ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময় : না’গঞ্জে প্রমাণ হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হয় না - খালেদা জিয়া

বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাওয়ার পরও নিজের সমর্থিত প্রার্থীকে জেতাতে সেনা মোতায়েন করেনি সরকার। এতে সংবিধান লঙ্ঘন করেছে সরকার। এ কারণে শেষ মুহূর্তে আমাদের সমর্থিত প্রার্থী ভোট থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন। সেখানে একদলীয় নির্বাচন হয়েছে। এতে প্রমাণ হয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন নিরপেক্ষ হয় না।সোমবার দুপুরে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এখনও সময় আছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা নিন। সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করুন।


রাজধানীর ইস্কাটন গার্ডেন লেডিস ক্লাবে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দলের নেতাকর্মী এবং বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন বিরোধীদলীয় নেতা। এরপর তিনি শেরেবাংলা নগরে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা জানান।
সরকারের দুর্নীতি ও অপশাসনে দেশ ‘স্থবির’ হয়ে গেছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, দেশের মানুষ দুঃখ-কষ্ট আর বেদনার মধ্য দিয়ে এবারের ঈদ উদযাপন করছে। আর জনগণ খারাপ থাকলে তারও ভালো থাকার কথা নয়।
লেডিস ক্লাবে শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দেশের মানুষ দুঃখ-কষ্ট আর বেদনার মধ্যে এবারের ঈদ উদযাপন করছেন। মানুষ দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারে না। তাদের কাছে ঈদের আনন্দ নেই। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি চাঁদাবাজি ও দুর্নীতিতে দেশ ছেয়ে গেছে। এজন্য মানুষের মনে এই ঈদের দিনেও শান্তি নেই।
বিরোধীদলীয় নেতা অভিযোগ করেন, বেহাল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে ঈদে ঘরমুখী মানুষ এবার চরম দুর্ভোগে পড়েছে। বাড়ি পৌঁছতে দীর্ঘ সময় লেগেছে তাদের।
দুই ছেলে ও পরিবারের সদস্যদের ছাড়া কেমন আছেন জানতে চাইলে খালেদা জিয়া বলেন, মোটামুটি। এখন আমি জনগণকে নিয়ে আছি। জনগণ খারাপ থাকলে আমারও ভালো থাকার কথা নয়।
বিদেশে ‘চিকিত্সাধীন’ দুই ছেলের সঙ্গে ঈদের আগের দিন রোববার কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের ওখানে গতকালই ঈদ হয়ে গেছে। আমার কথা হয়েছে। তাদের চিকিত্সা চলছে। আগের তুলনায় তাদের অবস্থা ভালো। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে আরও সময় লাগবে।
খালেদা জিয়ার দুই ছেলের মধ্যে তারেক রহমান লন্ডন এবং আরাফাত রহমান কোকো মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শেষ দিকে জামিনে মুক্তি পেয়ে তারেক এবং প্যারোলে মুক্তি নিয়ে কোকো চিকিত্সার জন্য বিদেশে যান।
বর্তমান সরকারের অধীনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন ‘খারাপ’ হচ্ছে উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সবসময় বলেন, সর্বকালের ভালো আইনশৃঙ্খলা দেশে বিরাজমান। তিনি এরকম কথা বলে আত্মতৃপ্তি পান। কিন্তু বাস্তবে হত্যা, গুপ্তহত্যা, খুন বাড়ছেই। জনগণের এখন কোনো নিরাপত্তা নেই।
৭ নভেম্বরকে ‘সিপাহী-জনতার বিপ্লবের দিন’ অভিহিত করে খালেদা জিয়া বলেন, ঈদের পাশাপাশি এটাও আমাদের জাতীয় জীবনে একটি খুশির দিন। এ দিনেই সৈনিক ও জনগণ এক হয়ে দেশ রক্ষা করেছিল। যেভাবে একাত্তরে তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। দেশবাসীকে ৭ নভেম্বরের শুভেচ্ছাও জানান খালেদা জিয়া।
নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পর জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল কবীর খোকনকে গ্রেফতারের কথা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, মিথ্যা মামলায় খায়রুল কবীর খোকনকে আটক করে রেখেছে। খোকন সম্পূর্ণ নির্দোষ।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত লেডিস ক্লাবে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন খালেদা জিয়া। প্রথমে তিনি বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত শাহের মোহাম্মদ, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ড. আবদুল্লাহ বিন নাসের আল বুসাইরি, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন।
এ সময় দলের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আর এ গণি, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার এমপি, এম কে আনোয়ার এমপি, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সহ-সভাপতি শমসের মবিন চৌধুরী প্রমুখ।
কূটনীতিকদের পর্ব শেষে বিশিষ্ট নাগরিক, দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ঢল নামে লেডিস ক্লাবে। তারা সারিবদ্ধভাবে বিরোধীদলীয় নেতার সঙ্গে শুভেচ্ছ বিনিময় করেন।
বিএনপির সহ-সভাপতি রাজিয়া ফয়েজ, সেলিমা রহমান, উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইনাম আহমেদ চৌধুরী, সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আবদুল হালিম ও জহুরুল ইসলামও চেয়ারপার্সনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, অধ্যাপক মনিরুজ্জামান মিঞা, অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুবউল্লাহ, অধ্যাপক সদরুল আমিন, অধ্যাপক ইউসুফ হায়দার, এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ, সাবেক সভাপতি আনিসুল হক, বিজেএমইএ সভাপতি সফিউল ইসলাম (মহিউদ্দিন), সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক, বিশিষ্ট সাংবাদিক শফিক রেহমান, মাহফুজ উল্লাহ, আবু সালেহ, মাহমুদ শফিক, আবদুল হাই শিকদার, শিল্পী শবনম মুস্তারীসহ সাবেক সচিব, আইনজীবী, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ, চিকিত্সক নেতারাও বিএনপি চেয়ারপার্সনের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
এছাড়া কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুর রাজ্জাক, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি শফিউল আলম প্রধান খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
তৈমূরের শুভেচ্ছা বিনিময় : বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সঙ্গে ঈদের দিন শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন দলীয় সিদ্ধান্তে শেষ মুহূর্তে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার। দলীয় নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের সময় ইস্কাটনে লেডিস ক্লাবে তৈমূর আলমও যান। এ সময় তার সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির নেতারা ছিলেন।
তৈমুর লেডিস ক্লাব থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ম্যাডাম (খালেদা) আমাকে বলেছেন, তুমি দলের জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করেছ, তা আমি দেখব। তোমার আত্মত্যাগের কথা আমি জানি। দলের প্রয়োজনে নির্বাচন থেকে তোমাকে সরে আসতে হয়েছে। চিন্তা করিও না। আমিও ম্যাডামকে বলেছি, আমি কখনও আপনার অবাধ্য হইনি। ভবিষ্যতেও হব না।
নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনের পর ঈদের দিনই প্রথম খালেদার সঙ্গে দেখা করলেন তৈমূর। তার সঙ্গে ছিলেন জেলা বিএনপির নেতা এটিএম কামাল, রুহুল আমিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আবদুল মালেক, শ্রমিক দলের রবি মেম্বার প্রমুখ।
গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির সমর্থনে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। তবে ভোট গ্রহণের সাড়ে ৭ ঘণ্টা আগে বিএনপি ভোট বর্জনের ঘোষণা দিলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান তৈমূর।

No comments

Powered by Blogger.