ঢাকায় গরুর আকালের নেপথ্যে

রাজধানীর কোরবানির হাটগুলোতে এবার আকস্মিকভাবেই দেখা দিয়েছিল তীব্র পশু সংকট। শুরুতে রাজধানীতে বিপুলসংখ্যক গরু আমদানি হলেও ঈদের আগের দিন সকালেই হাটগুলো প্রায় শূন্য হয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে দামও বেড়ে যায়। বড় আকৃতির কিছু গরুর দেখা মিললেও মাঝারি আকারের গরুর দেখা পাওয়া ছিল মুশকিল। ফলে অনেকে পশু কিনতে না পেরে ফিরে যান। অনেকে বাধ্য হয়ে খাসি কিনে নেন কোরবানির জন্য।একাধিক পশু ব্যবসায়ী ও ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের তিন দিন আগে থেকে রাজধানীতে অস্থায়ী পশুহাট বসার কথা থাকলেও এবার আগেভাগেই হাটগুলো জমে ওঠে। প্রতিটি হাটে আমদানি হয় বিপুলসংখ্যক পশু।


ফলে শুরুতে দাম ছিল অনেকটাই কম। সেই সুযোগে রাজধানীর বাইরের অনেক ব্যবসায়ী রাজধানীর হাটগুলো থেকে পাইকারি দরে পশু কিনে অন্যত্র নিয়ে যান।
অন্যদিকে হাটগুলোতে পশুর দাম পড়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ীরা আর নতুন করে পশু আমদানি করা থেকে বিরত থাকেন। বিপরীতে গত শুক্র ও শনিবার_এ দুই দিন হাটগুলোতে আকস্মিকভাবে ব্যাপক ক্রেতাসমাগম ঘটে। দুই দিনের মধ্যেই বিপুলসংখ্যক পশু বিক্রি হয়ে যায়। ঈদের আগের দিন সকালেই হাটগুলো পশুশূন্য হয়ে পড়ে। রাজধানীর কয়েকটি হাটে গিয়ে দেখা যায় বাঁশের খাঁচা করা হাটগুলো খাখা করছে। কিছু বড় আকারের গরু থাকলেও ক্রেতাদের আগ্রহ ছিল মাঝারি আকারের গরুর দিকে। ফলে মাঝারি আকারের পশুর দাম বেড়ে যায়। ব্যাপারিরা দ্রুত পশু আমদানির প্রস্তুতি নিলেও মহাসড়কগুলোতে তীব্র যানজটের কারণে তাঁরাও আর নতুন করে আমদানি করার সাহস দেখাননি। দু-একজন ব্যাপারি পশু আমদানির চেষ্টা করলেও পশুগুলো সময়মতো হাটে এসে পেঁৗছতে পারেনি। সব মিলিয়ে ঈদের আগের দিন রাজধানীর প্রায় সব হাটই ছিল পশুশূন্য।
ক্রেতারা জানান, যে আকৃতির গরু গতবার ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে, এবার পশু সংকটের কারণে সেগুলোর দাম প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। আবার গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় অনেকে খাসি কেনার দিকে ঝুঁকলে সেগুলোর দামও বেড়ে যায়।
গরুর ব্যবসায়ীরা জানান, শেষ দিকে পশু সংকট শুরু হলেও হাতে সময় না থাকায় অনেক ব্যবসায়ী নতুন করে পশু আমদানির ঝুঁকি নেননি। কারণ ওই পশু পেঁৗছতে পেঁৗছতে ঈদই শেষ হয়ে যাবে।
গাবতলী হাটের একজন ব্যবসায়ী বলেন, বেশির ভাগ পশু আসে দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে। এ ছাড়া ভারতীয় গরুও এ হাটে প্রচুর আসে। সাধারণ সময়েই উত্তরাঞ্চল থেকে পশুবাহী একটি ট্রাক ঢাকায় পেঁৗছতে লেগে যায় ১৪ ঘণ্টা। ঈদের আগে সড়কগুলোতে তীব্র জট লেগে থাকায় ট্রাক আসতে সময় লেগে যায় দুই দিন। এ ছাড়া ঈদের আগে আশুলিয়ায় গার্মেন্টকর্মীদের সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে ব্যবসায়ীরা চুপসে যান। তাঁরা আর নতুন করে পশু আমদানি করেননি। এসব কারণে এবার অনেকেরই কোরবানি দেওয়া হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.