ভ্রাম্যমাণ আদালত অবৈধ ঘোষণার রায় স্থগিত চেয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। রোববার সকালে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন করা হয়। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালতকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় স্থগিত চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আমরা আপিল আবেদন করেছি। হাইকোর্টের চেম্বার জজ আদালতে আজ এই আবেদনের শুনানি হতে পারে বলে জানায় রাষ্ট্রপক্ষ। এর আগে গত বৃহস্পতিবার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট (ভ্রাম্যমাণ আদালত) পরিচালনার ধারাসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ধারা ও উপধারাসহ ১১টি বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। হাইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়েছে, এ ১১টি বিধানই বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও বিচারকাজ পরিচালনার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা পৃথক তিনটি রিট আবেদনের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশীষ রঞ্জন দাসের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। এ রায়ের ফলে ২০০৯ সালের ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা যাবে না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। হাইকোর্টের দেয়া ওই রায়ে বলা হয়- ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ধারা ৫, ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০,১১, ১৩ ও ১৫ ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং ধারাগুলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে (নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগ) ক্ষমতার পৃথককরণ-সংক্রান্ত সংবিধানের দুটি মৌলিক কাঠামোবিরোধী। অনাকাঙ্খিত জটিলতা ও বিতর্ক এড়াতে উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ হওয়া বিষয়গুলো ছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দেয়া সব আদেশ, সাজা ও দণ্ডাদেশ অতীত বিবেচনায়
সমাপ্ত বলে মার্জনা করা হয়েছে।
রায়ে বলা হয়, আইনের ওই বিধানের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা দেয়া সংবিধানের লঙ্ঘন এবং তা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সম্মুখ আঘাত এবং ক্ষমতার পৃথককরণের নীতিবিরোধী। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেটসহ বাংলাদেশ কর্মকমিশনের সব সদস্য (প্রশাসন) প্রশাসনিক নির্বাহী। প্রশাসনিক নির্বাহী হিসেবে তারা প্রজাতন্ত্রের সার্বভৌম বিচারিক ক্ষমতা চর্চা করতে পারেন না, কেননা মাসদার হোসেন মামলার রায়ে এ বিষয়ে পরিষ্কারভাবে বলা আছে। আরও বলা হয়, ৫, ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০, ১১ ও ১৩ ‘কালারেবল প্রভিশন’। ধারাগুলো সরাসরি মাসদার হোসেন মামলার রায়ের চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দুটি পৃথক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ বছর আগে এবং অপর একটির পরিপ্রেক্ষিতে ৫ বছর আগে এ বিষয়ে রুল হয়েছিল। রুলে ভ্রাম্যমাণ আদালত আইনের ধারা ৫, ৬(১), ৬(২), ৬(৪), ৭, ৮(১), ৯, ১০, ১১, ১৩, ১৫ কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। পৃথক রুলের ওপর একসঙ্গে ৮ মার্চ শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত আবেদনগুলো রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। এরপর গত ১১ মে রুল যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেন আদালত।

No comments

Powered by Blogger.