নীরব অত্যাচার! by হপলা হাসান

মএ পাস করার পরপরই বাবা-মা তাড়াহুড়ো করে আমার বিয়ে দিয়ে দিলেন। কারণ এরপর আরো দেরি হলে আমার নাকি আর বিয়ে হবে না। পাত্রপক্ষ বলবে মেয়ের বয়স বেশি। বিয়ের পর চাকরি করার জন্য যতবার চেষ্ঠা করেছি, আমার স্বামীর কথা, আমার বউ তুমি, এত ছোট চাকরি করবে! বিসিএস দাও, তারপর ফার্স্ট ক্লাস চাকরি করো আমার কোনো আপত্তি নেই।

আমি আমার স্বামীকে বোঝানোর চেষ্ঠা করেছি, আমার পক্ষে বিসিএসের এত পড়া, এত পরিশ্রম করা সম্ভব নয়। তা ছাড়া আমি এত মেধাবীও নই, বিসিএস আমার হবে না। কিন্তু আমার স্বামী আমাকে উল্টো তখন বুঝিয়েছে, একবারে না হলে যতদিন বিসিএস দেওয়া যায় ততদিন দিতে থাক দেখবে, হয়ে যাবে। এরই মধ্যে আমার পেটে সন্তান আসে। সন্তানের বয়স এখন তিন বছর। এখন আমার স্বামী বলে, তোমার চাকরি এই তো শুরু হচ্ছে, বাচ্চাকে স্কুলে দিয়ে আসা, নিয়ে আসা, এটাই তো একটা চাকরি। মেয়ে মানুষ সন্তান মানুষ করবে, এর চেয়ে আর বড় চাকরি কী হতে পারে! মাঝেমধ্যে আমার স্বামীর বন্দুরা বাসায় এলে যদি আমার চাকরির কথা বলি তাহলে তারা বলে মেয়ে মানুষ বাইরে গেলে ভালো থাকে না। বাচ্চা লালন-পালন করাটাই তো মেয়েদের সবচেয়ে বড় চাকরি। আমি এতদিন আমার স্বামীর চালাকি বুঝেছি। সে আমাকে সরাসরি চাকরি করতে নিষেধও করছে না, আবার এমন কিছু শর্ত বেঁধে দিচ্ছে যে, আমার চাকরি করা হয়ে উঠছে না। বেশি শিক্ষিত স্বামীরা হয়তো এমন-ই হয়?
একটি মেয়ে কত বছর চার দেয়ালের মাঝে বন্দি থাকতে পারে। ওরা ভাবে ওদের কৌশল আমরা বুঝি না; কিন্তু মেয়েরা অত্যন্ত ভদ্র-অমায়িক বলেই এসব মেনে নিয়ে চলে। তাতে তো স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একটা দূরত্ব বাড়েই। আমাদেরও তাই। এ রকম নীরব সহিংসতা কবে যে শেষ হবে, জানিনা, সন্তানের মুখ ভবিষ্যৎ আমায় বন্দি করেছে। কিন্তু এভাবে কতদিন! আজকাল নিজেকে যেন নিজেকেই চিনি না মনে হয়? স্বামী-সংসার-সন্তান চেয়েছি, পেয়েছিও। কিন্তু তাই বলে কি এর বাইরে আমার করার কিছু থাকবে না। লেখাপড়া করেছি, পরিশ্রম করে বাইরে কাজ করার জন্য নিজেকে উপযোগী করে তুলেছি। কিন্তু কাজ করার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না কেবল সংসারের শান্তি বজায় রাখতে গিয়ে। এতে যে আমার ভেতরের অশান্তি বেড়েই চলেছে তা কেউ শুনতেও চায় না মানতেও চায় না। অনেকেই বলে বেশ তো ভালোই আছিস, স্বামী তো তোকে সুখেই রেখেছে। কিন্তু আমি বুঝি এ সুখ না, নীরব অত্যাচার!

No comments

Powered by Blogger.