি। আমরা শুধু এটুকু বলতে পারি , অনেক ভালো প্রস্তুতি হয়েছে আমাদের। প্রতিটি ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে চাচ্ছি আমরা। '
কোচ মমতা মাবেন মেয়েদের ফিল্ডিং দুর্বলতা নিয়ে এতটাই চিন্তিত যে, বিসিবি সভাপতির কাছে এ আসরের জন্য মুশফিকদের ফিল্ডিং কোচ জেসন সুইফটকে চেয়েছেন। বিশ্বকাপের টিকিট পেতে হলে গ্রুপের সেরা দুই দলের মধ্যে থাকতে হবে সালমাদের। তবে গ্রুপে থাকা জাপান, পাকিস্তান, আয়ারল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যে যে কোনো দুটি দলকে হারাতে পারলে অন্তত ওয়ানডে মর্যাদা আদায় করবেন সালমারা। ১৪ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ আসরে বাংলাদেশ প্রথম লক্ষ্যই ধরেছে জাপান এবং পাকিস্তানকে। শুরু থেকেই এমন লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন সালমা। কিন্তু গতকাল শ্রীলংকার সঙ্গে সালমাদের ম্যাচ দেখার পর অনেকেই সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের বাস্তবতা নিয়ে ভাবছেন। যেখানে ওপেনার সাথিরা জাকির জেসিকে ১ রান নিতেই অস্বস্তিতে ভুগতে দেখা যায়, যেখানে আয়েশা আকতার ১৫ রানের বেশি যেতে পারেন না, রুমানা আহমেদ ১১ বলের বেশি দাঁড়াতে পারেন না, ফারাজানা হক ১০ রানে আউট হন, সেখানে অধিনায়ক সালমা খাতুনই ছিলেন ভরসা। এশিয়ান গেমসে এ সালমা নিজ হাতেই দলকে জয় পাইয়ে দিয়েছিলেন, এদিনও তিনিই সবার চেয়ে বেশি ৩৪ রান করেন। স্কোর কার্ড বলছে ৮৯ টি বল খেলেছেন তিনি, কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তিনি ওই ৯৬ মিনিট ক্রিজে না থাকলে একশ'র নিচেই গুটিয়ে যেত বাংলাদেশ। লোয়ার অর্ডারে লতা মণ্ডলের ২৭, পান্নার ১৫ রানও ছিল দলের নির্ভরতার প্রতীক হিসেবে। হাঁকডাকে সালমা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে থাকলেও দলে তিনিই অন্যতম কর্মক্ষম ক্রিকেটার। আর সবাই যখন ক্লান্ত হয়ে পড়েন তখন তিনিই দাঁড়িয়ে থাকেন অবিচল হয়ে।

No comments

Powered by Blogger.