নামে ও মানে যথার্থ by পিটার উল্লাস

প্রযুক্তির এই উৎকষরাউর যুগে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন ও সহজতর করতে আজ অনেক প্রতিষ্ঠান তাদের স্বকীয় উদ্ভাবনী দিয়ে বাজার মাত করে রাখছে। আমরা যারা ভোক্তা তাদের জন্য হিসাবটা সরল। আমরা পন্যের গুণগত মান বিচার করি, পন্যের উৎপাদকের খ্যাতি বিবেচনা করি, বিক্রয়োত্তর সেবার সঙ্গে আরো কিছু বিষয় ভাবি, থাক সে বৃত্তানেস্ন আর গেলাম না। টিভি, ফিদ্ধজ, এসি, ওয়াশিং মেশিন থেকে শুরু করে মোবাইল ফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, গাড়ি, মোটরসাইকেল এসব কিছুর গায়ে পন্যের নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা থাকে।

হিসাবটা জটিল এই নির্মাতাদের জন্যই। কারণ সর্বদা তাদের উদ্ভাবনী গুণের প্রমাণ রাখতে হয় তাদের উৎপাদিত পন্যের কার্যকারিতার ওপর। পিছিয়ে পড়ার ব্যাপারে সবাই আপসহীন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপরই জাপানে শিল্পায়নে শুরু হয় উদ্যোগের বিপ্লব। 'যথার্থ দৃষ্টি সম্বন্দীয় যন্ত্র'। খটকা লাগল! প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আবার কীসের যথার্থতা এখানে এসে হাজির। ১৯৩৩ সালে জাপানে, সেই জাপানে 'প্রিসিশন অপটিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যাবরেটরি' যথার্থ দৃষ্টি সম্বন্দীয় যন্ত্র উৎপাদনের ব্রত নিয়ে তার যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির এই ইংরেজি নামের বাংলায় অনুবাদই বলে দেয়, অপটিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট উৎপাদনে তার যথাযথ অর্থপূর্ণতার কথা। প্রিসিশন অপটিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠার পরের বছর ১৯৩৪ সালে জাপান তথা সমগ্র এশিয়ার প্রথম ৩৫ এমএম ফোকাল প্লেন শাটার ক্যামেরা, প্রোটোটাইপ ভারসন তৈরি হলো বদুব্দ বিশ্বাস মতে ক্ষমার দেবী কোয়ানন কডঅঘঙঘ নামে। ১৯৩৫ সালে ঘটল দুটো ঘটনা; ১. হানসা ক্যানন নামে প্রোটোটাইপ ক্যামেরার দ্বিতীয় সংস্করণ তৈরি আর ২. 'ক্যানন'-কে ট্রেডমার্ক হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে আবেদন। ১৯৩৭ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বছর। এ বছরই প্রিসিশন অপটিক্যাল ল্যাবরেটরি থেকে ইন্ডাসি্ট্র কোম্পানি লিমিটেড হয়ে পাকাপোক্ত গোড়াপত্তন স্থাপন করে যা ক্যাননের পূর্বপুরুষ বলে বিবেচিত প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৯-এ পূণরাউদ্যোমে লেন্স উৎপাদন শুরু হয়ে যায়। আর ১৯৩৭ সালের ১০ বছর পর ১৯৪৭ সালে স্বনামে আত্নপ্রকাশ করে ক্যানন ক্যামেরা কোম্পানি ইনকর্পোরেশন জাপান। ক্যামেরা দিয়ে যাত্রা শুরু করে আজ ৭০ বছরে ক্যানন ২ শতাব্দী আগের শিল্পবিপ্লবের ফসল, প্রযুক্তির উৎকষরাউর সব ক্ষেত্রেই তার উদ্ভাবনী গুণের প্রমাণ দাপটের সঙ্গে রেখেছে। আলতাফ আলী শ্যামলী থাকেন। সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে সময় কাটান ক্যামেরা নিয়ে। ক্যাননের ডিজিটাল ক্যামেরাই থাকে তার সঙ্গে কিন্তু যুবক বয়সে কেনা অঊ-১ চৎড়মৎধস হাতে নিলে এখনো তার চোখ ভিজে ওঠে স্মৃতির ভিড়ে। আদরের নাতিকে ক্যামেরার নাড়িনক্ষত্র বোঝান আর বলেন, 'ছবি তোলার যন্ত্রকেই ক্যামেরা বলে না, ভালো ছবির জন্য অবশ্যই ভালো ক্যামেরা দরকার। ক্যামেরায় ক্যানন সেরা এটা পরীক্ষিত, কারণ ক্যামেরা মানে ক্যানন।' লেন্স কখনোই চোখের মতো দেখে না। প্রকৃতি যে চোখ আমাদের দিয়েছে তার মতো পারফরম্যান্স এখন পর্যন্ত কোনো নির্মাতা তার উৎপাদিত লেন্স দিয়ে বের করতে পারেননি। জার্মানির শিল্পায়নের স্রোতে দুটি নাম অপটিক্যাল ডেভেলপমেনাউটর ক্ষেত্রে ব্যাপক উর্বর পলি ফেলেছিল। ১. লাইকা, ২. জাইস-আইকন এখন যা কার্ল-জাইস নামে পরিচিত। অপটিক্স, ক্যামেরা, ফটোগ্রাফি বিষয়ক ইন্ডাসি্ট্রয়াল আলাপচারিতায় এ দুই নাম অনুল্লেখ থাকলে আলোচনাটা অসম্পূর্ণ ও একতরফা হয়ে যাবে। ভিজু্যয়াল মিডিয়ার যে কোনো কর্মীই এ দুটি নাম শুনে থাকবে, জেনে থাকবে। কী আছে এদের মধ্যে? ক্যানন প্রসঙ্গে আবার লাইকা, কার্ল-জাইসের আবির্ভাব কেন? ক্যাননের প্রত্যেকটি ক্যামেরার ভেতর একটা করে ইমেজ প্রসেসর থাকে যার নাম ইনাউটল পেন্টিয়াম না তবে কাজ হলো সেন্সর থেকে পাওয়া ইমেজ সিগন্যালকে সুসংহত অবস্থায় মেমোরিতে সংরক্ষণের প্রক্রিয়াকে সমল্পি্বত ও ত্বরাল্পি্বত করা। উরএরঈ ক্যাননের প্রসেসরের নাম। বাজারে এখন উরএরঈ ওও. এরপর উরএরঈ ওওও চলে এসেছে। বুঝতেই পারছেন অন্য যে কোনো ডিজিটাল ক্যামেররা চেয়ে ক্যানন উরএরঈ-এর বদৌলতে দ্রুত কাজ করে আর তাই ক্যানন ক্যামেরা ব্যবহারকারী ছবি তোলার সময় 'ইশ, নাহ মিস করলাম, ধুর ডিজিটাল ক্যামেরাগুলো কেন যে স্টে্না! প্রফেশনাল এনালগ এসএলআর ক্যামেরায় দ্রুততম যে ছিল, সে প্রফেশনাল ডিজিটাল এসএলআরেও তার অবস্থান অক্ষুণম্ন রেখেছে। ইমেজিং কাজের সঙ্গে যারা জড়িত তারা জানে ডিজিটাল ফটোগ্রাফিতে ১০ ঋৎধসবং ঢ়বৎ ংবপড়হফ মানে কি একটা নয়, দু'দুটো উরএরঈ ওওও প্রসেসর নিয়ে ঊঙঝ-১ উ গধৎশ ওওও এখন পড়হঃরহঁড়ঁং ংযড়ড়ঃরহম-এ ১০ ঋচঝ দিয়ে সব ফটোগ্রাফারের চোখ করেছে চড়কগাছ। পণ্য কেনার সঙ্গে পন্যের বিক্রয়োত্তর সেবার নিশ্চয়তাও ভোক্তার জন্য জরুরি। বাংলাদেশে এই প্রথম এবং আপনি যখন এই প্রবন্দটি পড়ছেন তখন পর্যন্ত কোনো ব্র্যান্ড ক্যামেরার একমাত্র অথোরাইজড সার্ভিস সেন্টারের গর্বিত প্রতিস্থাপক র্যাগস ইন্ডাসি্ট্রজ লিমিটেড। এক বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি দিয়ে র্যাংগস ইন্ডাসি্ট্রজ লিঃ ডিজিটাল কমপ্যাক্টে ৫ থেকে ৯ মেগা পিক্সেল, ডিজিটাল এসএলআরে ৮ থেকে ১২.৭ মেগা পিক্সেল, ডিজিটাল ভিডিও হ্যান্ডিক্যাম ও ইএফএস লেন্স, ব্যাটারি গ্রিপার, সিঙ্ডলাইট বাজারজাত করছে। এমন কোনো বছর নেই পৃথিবীর কোনো না কোনো অঞ্চলে ক্যানন ক্যামেরা বা লেন্স পুরস্কার অর্জন করেনি। এমন কোনো অঞ্চল খুবই বিরল যেখানে প্রতি বছরই ক্যানন তার উৎকষরাউর স্বীকৃতি পায় না। শুরুর দিকের কথাটা দিয়ে শেষ করি, এতসব ব্র্যান্ডের মধ্যে স্বীয় উদ্ভাবনী গুণের ও পন্যের মান উন্নয়নের ক্ষেত্রে দুর্দান্ত প্রমাণ রেখে বিশ্বব্যাপী প্রতিবছর স্বীকৃতি অর্জনকারী এই সেই ব্র্যান্ড ক্যানন। ক্যাননের ভুবনে আপনাকে স্বাগতম।

No comments

Powered by Blogger.