সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনুন by আরিফুল হক শামীম

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি সাধারণ মানুষকে কীভাবে পিষে মারছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হাঁপিয়ে উঠছে নিন্ম, নিন্ম মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ। একদিকে আকাশছোঁয়া দ্রব্যমূল্য, অন্যদিকে পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির ফলে অসহায় হয়ে পড়েছে দেশের জনগণ। এ অবস্থায় ওইসব পরিবারের মানুষ অনেক কিছু কাটছাঁট করে চালাচ্ছে তাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা। তারা পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দৈনন্দিন জীবনযাত্রার তালিকা থেকে অনেক কেটে ফেলার চেষ্ঠা চালাচ্ছে।
জীবনযাত্রার ব্যয় যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে হারে বাড়ছে না মানুষের আয়। ফলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মানও অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে। উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর কোনো পরিস্থিতিতেই সমস্যা হয় না। প্রতিটি দ্রব্য একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। একটি জিনিসের দাম বাড়লে স্বাভাবিকভাবেই অন্য জিনিসের ওপর তার প্রভাব পড়বে এটাই স্বাভাবিক। সে জন্য জ্বালানি তেল বা গ্যাসের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তার সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে দ্রব্যমূল্যও। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। এ দেশের মাটি সোনার চেয়েও খাঁটি। এ দেশের অধিকাংশ মানুষই নিতান্তই অসহায়। যারা দিন-রাত পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করে কিছু সঞ্চয় করে ভবিষ্যতে সুখে-শান্তিতে বসবাস করার জন্য। তারা কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করতে পারছে না। এ অবস্থায় তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে কীভাবে? র্বতমান সরকারের উপদেষ্ঠা মোঃ আনোয়ারুল ইকবালের সভাপতিত্বে রমজানে রাজধানীতে পাইকারি ও কাঁচাবাজার স্থাপনের মাধ্যমে দেশে জনগণের দুর্ভোগ লাঘবের সিদ্ধান্তকে আমরা অভিনন্দন জানাই। দেশের সমস্যা সমাধান হোক এটাই প্রতিটি নাগরিকের আকাঙ্খা। র্বতমানে এই দেশের জনগণের বড় বড় সমস্যার মধ্যে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধগতি সবচেয়ে বড় সমস্যা। বিগত সরকারগুলোর সময় থেকেই এই জটিলতা সৃষ্টি হয়, যার প্রভাব এখন পর্যন্তও সমাধান হচ্ছে না। দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধগতি কেন, তার সঠিক কারণ কী তা কারো জানা নেই? কেউ কি এর সঠিক সমাধান দিতে পারেন না? মানুষের আয় থেকে ব্যয় যদি বেশি হয় তাহলে মানুষ কীভাবে সুষ্ঠুভাবে জীবনযাপন করবে, কী থাকবে তাদের ভবিষ্যতের জন্য? তাই আমরা মনে করি, উপদেষ্ঠার এ সিদ্ধানেস্ন দেশের জনগণের সমস্যার সামান্য হলেও লাঘব হবে। র্বতমান সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য অনেক নীতিমালা ও উন্নয়নমূলক কাজ করছে, যার সুফলও দেখা যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করি। র্বতমান সরকারের উদ্যোগে অনেক সমস্যা সমাধান হলেও প্রশ্ন থেকে যায়। এই দেশের জনসংখ্যা র্বতমানে প্রায় ১৫ কোটি। এই জনসংখ্যা এ দেশের মতো ছোট দেশের জন্য অনেক বেশি। এ দেশের জনসংখ্যার সিংহভাগই মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র। তাই তাদের এই উদ্যোগ দেশের জনগণের সমস্যা কতটুকু লাঘব করবে তা ভাবার বিষয়। রাজধানীর প্রবেশমুখে ৬টি স্থানে ৬টি পাইকারি বাজার এবং শহরের বিভিন্ন স্থানে ৪৫টি অস্থায়ী কাঁচাবাজার দেশের জনগণের সমস্যা সমাধান করতে পারবে কি-না তা তারাই ভালো বলতে পারেন। তবে আমরা দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে মনে করি, দেশের মানুষকে অস্থায়ী শান্তি না দিয়ে স্থায়ী শান্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিডিআরের তদারকিতে সরকার দেশে যে বাজারের ব্যবস্থা করেছে তাতে সীমিত সংখ্যক মানুষ সুবিধা পাচ্ছে। এই উদ্যোগে যদি দেশের সব নাগরিক সুবিধা না পায়, তাহলে সরকারের এই উদ্যোগ সফল তা বলা যাবে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে হবে গোড়া থেকে, যাতে দেশের সব নাগরিক সুবিধা ভোগ করতে পারে। বিডিআরের তদারকিতে স্থাপিত বাজারের দ্রব্যমূল্য অন্য সাধারণ বাজার থেকে মোটামুটি সস্তা তা স্বীকার করতেই হবে। এ থেকে অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন বটে কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বিডিআর যদি কম মূল্যে পণ্যদ্রব্য জনগণকে দিতে পারে, তাহলে অন্য ব্যবসায়ীরা কেন তা দিতে পারছেন না? তাদের কী সমস্যা তা দেখা দরকার। আমরা মনে করি, দ্রব্যমূল্য ক্রমেই কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর সঙ্গে কারা জড়িত তা খুঁজে বের করা দরকার। সৎ ব্যবসায়ীরা যদি দেশে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা করতে না পারেন তাহলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। সৎ ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত করতে হবে। তাদের ব্যবসায় নিরাপত্তা দিতে হবে। কৃষকদের নানাবিধ সমস্যা আছে এরও সমাধান করতে হবে। তারা যাতে অধিক শস্য উৎপাদন করতে পারে সে ব্যাপারে তাদেরও প্রশিক্ষণসহ সব সুবিধা প্রদান করা প্রয়োজন। প্রতি বছর বন্যার কারণে দেশে কৃষি বিপর্যয় ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির একটা বড় কারণ। এই বিপর্যয় প্রতিরোধ করতে হবে। সরকারকে অবশ্যই মধ্যস্বত্বভোগকারীদের চিহিক্রত করতে হবে। মধ্যস্বত্বভোগকারীরা বাজারে না থাকলে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক হবে এবং দরিদ্র কৃষক-চাষীরাও তাদের ন্যায্যমূল্য পাবেন। সরকারের উচিত গ্রামগঞ্জ ও বিভিন্ন সমিতিকে সরাসরি পণ্য বাজারে প্রদানে সহযোগিতা করা। এতে মূল উৎপাদনকারীরাও উপকৃত হবেন এবং দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল থাকবে। খদ্যোদ্রব্যে ভেজাল ঠেকাতে যেভাবে ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে, সেভাবেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত তদারকি করলে সুফল আশা করা যায়। সরকার কীভাবে দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের কাছে সহনীয় পর্যায়ে রাখবে তা সরকারকেই নির্ধারণ করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.