সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি জোরদার হোক by আফতাব চৌধুরী

পৃথিবীতে মানুষ সৃষ্টির পর থেকেই গাছপালার প্রয়োজনীয়তা মানুষ খুব গভীরভাবে অনুভব করে আসছে। গাছপালা ও বনাঞ্চল না থাকলে পৃথিবী থাকত না। মানুষসহ অন্যান্য প্রাণী শ্বাস-প্রশ্বাস ফেলতে পারত না। প্রাণীকুলের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন মেঘ-বৃষ্টি, অক্সিজেন ও বিভিন্ন জাতীয় খদ্যো। গাছপালাই সৃষ্টি করে মেঘ-বৃষ্টি। বনাঞ্চলের জন্য যেমন প্রয়োজন মেঘ-বৃষ্টি আবার এ গাছপালার জন্যও বৃষ্টির প্রয়োজন। একে অন্যে গভীরভাবে সম্পৃক্ত, এটা অস্বীকার করার উপায় নেই। করা সম্ভবও নয়।

পৃথিবীতে যত প্রকার প্রাণী আছে তার মধ্যে মানুষ জাতীয় প্রাণীর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। মানুষ পৃথিবীর সেরা জীব। এ জীবের বেঁচে থেকে জীবন ধারণের জন্য বনাঞ্চলের প্রয়োজন সর্বাধিক। বনাঞ্চল বা বনভূমি না থাকলে গাছপালা, মেঘ-বৃষ্টি না থাকলে মানুষ কেন, কোনো প্রকার প্রাণীই পৃথিবীতে থাকত না। সৃষ্টিও হতো না। হলেও সঙ্গে সঙ্গে বিলীন হয়ে যেত। এটাও আবার ঠিক, মানব সভ্যতা গড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই নিধনও চলছে বৃক্ষ তথা বনাঞ্চলের। বেপরোয়াভাবে বৃক্ষনিধন চলছে সৃষ্টির পর থেকেই। সভ্যতার ক্রমবিকাশে বধর্িত মানুষের নানাবিধ প্রয়োজনে দিন দিন বনাঞ্চলের ওপর চাপ পড়ছে। নিধন করা হচ্ছে বনাঞ্চল। মানুষ ধ্বংস করেই যাচ্ছে বিভিন্ন অঞ্চলের বনভূমি, বৃক্ষরাজি। আদম সন্তানের হাতে তাদেরই প্রয়োজনে সৃষ্ঠ বনাঞ্চল উজাড় হচ্ছে। নষ্ঠ হচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পরিবেশে দেখা দিচ্ছে নানা প্রকার বিপর্যয় আর এ বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে মানুষ, পশু-পাখিসহ সব প্রকার প্রাণী। এদিকে যানবাহনের ধোঁয়া, রাসায়নিক অস্ত্রাদির ব্যবহার, পারমাণবিক পরীক্ষা, শিল্প-কারখানার র্বজ্য পরিবেশকে করছে বিষাক্ত। গাছপালা হচ্ছে বিনষ্ঠ। বৃক্ষের শহৃন্যতায় বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রাণীকুলের অস্তিত্ব। দূষিত বায়ু, পানি ও বনাঞ্চলে গাছপালার অভাব পরিবেশকে কলুষিত করছে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য হচ্ছে বিনষ্ঠ, বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের তা-বলীলা। অবশ্য এটাও ঠিক, বিশ্বমানব আজ জাগ্রত। তারা দিন দিন সচেতন হয়ে উঠছে। তারা বুঝতে শুরু করেছে, প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করতেই হবে। তাই তারা সোচ্চার। আর প্রতি বছর ৫ জুনকে বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালনই এর প্রমাণ। এবারো সপ্তাহব্যাপী ব্রাজিলে বিশেষ খবর বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা 'জাতিসংঘ আয়োজিত পরিবেশ ও উন্নয়ন' বিষয়ক সম্মেলনে যোগদান করেন। বিশেষ খব যাতে বৃক্ষ ও প্রাণীকুল রক্ষা পায়, পরিবেশ থাকে সুস্থ, বনাঞ্চল উজাড় করে প্রাকৃতিক ভারসাম্য যাতে বিনষ্ঠ না হয় তার জন্য সারাবিশেষ খবর কাছে সুপারিশ পেশ করা হয়। তাগিদ দেওয়া হয় যাতে সবাই এ ব্যাপারে তাৎপর হয়।
গাছ দেয় অক্সিজেন, গ্রহণ করে জীবের নিঃশ্বাস নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড। এ অক্সিজেন ব্যতিরেকে কোনো প্রাণীই বেঁচে থাকতে পারে না। গাছ ছায়া দেয়, গাছ মাটির ক্ষয় রোধ করে, বায়ুকে করে পরিশোধিত। গাছ দেয় সুস্বাদু ফল, গাছ থেকে আমরা পাই গৃহনির্মাণ সামগ্রী, প্রয়োজনীয় জ্বালানি। গাছ বন্য প্রাণীকে দেয় আশ্রয়, দেয় বাসস্থান। আমাদের দেশে বনভূমির পরিমাণ নিতান্তই অপ্রতুল। তারপরও আমরা প্রতি বছর ১ কোটি ২০ লাখ ঘনফুট উন্নতমানের কাঠ ও ২ কোটি ৭৫ ঘনফুট জ্বালানি কাঠ আমাদের ব্যবহারের জন্য জোগাড় করতেই হয়। আমরা প্রায় ১২ কোটি বাঁশ, ১৮ লাখ মণ গোলপাতা, ৭ হাজার মণ মধু ও ৩ হাজার মণ মোম পেয়ে থাকি আমাদের বিভিন্ন বনাঞ্চল থেকে। এখানেই শেষ নয়, শুধু বন সম্পদ থেকে বার্ষিক প্রায় ৭৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয় সরকারের। বনজ শিল্পে নিয়োজিত রয়েছে হাজার হাজার শ্রমিক, তারা তাদের পোষ্যদের নিয়ে এভাবেই জীবিকা নির্বাহ করছে। এদিকে শুধু বনাঞ্চলের জন্য সৃষ্ঠ প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্য অবলোকন করার জন্য প্রচুর বৈদেশিক পর্যটক আসেন এ দেশে। এ থেকেও প্রচুর রাজস্ব আয় হয়, তাও আবার বৈদেশিক মদু্রায়। জানা যায়, গত অর্থবছরে এ খাতেই আয় হয়েছে আনুমানিক ৩০ কোটি টাকা।

No comments

Powered by Blogger.