ইসির অবস্থান বদল-কুমিল্লা সিটির নির্বাচন ৫ জানুয়ারির মধ্যেই

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অবস্থান বদল হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সাফল্যের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে নিয়ে বর্তমান নির্বাচন কমিশনাররা বিদায় নিতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত তা হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কুমিল্লার নির্বাচন দ্রুত অনুষ্ঠানের পথ সুগম করে দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার অথবা আগামী সপ্তাহে প্রকাশিত হচ্ছে এ সিটির সীমানা নির্ধারণী গেজেট। এ অবস্থায় বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের মেয়াদের মধ্যেই আগামী ৫ জানুয়ারির আগে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু করেছে।


এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল বুধবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আজ (বুধবার) খবর পেয়েছি, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণী গেজেট কয়েক দিনের মধ্যেই প্রকাশ হতে যাচ্ছে। সীমানা নিয়ে দাবি-আপত্তি জানানোর সময়ও শেষ। এ অবস্থায় আমাদের মেয়াদের মধ্যেই নির্ধারিত সময়সীমা অনুসারে এ নির্বাচন সম্পন্ন করে যেতে হবে। না হলে আইনগত সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর আমরা চলে গেলে নতুন নির্বাচন কমিশনের পক্ষে বিষয়টি বুঝতেও বেশ কিছুটা সময় লাগবে। আমরা এ নির্বাচনে সব ভোটকেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করতে চাই এবং কুমিল্লা সিটির নির্বাচনই হবে আমাদের মেয়াদের শেষ নির্বাচন।'
এর আগে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন শেষ হওয়ার পরপর নির্বাচন কমিশনের পক্ষে কুমিল্লা সিটির নির্বাচন না করার পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, পরবর্তী নির্বাচন কমিশন এ সিটির নির্বাচন সম্পন্ন করবে।
গত ১ নভেম্বর এম সাখাওয়াত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে হলে আমাদের ৪৫ দিন সময় হাতে রেখে এ মাসের ২০ বা ২২ তারিখের দিকে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করতে হবে। কিন্তু সরকার এখন পর্যন্ত এ সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করেনি। গেজেট প্রকাশের পরও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বেশ কিছু কাজ করতে হবে। ওয়ার্ডের সীমানা অনুযায়ী ভোটার তালিকা পুনর্বিন্যাস করতে হবে। এ কাজে কত দিন সময় লাগবে, তা বলা যাচ্ছে না। কারণ নারায়ণগঞ্জের তুলনায় কুমিল্লায় এ কাজটি বেশ জটিল হবে বলেই আমাদের ধারণা। নারায়ণগঞ্জে তিনটি পৌরসভাকে একসঙ্গে করে সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়েছিল। ওয়ার্ডগুলোর আগের সীমানায় বহাল রাখা হয়। কিন্তু কুমিল্লায় তা হচ্ছে না। কয়েকটি ইউনিয়র পরিষদের অংশও সিটি করপোরেশনের মধ্যে চলে এসেছে। সীমানা নির্ধারণী গেজেট প্রকাশের পর বিষয়টি নিয়ে যে আইন-আদালত হবে না, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ ছাড়া আমাদের দেশব্যাপী ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজও শুরু করতে হবে। এ বাস্তবতায় সম্ভবত আমরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের নির্বাচন সম্পন্ন করে যেতে পারব না। এ কাজটি আমাদের উত্তরসূরি পরবর্তী নির্বাচন কমিশনারদেরই করতে হবে।'
গত ২ ও ৩ নভেম্বরও এম সাখাওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের কাছে একই মন্তব্য করেন। ৩ নভেম্বর নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, 'নারায়ণগঞ্জে শেষ পর্যন্ত একটি ভালো নির্বাচন করা সম্ভব হয়েছে। এই ভালোর রেশ ধরেই আমরা বিদায় নিতে চাই। এ কারণেই কমিশন কুমিল্লা সিটির নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না।'
কিন্তু স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব (উন্নয়ন) আবদুল মালেক গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত গেজেট মুদ্রণের জন্য আমরা বিজি প্রেসে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন নির্ধারিত সময়ে মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করবে নির্বাচন কমিশন।'
প্রসঙ্গত, বর্তমান নির্বাচন কমিশনারদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে। আর সংশ্লিষ্ট আইন অনুসারে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের শেষ সময় হচ্ছে আগামী ৫ জানুয়ারি। গত ১০ জুলাই এ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়েছে। 'স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯' অনুসারে সিটি করপোরেশন গঠিত হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কমিশনের হাতে এ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য এখনো ৫৫ দিন সময় রয়েছে।
এম সাখাওয়াত হোসেন গতকাল আরো বলেন, 'কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র থাকছে মোট ৫৮টির মতো। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রায় সমসংখ্যক ভোটকেন্দ্রে আমরা ইভিএম ব্যবহার করেছি। ভোটারসংখ্যাও নারায়ণগঞ্জের তুলনায় কুমিল্লায় অনেক কম, এক লাখ ৪০ হাজারের কাছাকাছি। নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে আংশিক ইভিএম ব্যবহারে আমাদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রগুলোতে বিকেল ৪টার আগেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছিল। প্রতিটি ভোট প্রদানে সময় লেগেছে ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ড। ভোট প্রদানের হার ছিল সাধারণ কেন্দ্রগুলোতে ৭০ শতাংশ এবং ইভিএম ব্যবহার করা কেন্দ্রগুলোতে ৭১ শতাংশ। এসব তথ্য প্রমাণ করে, আমরা নারায়ণগঞ্জে ইভিএম ব্যবহারে সফল হয়েছি। কুমিল্লায় আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তাদের ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইভিএমের পরিচিতিমূলক ও প্রশিক্ষণমূলক সিডি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করতে। ভোটকেন্দ্রগুলোর বাইরেও এ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে। আমরা আশা করছি, নারায়ণগঞ্জের চেয়েও কুমিল্লায় ইভিএম ব্যবহার অনেক ভালো হবে। আমরা ভোটকক্ষের সংখ্যাও কমানোর কথা ভাবছি। কারণ ইভিএমের ভোট ধারণক্ষমতা এবং ভোটগ্রহণের প্রচলিত ব্যালটের চেয়ে অনেক বেশি। নারায়ণগঞ্জের মতো কুমিল্লায়ও সিসি টিভি ব্যবহারের ইচ্ছা রয়েছে আমাদের। ইউএনডিপির সাপোর্ট পেলে আমরা এ প্রযুক্তি ব্যবহার করব। নারায়ণগঞ্জে প্রায় বিচ্ছিন্ন তিনটি পৌরসভা মিলিয়ে সিটি করপোরেশন হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিল না। সে তুলনায় কুমিল্লা অনেক কমপ্যাক্ট। যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভালো।' তিনি আরো বলেন, 'কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে যেসব সাম্ভাব্য প্রার্থী এখন থেকে পোস্টার লাগানো শুরু করেছেন, তাঁদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। তাঁদের ছবি ও নাম সংরক্ষণ করা হবে। এনবিআরকে বলা হবে তাঁদের সম্পদ ও আয়ব্যয়ের হিসাব খতিয়ে দেখতে। নির্বাচনী তফসলি ঘোষণার পর প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় পর্যবেক্ষণে রাখার জন্য বিশেষ কমিটি কাজ করবে।'
ঢাকা সিটি করপোরেশন ও সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে : ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'আমাদের মেয়াদে এ সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্ভাবনা নেই। ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুটি সিটি করপোরেশন করার প্রস্তাব মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছে। এ প্রস্তাব সংসদেও পাস হতে হবে। তারপর সীমানা নির্ধারণের কাজ রয়েছে। এসব কাজ আমাদের মেয়াদের মধ্যে শেষ হবে বলে মনে হয় না।' নারায়ণগঞ্জে সেনা মোতায়েন কেন করা হয়নি, তা জানতে চেয়ে আপনারা সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে যে চিঠি দিয়েছেন, তার জবাব কি পেয়েছেন? এর উত্তরে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার আগের দিন ওই চিঠি পাঠানো হয়েছে। আজ (বুধবার ) ছুটির পর অফিস খুলেছে। আশা করছি, এ সপ্তাহে না হলেও আগামী সপ্তাহে জবাব পাব।'

No comments

Powered by Blogger.