ডাক্তারি শিক্ষায় ভরসা রোবট মা! by ইন্টারনেট অবলম্বনে দেবব্রত চক্রর্বতী বিষষ্ণু

ছরের শেষ রাতে তীব্রগতিতে অ্যাম্বুলেন্সটা ছুটে যাচ্ছেল হাসপাতালের দিকে। ভেতরে শুয়ে ইউলিয়া গটস্টি্নশ ভাবছিলেন, আর কয়েকটা ঘণ্টা দেরি করলেই তার সন্তানের জন্ম হতে পারত বছরের প্রথম দিনটায়। আর তার পরিবারের হাতে আসত সাড়ে তের হাজার ডলার! কারণ, ২০০৭ থেকে জার্মানিতে চালু হচ্ছে 'এলটার্নগেল্ড' । অর্থাৎ সন্তানের জন্ম দিলেই বাবা-মায়েদের জন্য আর্থিক সাহায্য, যাকে চলতি ভাষায় বলা হচ্ছে 'পেরেন্ট মানি'।

কিন্তু সরকারিভাবে ইউলিয়া মা হয়েছেন ৩১ ডিসেম্বর ২০০৬। তাই দ্বিতীয় সন্তানের মা হয়েও ফসকে গেল ইউলিয়ার 'পেরেন্ট মানি'! ইউলিয়াদের সংখ্যা কিন্তু আজকাল নেহাত কম নয়। ক্রমর্বধমান জনসংখ্যার চাপে ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর যখন নাভিশ্বাস উঠছে, তখন ইউরোপ-আমেরিকা-দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশকিছু দেশের ছবিটা একদম বিপরীত। জন্মহার দ্রুত কমে আসায় আশঙ্কায় সমাজবিজ্ঞানীরা! এমনকি ওয়াল সি্ট্রট জার্নালও বলছে, বিশ শতকের বৈশিষ্ঠ্য ছিল বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর হার কমে আসা। কিন্তু একুশ শতকের অধিকাংশ দেশেই খুব কমে গেছে জন্মের হার। ইতালি, সেঙ্ন, রাশিয়া, কানাডা, জাপান, উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান... বিশেষ খবর এমন ৭০টি দেশে জন্মহার স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ চীনেও এখন জন্মের হার খুব কম। কিন্তু জনসংখ্যার গ্রাফটা এমন হঠাৎ করে বিপরীতমুখী হয়ে যাওয়ার কারণ কি? মূলত সন্তান পালনের বিপুল খরচ, সময়ের অভাব, ফিগার নষে্টর আশঙ্কা, বিয়ে এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালনে অনীহা, স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলার ভয়_ এগুলোকেই জন্মহার কমার কারণ বলে মনে করছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। চীনে কঠোরভাবে পরিবার-পরিকল্পনা প্রকল্প বহাল থাকায় জন্মহার কমছে। অভিবাসন বিরোধী আইন তথা মনোভাবের কারণে জন্মহার কমে যাচ্ছে ইউরোপের দেশগুলোতে, জাপানেও। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নানা আর্থ-সামাজিক সমস্যা। কর্মঠ মানুষের চেয়ে অবসরপ্রাপ্টেস্নর সংখ্যা বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে স্বাস্থ্যয খাতে খরচ। অন্যদিকে কমে যাচ্ছে আয়কর। বিপুল টাকা খরচ হচ্ছে অবসরকালীন আর্থিক সুবিধায়। অল্পবয়স্কদের সংখ্যা কমে আসায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে নতুন আবিষ্কারের সম্ভাবনা ক্রমেই কমছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় দেখা গেছে সমস্যার নতুন মুখ! শিশু কম জন্মাচ্ছে বলে শিক্ষানবিশ ডাক্তাররা প্রসবের খুঁটিনাটি শিখতে পারছেন না! তাই আমেরিকা থেকে কেনা হয়েছে নোয়েল নামে এক যন্ত্রমানবী। যে যন্ত্র শিশুর জন্ম দিচ্ছে এবং কৃত্রিম প্রসবেই হাত পাকাচ্ছেন ভবিষ্যৎ প্রজনন বিশেষজ্ঞরা। এভাবেই বিশ্বজুড়ে মাতৃত্বে উৎসাহ দিতে লেগে পড়েছে প্রশাসন। একাধিক সন্তান হলেই ফদ্ধান্সে, ইতালিতে মিলছে আর্থিক সাহায্য। এ বছর থেকে জার্মানিতেও চালু হয়ে গেল সে ব্যবস্থা। পিছিয়ে নেই রাশিয়া, জাপানও। দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দেশের নাম অবশ্য এখনো এ তালিকায় ওঠেনি। তবে মোটের ওপর জনসংখ্যা বাড়াতে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য ভেদাভেদ ভুলে এক সূত্রে বাঁধা পড়েছে। সবার মুখেই এক কথা। 'দ্য মোর... দ্য মেরিয়ার!'

No comments

Powered by Blogger.