হারিয়ে যাচ্ছে কদম ফুল - পরিবেশ উন্নয়নে প্রশাসন ও গণমাধ্যমের ভূমিকা

ফুল সৌন্দর্য-মনন আর পবিত্রতার প্রতীক! বাঙালির ঋতু-বৈচিত্রে্যর সঙ্গে ফুলের রয়েছে এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। বাহারি রং আর বিচিত্র ঘ্রাণ মনকে করে সতেজ-প্রফুল্ক্ন! এক সময় দক্ষিণ বাংলা বিশেষ করে স্বরূপকাঠি ও তার আশপাশের গ্রামগুলোতে তুমুল র্বষা ঋতু এলেই সফেদ পাপড়ি আর হলদু-কমলালেবু রঙা প্রচুর সুগন্দি কদম ফুল ফুটত কদম শাখায়। রাস্তার দু'পাশে, খেয়াঘাটে, পুকুরপাড়ে, গহিন অরন্যে, বসতবাড়ির আঙিনার চারদিকে র্বষায় ফোটা কদমফুলগুলো দেখতে সতি্যই শোভামণ্ডিত-নান্দনিক ছিল।

সারি সারি নারকেল-সুপারির বন, মাঝ রাতে ডাহুকের একটানা কোরাপ, কুপিজ্বলা আলো-আঁধারিতে পুঁথিপাঠ, ব্যাঙের গলাছাড়া ডাক, হোগলার টোপরপরা ফেরিওয়ালার বিপন্ন চিৎকার, ছেঁড়া পালের র্বষায় ভেজা নাইওরির নাও, ভরা গাঙ, ঝাঁকে ঝাঁকে চকচকে রুপালি ইলিশ, কচু পাতায় ফোঁটা ফোঁটা র্বষার স্টিম্নগ্গব্দ জল, কাদামাখা মেঠোপথ, বুনো ঝাউয়ের শাখায় বিরহী দাঁড়কাক, পাতিহাঁসের কেঁচো খাওয়া, নলখাগড়া বন, ব্যাঙের ডাক আর সন্দ্যা নদীর দুই তীরে ফোটা কমলালেবুর আস্তরণের ওপর বকের ধবল পালকের মতো সুগন্দি র্বষায় ভেজা কদম ফুলের কথা আজো মন থেকে মুছে যায়নি। র্বষার বিষণম্নতাকে উপড়ে ফেলা কী এক মোহনীয় আমেজ র্বষার কদম ফুল! ভোরের স্টিম্নগ্গব্দ বাতাসে যেন আজো ঘুরে বেড়ায় চারপাশে! আমাদের চৈতন্যের সব রং দিন দিন ফিকে হয়ে আসছে। চিন্তায় এসেছে রাহুগ্রস্ত অমানিশা। শেকড় থেকে সরে যাচ্ছে তো সরেই যাচ্ছে। দুষ্ঠচত্রেক্রর নাগরদোলায় দোল খেয়ে আমরা হারাচ্ছে আমাদের কাঙ্খিত পথ। সুন্দরের সুরম্য দেয়াল আজ ক্ষয়ে ক্ষয়ে পড়ছে পুরনো জীর্ণ দালানের পলেস্তরার মতো! তাই র্বষায় ভেজা সুগন্দি অপরূপা কদম ফুলের শোভা এখন শুধু মৌনস্মৃতি। অথচ এক সময় কদমফুল ফোটার মৌসুমে নান্দনিক এ বৃক্ষের তলায় বসে ক্লান্ত রাখালকে ঘোর মধ্যাহেক্র বিরহী ব্যাকুল বাঁশি বাজাতে দেখা যেত বিমুগ্গব্দ চয়নে। কদম ফুল বিনিময়ের মাধ্যমে চিরায়ত প্রেমিক-প্রেমিকা যুগল তাদের প্রিয় মানুষটিকে প্রেম নিবেদন করত। এ সন্দ্যা নদীর তীর ঘেঁষা এলাকাগুলোতে কদম ফুল ফোটা ছাড়া র্বষাই কল্পনা করা যেত না। পল্লীর পরতে পরতে ভেসে বেড়াত কদম ফুলের মনকাড়া সুবাস। দু'চারটি কদম গাছ ছিল না, ভাটার অঞ্চল স্বরূপকাঠিতে এমন কোনো বাড়ি ছিল না। কদমগাছ মূল্যবান বৃক্ষ না হলেও এর কাঠ থেকে তৈরি করা হয় দিয়াশলাইয়ের কাঠি ও খেলাধুলার সামগ্রী। তাছাড়া কদম পাতায় রয়েছে বহু ঔষধি গুণ। বহু রোগে এর পাতা ও শেকড় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ভাটার গাঙ সন্দ্যার তীরঘেঁষা স্বরূপকাঠির ঐতিহ্যকে রক্ষা, শোভামণ্ডিত সৌন্দযরাউর বিকাশ, ফুলের কদর বৃদ্ধি, বাগানের রূপর্বধন ও ফুলপ্রেমীদের চিত্তবিনোদনের জন্য নদী তীরের এ কদমফুল ফোটা বৃক্ষগুলোকে টিকিয়ে রাখা অতি জরুরি বলে আমি মনে করি। গুরুত্ববাহী এ বিষয়টি এলাকাবাসী, সচেতন মহল, ফুলপ্রেমী, সৌন্দর্যপিপাসু, বন সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ, পরিবেশ মন্ত্রণালয় ভেবে দেখবে বলে আমি প্রত্যাশা করি। চোখ ভরে দেখতে চাই হাওয়ায় ওড়া কদম পাপড়ি।
>>লেখকঃ মনিরুল ইসলাম বায়েজিদ
 
পরিবেশ উন্নয়নে প্রশাসন ও গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর বিশ্ব পরিবেশ দিবসের প্রতিপদ্যো হচ্ছে, 'উত্তপ্ত হচ্ছে পৃথিবী, গলছে বরফ_ আমাদের প্রস্থুতি কি যথেষ্ঠ?' এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন, জলবায়ু পরির্বতনে যেসব সংকট সৃষ্টি হবে তা মোকাবেলায় আমাদের প্রস্থুতি যথেষ্ঠ নয়। জলবায়ু পরির্বতনের প্রভাব ও পরিবর্তিত পরিবেশে টিকে থাকার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তি পর্যায়ে দক্ষতা বৃদ্ধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উষষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের ভূ-পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে ধীরে ধীরে। তথ্য মতে, গত ১০০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সমদু্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৫ মিটার। বিশেষজ্ঞদের মতে, সমদু্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বৃদ্ধি পেলে বৃহত্তর খুলনার শতকরা ৬৫ ভাগ, বরিশালের ৯৯ ভাগ, নোয়াখালীর ৪৪ ভাগ, ফরিদপুরের ১২ ভাগ ও পটুয়াখালী এলাকা তলিয়ে যাবে। ফলে উ্টাস্থু হবে দেশের প্রায় ২ কোটি লোক। বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়েছেন, ভূ-পৃষ্ঠের জলবায়ু পরির্বতনের কারণে সমদু্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও কৃষির পরির্বতনের মাধ্যমে আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে বিশেষ খবর প্রায় ১৫ কোটি মানুষ পরিবেশগত দুর্যোগের সম্মুখীন হবে। জানা যায়, সমদু্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি ঘটবে। ফলে মোট ভূ-খন্ডের ২০ ভাগ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ ছাড়া লবণাক্ততা বৃদ্ধির কারণে দেশের ৩২ ভাগ ভূমিকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং সুন্দরবনের ৪ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর ভূমিসহ বনায়নকৃত বনভূমি পর্যায়ক্রমে ধ্বংস হতে থাকবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা পরিবেশগত বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন, (১) উন্নত বিশেষ খবর পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা, (২) কল-কারখানা ও গাড়ির কালো ধোঁয়া, (৩) শস্যক্ষেতে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার (৪) ফসলের জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ (৫) কলকারখানা থেকে নিক্ষিপ্ত রাসায়নিক র্বজ্য, (৬) অপরিকল্কিপ্পত ও যত্রতত্র তৈরি করা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (৭) শব্দ দূষণ (৮) বাতাসের বিষাক্ত গ্যাস (৯) নদী ও জলাধার দূষণ (১০) যত্রতত্র র্বজ্য ও ময়লা-আর্বজনা রাখা (১১) বায়ু দূষণ (১২) পানি দূষণ (১৩) অপ্রতুল সুয়্যারেজ (১৪) ক্রমর্বধমান জনসংখ্যার চাপ (১৫) নদী বা জলাধারে পয়ঃর্বজ্য ও শিল্পর্বজ্য নিক্ষেপ (১৬) ফসলের জন্য অধিক পানি সেচ (১৭) অধিক হারে বৃক্ষ নিধন ও বনভূমি উজাড় (১৮) পাহাড় বা টিলা কেটে ধ্বংস করা (১৯) খাল-নালা বা জলাভূমি ভরাট করা (২০) ভূমিক্ষয় (২১) গ্রিন হাউস প্রভাব (২২) আবহাওয়া ভূ-ম-লীয় তাপ বৃদ্ধি (২৩) সমদু্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি (২৪) মরুময়তা (২৫) ওজন স্তর ক্ষয় (২৬) পলিথিন ও প্লাসি্টক দ্রব্যের যথেচ্ছ ব্যবহার (২৭) ধহৃমপান, তামাক এবং তামাকজাত সামগ্রীর ব্যবহার ইত্যাদি। আমাদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন দূষণমুক্ত নিরাপদ পরিবেশ। পরিবেশের দূষণ ও দূষণরোধে নিজেদের সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু কোনো একক ব্যক্তি বা সংগঠনের পক্ষে অনেক সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন ধারাবাহিক সম্মিলিত প্রচেষ্ঠা। এ ক্ষেত্রে প্রশাসন ও গণমাধ্যমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। আসুন, পরিবেশের ক্ষতিকর বিষয় সম্পর্কে আমরা নিজেরা সচেতন হই এবং অন্যদেরও সচেতন করে তোলার মাধ্যমে আমাদের পরিবেশকে নিরাপদ এবং আগামী প্রজন্মের জন্য সুস্থ ও সুন্দর করে গড়ে তুলি। >>লেখকঃ মোঃ গণি মিয়া বাবুল

No comments

Powered by Blogger.