পুত্রশোক ভুলতে ক্রিকেট

ছেলের ব্যাটিং উইকেটের পেছন থেকে দাঁড়িয়ে দেখছেন বাবা, ভুল হলে শুধরে দিচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর নিজেই ছেলের হাত থেকে ব্যাটটা নিয়ে দেখিয়ে দিলেন কিভাবে কবজির মোচড়ে বল হাওয়ায় না ভাসিয়ে খেলতে হয়। শনিবার, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বড় ছেলে আসাদকে নিয়ে এভাবেই মাঠে দেখা গেল মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনকে। তাঁর দিকে তাকিয়ে বোঝার উপায় নেই, এই মানুষটাই মাত্র ২১ দিন আগে হারিয়েছেন ছোট ছেলে আয়াজকে। ধীরে ধীরে শোকের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন সাবেক ভারত অধিনায়ক, ফিরতে শুরু করেছেন স্বাভাবিক জীবনে।
ক্রিকেট থেকে বিদায়টা সুখের হয়নি আজহারের।

কিন্তু এর পরও থেমে থাকেনি জীবন। জড়িয়েছেন রাজনীতিতে, ২০০৯ সালে ভারতের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন কংগ্রেসের টিকিটে। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৫০ হাজার বেশি ভোট পেয়ে মোরাদাবাদ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু শনিবারের সকালে শোকসন্তপ্ত কোনো পিতা নয়, জাঁদরেল কোনো সংসদ সদস্য কিংবা ঝানু রাজনীতিবিদও নয়, হায়দরাবাদের জিমখানা মাঠে ছিলেন একাগ্র এক পিতা। যাঁর সব মনোযোগ ছেলের ব্যাটিংকে ঘিরে। কখনো তিনি ছিলেন কিশোরবেলার মতোই উৎফুল্ল। ছেলে আসাদ যখন ঠিকমতো ব্যাটে-বলে সংযোগ ঘটাতে পারছিলেন না, তখন 'ক্রিকেটের শ্রেষ্ঠতম কবজির মালিক' উইকেটের পেছন থেকে সামনে এসে নিজেই হাতে নিয়েছেন ব্যাট। শিখিয়েছেন কবজির ব্যবহার, তখন তিনি আর বাবা নন বরং নিষ্ঠাবান কোচ।
খেলার পাট চুকাতেই চরিত্রের এই অংশটুকুও যেন ছেঁটে ফেললেন আজহার! সুনীল যোশি, কানওয়ালজিত সিং, নোয়েল ডেভিড, জাকির হুসেইন, অরবিন্দ শেঠিসহ একসময়কার সতীর্থের সঙ্গেও দেখা হয়েছে আজহারের। যোশি এখন হায়দরাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (এইচসিএ) কোচ, অন্যরাও কাজ করছেন ভালো ভালো জায়গায়। তাঁদের সঙ্গে গালগল্পেও কেটেছে অনেক সময়, লম্বা আলাপ হয়েছে এইচসিএ ও ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট এন শিবলাল যাদবের সঙ্গে। প্রায় দুই ঘণ্টারও বেশি সময় জিমখানা মাঠে কাটিয়েছেন আজহার, দেখিয়েছেন ৪৮ বছর বয়সেও স্থানীয় দলে খেলা যেকোনো ক্রিকেটারের চেয়ে ভালো ফিল্ডিং করেন তিনি! মনে হচ্ছে সময় তাঁর বয়স বাড়িয়ে দিলেও দক্ষতায় ছাপ ফেলতে পারেননি। আর ছোট ছেলে আয়াজকে হারানোর পর তাঁর সব স্বপ্নই এখন আসাদকে নিয়ে। টিএনএন

No comments

Powered by Blogger.