স্টিভের শেষ দিনগুলো...

ত ফেব্রুয়ারি মাসেই তিনি জেনে যান এই সুন্দর পৃথিবীতে তিনি আর বেশিদিন নেই। ২০০৪ সালে শরীরে বাসা বাঁধা ক্যান্সার আর পোষ মানছে না। অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা, আধুনিক সময়ের প্রযুক্তি শিল্পী স্টিভ জবস শুরু করে দেন বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি। খুব কাছের কিছু মানুষকে ডেকেও তিনি জানিয়ে দেন বিদায় সম্ভাষণের জন্য প্রস্তুত তিনি। আগস্টে ছেড়ে দেন অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীর পদ। জীবনের শেষ কয়েকটি দিন ছিলেন অ্যাপলের পরিচালনা পরিষদের প্রধান হিসেবে। তবে নামেই প্রধান।

শরীরের ক্রমাবনতির কারণে সক্রিয়ভাবে কোনো কিছুতেই অংশ নিতে পারেননি। কিন্তু জেনেছেন আইফোন-৪এস কিংবা আইফোন-৫ নিয়ে অ্যাপলের ভবিষ্যত্ প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার কথা। জীবনের শেষ কয়েকটি সপ্তাহ শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বল ছিলেন তিনি। কিন্তু ক্যালিফোর্নিয়ার প্যালো-অ্যাল্টোর আবাসিক এলাকায় অবস্থিত জবসের সুপরিসর বাড়িটি ঘিরে থাকত ভক্ত-বন্ধু, শুভানুধ্যায়ীদের ভিড়। সবাই একটিবারের জন্য দেখা করতে চান জবসের সঙ্গে। জবসের স্ত্রী লর্নি সবিনয়ে তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতেন। ভক্তদের ভিড় সামলাতে গিয়ে তিনি হয়ে পড়তেন ক্লান্ত।
পুরো জীবনে ব্যক্তিগত জীবনটা ‘ব্যক্তিগত’ভাবেই কাটাতে পছন্দ করতেন স্টিভ জবস। জীবনের শেষ কয়েকটি দিনও নিজেই নির্ধারণ করেছিলেন কার কার সঙ্গে তিনি বিদায়ী সাক্ষাত্ করবেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে স্টিভ জবস স্ত্রী লার্নি ছাড়াও অ্যাপলের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য বিল ক্যাম্পবেল, ব্যক্তিগত চিকিত্সক ডিন অরনিশ, ওয়াল্ট ডিজনির প্রধান নির্বাহী রবার্ট এ ল্যাগের ও ব্যবসায়ী জন ডোয়ের সময় কাটিয়েছেন স্টিভ জবসের সঙ্গে। এদের পাশাপাশি ছিলেন জবসের আত্মজৈবনিক ওয়াল্টার ইসাকসন। মৃত্যুর পর স্টিভ জবস রেখে গেছেন ৬০০ কোটি ডলারেরও বেশি সম্পত্তি। নিজের সন্তানদের প্রচণ্ড ভালোবাসতেন স্টিভ জবস। ব্যক্তিগত চিকিত্সক ডিন অরনিশ বলেছেন, একবার জবসকে তার সন্তানদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। জানতে চাওয়া হয়েছিল তার কাছে সন্তানরা কেমন? উত্তরে জবস বলেছিলেন, জীবনে তার যত সাফল্য তার চেয়েও বড় সাফল্য সন্তানদের পিতা হওয়া। আইফোন কিংবা আইপ্যাডের ব্যবসায়িক সফলতার পর তিনি যে ধরনের আনন্দ পেয়েছিলেন, তার থেকে ১০ হাজার গুণ বেশি আনন্দ তিনি পেয়েছেন সন্তানের পিতা হয়ে।
বৃহস্পতিবার পৃথিবী থেকে চলে গেছেন স্টিভ জবস। আর ক’দিন পরেই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তার আত্মজীবনী। ইসাকসন একবার জবসকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ব্যক্তিগত জীবনকে সন্তর্পণে বাইরের জগত্ থেকে আলাদা করে রেখেছিলেন যে মানুষটি, তিনি কেন হঠাত্ করেই আত্মজীবনীর ব্যাপারে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, তিনি আত্মজীবনীটা দ্রুত প্রকাশ করতে চান, কারণ তিনি চান এই আত্মজীবনীর মাধ্যমে তার সন্তানরা তাকে জানুক।
আগেই বলা হয়েছে মৃত্যুর আগে প্রায় ৬০০ কোটি ডলারের সম্পদ রেখে গেছেন স্টিভ জবস। গত বেশ কয়েক বছর ধরেই যুক্তরাষ্ট্রে ধনকুবেরদের নিজেদের সম্পত্তির একটি বড় অংশ দাতব্যকর্মে দান করার হিড়িক পড়ে গেছে। কিন্তু নিভৃতচারী জবস কখনোই কাউকে বলেননি, তিনি তার এই বিপুল সম্পদ এমন কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করবেন কিনা।
মাইক্রোসফট করপোরেশনের মালিক বিল গেটস কিছুদিন আগেই দাতব্যকর্মে স্টিভ জবসকে তার সম্পত্তির একটি অংশ দান করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। একই অনুরোধ করেছিলেন আরেক ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। কিন্তু জবস সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.