অর্থ সঙ্কটে হুমকিতে এডিপিগত অর্থবছরে এক টাকাও ব্যয় হয়নি ৬৪ প্রকল্পে

র্থ সঙ্কটের কারণে চলতি অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপির) বাস্তবায়ন নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। সহস্রাধিক উন্নয়ন পরিকল্পনা থাকলেও সে তুলনায় অর্থ বরাদ্দ দিতে পারছে না অর্থ মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পেলেও অর্থ ব্যয় করতে পারছে না অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। গত অর্থবছরে ৬৪টি প্রকল্পের বরাদ্দপ্রাপ্ত অর্থ থেকে এক টাকাও ব্যয় করতে পারেনি বাস্তবায়নকারী সংস্থা। এসব প্রকল্পের বরাদ্দ ৩৭৬ কোটি টাকা অর্থ মন্ত্রণালয়ে ফেরত গেছে।


সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। যথাযথ যাচাই-বাছাই না করে বরাদ্দ দেয়ায় মন্ত্রণালয়গুলো অর্থ ব্যয় করতে পারেনি বলে আইএমইডি কর্মকর্তারা জানান। আবার সঠিক কর্মপরিকল্পনা না থাকায় অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পেও অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে অবাস্তবায়িত অবস্থায় এসব প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। ফলে এসব প্রকল্প কবে শেষ হবে, তা বলতে পারছেন না পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
পরিকল্পনা কমিশন জানায়, প্রকল্প পরিচালকদের আন্তরিকতা ও দক্ষতার অভাব, ভূমি অধিগ্রহণে জটিলতা, দুর্নীতিসহ নানা কারণে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ ব্যয় করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে প্রতিবছর এসব প্রকল্পের বিপুল পরিমাণ অর্থ ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এসব প্রকল্পের কারণে এডিপির অন্যান্য প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) থেকে এ ধরনের প্রকল্প বাদ দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে পরিকল্পনা কমিশন।
শূন্যব্যয়ের এসব প্রকল্পের বেশিরভাগ অর্থ প্রকল্প সহায়তা হিসাবে বৈদেশিক উত্স থেকে পাওয়ার কথা ছিল বলে আইএমইডি জানিয়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে ৬৪ প্রকল্পের ৩৭৬ কোটি টাকার মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা ছিল ২৮০ কোটি টাকা। আর সরকারি তহবিল থেকে বরাদ্দ ছিল ৯৫ কোটি টাকা। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ ব্যয়ের পরিবর্তে ফেরত গেছে। ৬৪ প্রকল্পের মধ্যে বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প রয়েছে ২১টি। এগুলোর বেশিরভাগের মেয়াদকাল প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ কারণে প্রকল্পগুলো সময়মত শেষ করা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হলে মেয়াদকাল বাড়াতে হবে, বাড়াতে হবে বাস্তবায়ন ব্যয়।
পর্যাপ্ত যাচাই-বাছাই না করে প্রকল্প অনুমোদন দেয়ায় অর্থ বরাদ্দ সম্ভব হয় না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে বাস্তবায়নের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এডিপিতে অনেক প্রকল্প নেয়া হয়। এ কারণে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পাওয়ার পরও এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন হয় না। ফলে বছরের পর বছর এসব প্রকল্প ঝুলে থাকে। আবার চালু প্রকল্প হিসাবে দেখানোর জন্য এসব প্রকল্পে কিছু অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। এডিপির আকার বাড়ানো ছাড়া এসব প্রকল্পের কোনো ভূমিকা থাকে না।
জানা যায়, গত অর্থবছর ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। কিন্তু বছরের শুরুতেই এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি পরিলক্ষিত হয়। অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে এডিপির বাস্তবায়ন হয় মাত্র ৩২ ভাগ। দুর্নীতির কারণে বৈদেশিক সাহায্য ছাড়ে অনিশ্চয়তা ও প্রকল্প জটে ফলে ফেব্রুয়ারি মাসে এডিপির ৩ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা কমিয়ে আরএডিপি ঘোষণা করা হয় ৩৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। বছর শেষে এর আকার দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা। তবে বছর শেষে এডিপি খাতে ৩২ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা ব্যয় করতে পেরেছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো।
এদিকে অর্থ সঙ্কটের কারণে চলতি অর্থবছরেও শত ভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হুমকির সম্মুখীন। গত অর্থবছরে শেষ না হওয়া ৯৬২টি এবং নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ৭৭টি প্রকল্পসহ চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৩৯ প্রকল্প চালু রাখতে চলতি অর্থবছরের ৬৯ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। অথচ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) চলতি অর্থবছরে মাত্র ৪৬ হাজার কোটি টাকার এডিপি নির্ধারণ করেছে। ফলে অর্থবছরের শুরুতেই এডপি বাস্তবায়নে ২৪ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা ঘাটতি রয়েছে।
সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের এডিপি বই প্রকাশের পর থেকে গত ২৭ জুন মাসের শেষ পর্যন্ত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশকৃত ২৫১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে মোট ১৫ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। পরিকল্পনা কমিশনের পর্যালোচনা থেকে জানা গেছে, গত অর্থবছরের ধারাবাহিকতায় এডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে চলতি অর্থবছরের মোট অতিরিক্ত ঘাটতি দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। এ বিশাল ঘাটতি মোকাবিলায় গত অর্থবছরে প্রত্যাশিত ব্যয় করতে না পারা প্রকল্পগুলো এডিপি থেকে বাদ দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে পরিকল্পনা কমিশন।

No comments

Powered by Blogger.