রঙের রাজা রেমব্র্যান্ট by আহমেদ জুয়েল

উরোপিয়ান চিত্রশিল্পের ইতিহাসে যুগে যুগে অনেক মহান শিল্পীর আবির্ভাব ঘটেছে। আর তাই ক্রমাগত ঋদ্ধ হয়ে উঠেছে সেখানে শিল্পের গান। তারাও জ্বলজ্বলে ইতিহাস হয়ে আছেন কালের আয়নায়। এমনই একজন গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপিয়ান ডাচ শিল্পীর নাম রেমব্র্যান্ট। তিনি শিল্পচর্চার মাধ্যমে এমন এক যুগের সৃষ্টি করেছিলেন যাকে ঐতিহাসিকরা ডাচদের সোনালি যুগ বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। তার জন্ম ১৬০৬ মতান্তরে ১৬০৭ সালের ১৫ জুলাই নেদারল্যান্ডসের লেইডেন শহরে।

ধারণা করা হয়, তাদের পরিবারে সাত থেকে দশ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন একজন। তার বাবা ছিলেন বায়ুচালিত কলের মালিক। বালক বয়সে তিনি ভর্তি হন একটি ল্যাটিন স্কুলে এবং পড়াশোনা শেষ করেন লেইডেন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৬২৭ সালে রেম ও তার বন্দু এবং কলিগ জেন লেইভেনস মিলে লেইডেনে গড়ে তোলেন একটা স্টুডিও এবং সেখানে তিনি ছাত্রদের চর্চার ব্যবস্থা করেন। ১৬২৯ সালে তার দেখা হয় বিখ্যাত ডাচ গণিত ও পদার্থবিদ ক্রিসি্টয়ান হুইজেনসের বাবা কবি ও কূটনীতিক কনস্ট্যানটিজন হুইজেনসের সঙ্গে। তিনি রেমকে যথেষ্ঠ সহযোগিতা করেন এবং তার মাধ্যমেই পরিচয় ঘটে প্রিন্স ফ্রেডরিক হেনড্রিকের সঙ্গে। আর এই পরিচয়ের সূত্র ধরেই প্রিন্স ১৬৪৬ সাল পর্যন্ত ক্রমাগত রেমের ছবি কিনতে থাকেন। তিনি শুধু ক্যানভাসেই ছবি আঁকতেন না, ধাতব পাতের ওপর এসিড ও বিশেষ সূঁচের সাহায্যেয আঁকতেন চিত্র। ১৬৩১ সালের দিকে রেম জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তার ছবির মাধ্যমে। এই সময়ে তিনি আমস্টারডাম থেকে কিছু কাজের অর্ডার পান। ফলে তিনি সেখানে চলে যান এবং হেনড্রিক ভ্যান উইলেনবার্গ নামের একজন শিল্প উপকরণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে অবস্থান করেন। এখানেই পরিচয় হয় উইলেনবাগরাউর চাচাতো বোন সাসকিয়া ভ্যান উইলেনবাগরাউর সঙ্গে এবং ১৬৩৪ সালে তারা বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ হন।
১৬৩০-এর দশকে রেম ক্যানভাসে অল্প পরিমাণ ছবি আঁকলেও ধাতব পাতের ওপর প্রচুর ছবি আঁকেন। এই ছবিগুলোর বিষয়বস্থু ছিল বাইবেলীয় ঘটনা, প্রকৃতির বড় কোনো অঘটন, উপড়ানো গাছ এবং অলক্ষুণে আকাশ। ১৬৫০-এর দশকে রেম তার স্টাইলে পরির্বতন আনেন। আর এমন এক ধাঁচ তৈরি করেন, যা তার অতীতের সঙ্গেও মেলে না, আবার র্বতমানের ফ্যাশন থেকেও দূরে। আত্নপ্রতিকৃতি আঁকায় তিনি প্রয়োগ করেছিলেন তার পুরো মেধা। তার ছবির মাঝে প্রকাশ পেত প্রেম, প্রকৃতি আর ঈশ্বর।
১৬৬৯ সালের ৪ অক্টোবর নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে এই মহান শিল্পীর মৃত্যু ঘটে। তিনি মরে গেলেও মরেনি তার শিল্পকর্ম। তাই তিনি বেঁচে আছেন পৃথিবীর বুকে মানুষের মনেপ্রাণে।

No comments

Powered by Blogger.