খণ্ডিত টিকিটের ফাঁদে ৪০ হাজার হাজি-ফিরতি ফ্লাইট কাল থেকে by মোশতাক আহমদ

জযাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইট আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে। রাত সাড়ে ১১টা ও এরপর ভোর ৫টায় বাংলাদেশ বিমানের দুটি ফ্লাইটে সহস্রাধিক যাত্রীর বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে বিমানের ফিরতি হজ ফ্লাইট। বাংলাদেশ বিমানের প্রথম ফ্লাইটটি হাজিদের নিয়ে বাংলাদেশ সময় আগামীকাল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। তবে সৌদি এয়ারলাইনসসহ অন্য এয়ারলাইনসগুলোর ফিরতি হজ ফ্লাইট শুরু হবে ১২ নভেম্বর থেকে।এদিকে বাংলাদেশ বিমানসহ হজযাত্রীবাহী উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর টিকিট কালোবাজারে বিক্রি ও পৃথক বিমানে আসা-যাওয়ার টিকিট দেওয়ায় এবার কমপক্ষে ৪০ হাজার হজযাত্রী


ভোগান্তিতে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলোর সংগঠন হাব অবশ্য দাবি করেছে সংখ্যাটি ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজারের বেশি হবে না। এক সংস্থার বিমানে পাঠিয়ে আরেক সংস্থার বিমানে আনা-নেওয়ার ব্যবস্থা করায় এ ধরনের টিকিটকে বলা হচ্ছে 'দ্বিখণ্ডিত'।
হাব সভাপতি জামাল উদ্দীন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'হজযাত্রীদের একই এয়ারলাইনসে আসা-যাওয়ার রাউন্ড টিকিট দিতে হয়। কিন্তু ৩০ থেকে ৩৫ হাজার হজযাত্রীকে এবার আসা এবং যাওয়ার টিকিট দুটি ভিন্ন এয়ারলাইনসে দেওয়া হয়েছে। এতে হাজিরা ফেরার পথে হয়রানির শিকার হবেন। তাঁদেরকে বিভিন্ন দেশে ট্রানজিটে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বসে থাকতে হবে। কারণ বাংলাদেশ বিমান ছাড়া অন্য এয়ারলাইনসগুলো ফিরতি হজ ফ্লাইটে তাঁদের নিজ নিজ দেশে কিছু সময়ের জন্য ট্রানজিট করে। আর এ ট্রানজিটেই হাজিদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা অবস্থান করতে হবে। এ কারণে বিশেষ করে বয়স্ক হাজিদের ভোগান্তি বেশি হবে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
দ্বিখণ্ডিত টিকিটকে প্রতারণা বলে উল্লেখ করে হাব সভাপতি বলেন, এর আগে কোনো হজে হাজিরা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হননি। এ বছর কয়েকটি এয়ারলাইনস এ ধরনের টিকিট দিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, 'পূর্ণাঙ্গ টিকিটের জন্যই হজযাত্রীদের কাছ থেকে এক লাখ ১১ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। টিকিটপ্রতি তারা ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করছে।'
এদিকে হাব মহাসচিব এম এ রশিদ শাহ সম্রাট কালের কণ্ঠকে বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস এবার নির্ধারিত ডলারের বিনিময়মূল্য ৭২ টাকার পরিবর্তে ৭৪ টাকায় বর্ধিত করায় প্রতি হজযাত্রীকে প্রায় তিন হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হয়েছে। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি ডলারের অতিরিক্ত গৃহীত দুই টাকা হারে হাবকে ফেরত দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এবার হজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগে ৪৬টি এজেন্সিকে সৌদি সরকার কালোতালিকাভুক্ত করে। এসব এজেন্সির মাধ্যমে হজে যাওয়ার টাকা দিয়ে ১৫ হাজার হজযাত্রীকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে কাটাতে হয়। শেষ পর্যন্ত দুটি ছাড়া সবাইকে ছাড়পত্র দেওয়া হলেও দুটি এজেন্সির ছয় শতাধিক মুসলি্লর হজ পালন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা ছিল। সর্বশেষ তাঁদেরকে অন্য দুটি এজেন্সির মাধ্যমে হজে পাঠানোর ব্যবস্থা করে সরকার।
জানা যায়, মূলত বিমানভাড়া বৃদ্ধি করার কারণেই এবার হজ প্যাকেজ মূল্য বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ বিমান নিয়মিত ভাড়া ৭০০ ডলারের স্থলে প্যাকেজের নামে ১৪৬৫ ডলার ধার্য করে দেয় হজযাত্রীদের। আগের বছর যা ১৩৫০ ডলার ছিল। এ ভাড়া আশপাশের যেকোনো দেশের তুলনায় অনেক বেশি। হজের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের কথা বলে এই বর্ধিত ভাড়া আদায় করা হয়। কিন্তু বিমান এবার হজ পরিবহনের বেশির ভাগই থার্ড ক্যারিয়ারকে দিয়ে দেয়। থার্ড ক্যারিয়ার তাদের শিডিউল ফ্লাইটে হজযাত্রীদের পরিবহন করলেও ভাড়া আদায় করে বিমান নির্ধারিত হারেই।
টিকিট কালোবাজারি, দ্বিখণ্ডিত টিকিটসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে কিছু এয়ারলাইনসের কর্মকর্তা ও কিছুসংখ্যক হজ এজেন্সি জড়িত বলে বেসরকারি এজেন্সিগুলো দাবি করেছে। এসব অনিয়মের কারণে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা বিদেশিদের হাতে চলে গেছে বলেও হাব নেতারা দাবি করেন।

No comments

Powered by Blogger.