বিভিন্ন স্থানে সড়ক দুর্ঘটনা-কোরবানির মাংসের পরিবর্তে এল লাশ

রিবারের অন্য সদস্যরা আশায় ছিল কোরবানির গরু জবাই করে মাংস নিয়ে ঘরে ফিরবেন গৃহকর্তা। তাদের সে আশা পূরণ হলো না। একটি সড়ক দুর্ঘটনা শেষ করে দিল সব কিছু। কোরবানির মাংসের পরিবর্তে নিজেই লাশ হয়ে ফিরলেন বরিশাল নগরীর রূপাতলী গাউছিয়া সড়কের বাসিন্দা আমির হোসেন (৬০)। ঈদের দিন সোমবার সকালে ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার বলাইখালী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন তাঁর দুই ছেলে তানজিল মোর্শেদ (৩০) ও প্রিন্স মাহমুদ (২৮)। তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় বরিশাল শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার পর ঘাতক বাসটি আটক করা হয়েছে। চালক পালিয়ে গেছে।


রাজাপুর থানার ওসির দায়িত্বে থাকা এসআই হালিম তালুকদার জানান, গ্রামের বাড়িতে কোরবানি দেওয়ার জন্য দুই ছেলেকে নিয়ে সকালে মোটরসাইকেল যোগে রাজাপুর উপজেলার গালুয়া এলাকার উদ্দেশে রওনা হন রাজাপুরের আন্তাজ উদ্দিনের ছেলে আমির হোসেন (৬০)। পথিমধ্যে ঝালকাঠি-পিরোজপুর সড়কের রাজাপুর উপজেলার বলাইখালী এলাকায় পেঁৗছলে বিপরীত দিক থেকে আসা বরিশাল নগরীর সিটি সার্ভিসের একটি বাস তাঁদের মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনই আহত হন। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি (তদন্ত) এ কে এম মতিয়ার রহমান জানান, হাসপাতালে আনার পর আমির হোসেনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। আমিরের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এদিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের রহমতপুর রামপট্টি এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় এক ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় জনতা সড়ক অবরোধ করে একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং পুলিশের টহল গাড়িসহ বেশ কিছু যানবাহনে ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
মহানগরীর বিমানবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাখাওয়াত হোসেন বলেন, মঙ্গলবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে অজ্ঞাত একটি পরিবহন রামপট্টি এলাকায় সড়কের পাশে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা চালক শহিদুল ইসলাম ফারুককে (২৫) চাপা দিয়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ফারুক মারা যায়। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষিপ্ত হয়ে সড়ক অবরোধ করে এস আলম পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বিভিন্ন যানবাহনে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ এই সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে ঘটনাস্থলে গেলে জনতা তাদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে দুই পুলিশ রক্তাক্ত জখমসহ পাঁচ পুলিশ আহত হয়। জনতার সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় ৩৫ মিনিট পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
অন্যদিকে রংপুরে ঈদের আগে ও পরে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুজন নিহত ও ৪০ জন আহত হয়েছে।
রংপুরে পৃথক দুই সড়ক দুর্ঘটনায় দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন মিঠাপুকুর উপজেলার বলদিপুকুরের কৃষক ইস্রাফিল মিয়া (৪৮) এবং নগরীর মডার্ন মোড় এলাকার ভিক্ষুক আবদুস সামাদ (৬৮)।
রংপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ঈদের আগের দিন রবিবার রাতে বলদিপুকুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় মালবাহী একটি ট্রাক ইস্রাফিল মিয়াকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ঈদের দিন সকালে নগরীর মডার্ন মোড়ে অপর একটি যাত্রীবাহী বাস ভিক্ষুক আবদুস সামাদকে চাপা দিলে তিনিও ঘটনাস্থলে মারা যান। দুটি গাড়িই দুর্ঘটনার পর পালিয়ে যায়। এ ছাড়া ঈদের আগের রাতে রংপুরের পীরগাছার কালিগঞ্জ রেলক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে প্রায় ৪০ জন গার্মেন্টশ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে বাসের চালক ফয়সাল ও সুপারভাইজার হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। ঈদের আগের দিন রবিবার সকাল ৬টায় এ ঘটনা ঘটে বলে জানায় পুলিশ।
পীরগাছা থানার ওসি (তদন্ত) সিদ্দিকুর রহমান জানান, ঈদের আগের দিন রবিবার সকালে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন গার্মেন্টের ৫০ জন শ্রমিক দুলদুল পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা মেট্রো-ব-১১-৩০৬৫) রিজার্ভ করে রংপুরের গীরগাছার বিভিন্ন গ্রামে ঈদের ছুটি কাটাতে ফিরছিলেন। এক পর্যায়ে বাসচালক অসতর্কভাবে রংপুরের পীরগাছার কালিগঞ্জ রেলক্রসিং অতিক্রম করতে গেলে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা রংপুর এঙ্প্রেস ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে বাসটি ডিগবাজি খেয়ে পার্শ্ববর্তী খাদে পড়ে যায়। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে বাসচালক ফয়সাল ও সুপারভাইজার হোসেনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক। এ ঘটনায় পীরগাছা থানায় একটি মামলা হয়েছে।
ময়মনসিংহে টেম্পো বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ২, আহত ১০
ঈশ্বরগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, গত মঙ্গলবার দুপুরে ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথের পূর্বধলা আনসার ক্যাম্পের কাছে ট্রেনের ধাক্কায় যাত্রীবাহী টেম্পো বিধ্বস্ত হয়ে ঘটনাস্থলে দুজন নিহত ও ১০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দার সাধুপাড়া এলাকার ১২ জন যাত্রী নিয়ে একটি টেম্পো পূর্বধলার নাদেরকোনা যাওয়ার পথে ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথের জারিয়া রেলস্টেশন সংলগ্ন আনসার ক্যাম্পের কাছে রেলক্রসিংয়ের ওপর বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ময়মনসিংহ থেকে জারিয়ার দ্রুতগামী ট্রেনটি টেম্পোটিকে ধাক্কা দিলে সেটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে আবদুল কুদ্দুছ (৪৫) ও লুবার (২) মৃত্যু হয় এবং টেম্পোর অন্য যাত্রীরা গুরুতর আহত হন। আহতদের মধ্যে মুমূর্ষু অবস্থায় আটজনকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নরসিংদীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মা ও সন্তানের মৃত্যু
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, গতকাল বুধবার বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী সদর উপজেলার বাগহাটা নামক স্থানে একটি যাত্রীবাহী বাস সিএনজি অটোরিকশাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে মা ও সন্তানের মৃত্যু হয়। এতে আরো এক ব্যক্তি আহত হন। নিহতরা হলো শিবপুর উপজেলার সৈয়দনগর এলাকার সীমা আক্তার (৩০) ও তার দেড় বছর বয়সের ছেলে শরীফ মিয়া।
পুলিশ জানায়, সীমা আক্তার সন্তানকে নিয়ে সৈয়দনগর থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে টঙ্গী যাচ্ছিলেন। অটোরিকশাটি বাগহাটা নামক স্থানে পেঁৗছলে ঢাকা থেকে ভৈরবগামী একটি যাত্রীবাহী বাস চাপা দেয়। এতে অটোরিকশাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যাত্রীবাহী বাসটি পালিয়ে যায়।
আশপাশের লোকজন দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশা থেকে তিনজনকে উদ্ধার করে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক সীমা আক্তার ও তারছেলে শরীফ মিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় গুরুতর আহত চালককে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন দুর্ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা থেকে ভৈরবগামী অজ্ঞাত যাত্রীবাহী বাসের চাপায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে মা ও ছেলের মৃত্যু হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.