চট্টগ্রামের আগেই বিএনপির খুলনা রোডমার্চ by মোশাররফ বাবলু

দের আমেজ এখনো বইছে। আগামী সপ্তাহে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম জোরেশোরে শুরু হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি নিয়ে আন্দোলনের মাঠ উত্তপ্ত করবে বিএনপি। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলের সাংগঠনিক কয়েকটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াও আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি প্রণয়ন করা হবে। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়ার পাশাপাশি খুলনা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন বিভাগে রোডমার্চ এবং বৃহত্তর জেলায় জনসভার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করবেন নীতিনির্ধারকরা। চট্টগ্রামে রোডমার্চ জানুয়ারিতে।


তাই চট্টগ্রামের আগে খুলনা বিভাগ অভিমুখে রোডমার্চ করতে চান তাঁরা। স্থানীয় বিএনপি নেতারা খুলনায় রোডমার্চের সম্ভাব্য তারিখ ২৭, ২৮ ও ২৯ নভেম্বর ঘোষণা করেছেন। কেন্দ্রের এক সিনিয়র নেতা বলেন, সম্ভাব্য তারিখের কথা শোনা গেলেও খুলনার রোডমার্চের চুড়ান্ত দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। তবে চট্টগ্রামের আগে তা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ওই নেতা আরো জানান, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দিনক্ষণ ঠিক হতে
পারে। তবে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার পর দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হবে।
জানা গেছে, দেশের সব কয়টি বিভাগে রোডমার্চ করার পর ঢাকায় মহাসমাবেশ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে রাজপথ উত্তপ্ত করার পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করার নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। এরই মধ্যে সিলেট ও রাজশাহী বিভাগে রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে সরকারকে আরো সময় দিয়ে বিএনপি আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। রোডমার্চ করার মধ্য দিয়ে সারা দেশের জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে চায় দলটি। শেষ পর্যন্ত দাবি মেনে না নিলে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামবে তারা। এসব বিষয়ে ঈদের পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে দলের একাধিক নেতা জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে আমাদের আন্দোলন অব্যাহত আছে। ঈদের আমেজ কেটে গেলেই আমরা আলোচনায় বসব। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরবর্তী করণীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। দাবি মেনে না নিলে শেষ পর্যন্ত সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের দিকে যেতে হবে। আশা করি, সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় হবে, দেশের ক্ষতি না করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি মেনে নিয়ে নির্বাচন দেবে।'
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত এই দাবিতে আন্দোলন চলবে।' তিনি বলেন, 'ঈদকে কেন্দ্র করে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আমাদের দেখা-সাক্ষাৎ হয়েছে। সেখানেও আমরা আন্দোলনের ব্যাপারে আলোচনা করেছি।'
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, 'এক দফা এক দাবি তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে কবে যাবি'_এটাই হবে আন্দোলনের মূল স্লোগান। তিনি বলেন, 'সারা দেশকে রোডমার্চের আওতায় এনে আমরা জনগণকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই। বেহাল রাস্তাঘাট, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারিসহ বিভিন্ন ইস্যু তুলে ধরে আমরা জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করব। পাশাপাশি সাংগঠনিকভাবেও দল গুছিয়ে নিয়ে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামব।'
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে জানান, দুই বিভাগে রোডমার্চ হয়েছে। ব্যাপক সাড়া পেয়েছি আমরা। রোডমার্চ ও জনসভায় ঘর থেকে মানুষ বের হয়ে এসেছে। আগামীতে চট্টগ্রাম, বরিশালসহ সব বিভাগেই রোডমার্চ হওয়ার কথা রয়েছে।
বিএনপির একটি সূত্রে জানা গেছে, দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কিছুদিনের মধ্যেই ভারমুক্ত করতে পারেন খালেদা জিয়া। ভিন্ন কোনো প্রেক্ষাপট তৈরি না হলে ঈদের পর স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মির্জা ফখরুলকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করার সিদ্ধান্ত হতে পারে।
মির্জা ফখরুল সুইডেন হয়ে লন্ডনে গিয়ে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ঈদের দিন তিনি দেশে ফেরেন। দেশে ফেরার পর রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে গুলশানের বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন তিনি। লন্ডনে চিকিৎসাধীন তারেক রহমান এরই মধ্যে মির্জা ফখরুলকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করার ব্যাপারে চেয়ারপারসনকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়। গত ৬ এপ্রিল খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। আট মাস ধরে তিনি দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

No comments

Powered by Blogger.