গ্যাসের চাপ বাড়াতে ভবন মালিকের কারসাজি দায়ী!

কুমিল্লা শহরে চারতলা ভবনের নিচতলায় গ্যাস বিস্ফোরণের নেপথ্য কারণ নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে, অতিরিক্ত গ্যাসের চাপেই এই বিস্ফোরণ হয়েছে। তবে গ্যাসের এত বেশি মাত্রার চাপের নেপথ্য কারণ নিয়েও দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। ঘটনা তদন্তে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ভবনের ভাড়াটে ২০টি পরিবারের গ্যাস সরবরাহ বৃদ্ধি করতে বাড়ির মালিক রাইজারের রেগুলেটর খুলে ফেলায় অতিরিক্ত গ্যাসের চাপে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে।

তবে গতকাল শনিবার সরেজমিনে পরিদর্শনকালে এলাকাবাসী দাবি করে, বিস্ফোরণে ভবনের নিচতলার বিভিন্ন কক্ষ ও আশপাশের দুটি ভবনের দেয়ালগুলো যেভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে তা কোনো ভয়াবহ বিস্ফোরণেরই আলামত। অবশ্য বিস্ফোরণস্থলে বিস্ফোরকের কোনো আলামত খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বাখরাবাদ গ্যাস সিস্টেমস লিমিটেডের এক কর্মকর্তা জানান, গৃহস্থালির চুলায় রাইজারে গ্যাসের চাপ থাকার কথা ২৫ থেকে ৩৫ মিলিবার বা পয়েন্ট টু পাউন্ড। কিন্তু ওই বাসার গ্যাসের লাইনে চাপ পাওয়া গেছে ২ বার বা ৬০ পাউন্ড। এ অবস্থায় একটি গ্যাসের চুলা বিস্ফোরণ হলে গ্যাস ৪০ থেকে ৫০ ফুট ওপরে উঠে যায়। আর এতে আগুন লেগে গেলে তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক শাহাবুদ্দিন মজুমদার জানান, প্রাথমিক তদন্তে এটিকে গ্যাস বিস্ফোরণ বলেই মনে হচ্ছে। সংযোগ লাইনে ত্রুটি ও গ্যাসের চাপ বেশি থাকায় এ বিস্ফোরণ ঘটেছে।
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে দেখা যায়, দেবীদ্বারের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা অসিত রঞ্জন মজুমদারের গ্যাস বিস্ফোরিত ক্ষতিগ্রস্ত চারতলা ভবন থেকে ভাড়াটিয়ারা একে একে সবাই চলে যাচ্ছে। কয়েকজন ভাড়াটিয়া বিস্ফোরণের পর লুটপাটের শিকার হয়েছে বলেও অভিযোগ করে। এদের কয়েকজন জানায়, গ্যাস ব্যবহারে অনিয়মের কারণে ভবনের মালিক কিছুদিন আগে মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা দিয়েছেন।
এ ব্যাপারে অসিত রঞ্জনের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। তা ছাড়া তিনি বাড়ির কাছেও আসেননি।
এদিকে জাতীয় সংসদের হুইপ ও সাংসদ মুজিবুল হক মুজিব গতকাল বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন করেন। জেলা যুবলীগের সভাপতি শাহনুল ইসলাম শাহীন, হুইপের পিএ ও ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির ভাড়াটে সজল দত্তসহ জেলা ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা শহরের তালপুকুর পাড়ের ওই ভবনটিতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বিস্ফোরণে নিচতলার ছয়টি কক্ষ, পাশের দুটি টিনশেড ঘর ও একটি ভবনের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত হয় ১০ জন। ঢাকা মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অপু, শিল্পী ও অর্পিতা দেবনাথের অবস্থা শঙ্কামুক্ত বলে জানা গেছে।
তদন্ত কমিটি গঠন : ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদ মাহবুব খানকে প্রধান করে ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন আদর্শ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা জাহান, একজন সহকারী পুলিশ সুপার, ফায়ার সার্ভিসের একজন অতিরিক্ত পরিচালক ও বাখরাবাদের একজন প্রতিনিধি। আজ থেকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাঈদ মাহবুব খান।

No comments

Powered by Blogger.