১৪ দলে ইসলামী ফ্রন্টের যোগ দেয়া নিয়ে আলোচনা

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের যোগ দেয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ১৪ দলের শনিবারের বৈঠকের সময় দলটির প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। সে অনুযায়ী তারা উপস্থিত ছিলেন। ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম এ প্রসঙ্গে বলেন, দলটির গঠনতন্ত্র, ইশতেহার এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জেনে এবং জোটের প্রধান নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তাদের যোগদানের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শনিবার জোটের বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ নাসিম এসব কথা বলেন। তিনি আরও বলেন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১৪ দলে যোগ দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আজ (শনিবার) দলটির নেতারা উপস্থিতও হয়েছিলেন। আমরা তাদের প্রতিনিধিকে বৈঠকে ডেকে এ নিয়ে কথা বলেছি। এ সময় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, আরেকাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আক্তার, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদৎ হোসেন, পলিট ব্যুরোর সদস্য ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের আহ্বায়ক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান,
গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টির এসকে শিকদার, আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, দফদতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দীসহ ১৪ দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। খালেদা জিয়ার দেয়া ভিশন-২০৩০ এর সমালোচনা করে নাসিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীদের নিয়ে বিএনপি ‘ইনক্লুসিভ’ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর খুনি ও একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলাকারীদের নিয়ে ‘ইনক্লুসিভ’ রাজনীতি দেশের মানুষ কখনো মেনে নেবে না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিএনপির বক্তব্যের জবাবে নাসিম বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় রেল লাইনের ওপর সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দৌড়ানোর বিষয়টি দেশের মানুষ এখনও ভুলে যাননি। এর আগে রাশেদ খান মেননের সভাপতিত্বে ১৪ দলের এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম শরিকদের জানান, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ ১৪ দলে যোগ দিতে চায়। তারা এ লক্ষ্যে আজ উপস্থিতও হয়েছে। তখন জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদৎ হোসেন, তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব এমএ আউয়াল, গণআজাদী লীগের সাধারণ সম্পাদক একে শিকদার ও ন্যাপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ইসলামী ফ্রন্টের জোটে যোগ দেয়ার বিষয়ে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
প্রগতিশীল জোটটির এ নেতারা বলেন, ১৪ দল একটি আদর্শিক জোট। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৩ দফার আলোকে এ জোটের জন্ম। যে দলটি যোগ দিতে এসেছে তাদের বিশ্বাস সম্পর্কে আমরা জানি না। তাদের সে রকম রাজনৈতিক কার্যক্রমও নেই। এদের গঠনতন্ত্র এবং ইশতেহার সম্পর্কেও শরিকরা জানি না। তাই সেগুলো সম্পর্কে জেনে যোগ দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত করা হোক। তখন মোহাম্মদ নাসিম তাদের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, ইসলামী ফ্রন্টকে এর আগে মহাজোটে নেয়া হয়েছিল এবং এক-এগারোর আগে যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছিল তখন এ দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদীকে মনোনয়নও দেয়া হয়েছিল। যেহেতু শরিকরা কিছু বিষয় উত্থাপন করেছে সেগুলো দেখেশুনেই এবং জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেই যোগদানের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। এরপর বৈঠকের বাইরে অবস্থান করা ইসলামী ফ্রন্টের নেতাদের ডেকে কথা বলেন ১৪ দলের উপস্থিত নেতারা। একটি সূত্র জানায়, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদৎ হোসেন ওই দলটির যোগদানের প্রশ্নে বলেন, নির্বাচন প্রশ্নে যদি কাউকে যোগ দেয়াতেই হয় সেটা নির্বাচনী জোটে যোগ দেয়ানো হোক। এছাড়া বৈঠকে জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার এবং তাদের আরেক নেতা শওকত খালেদা জিয়াকে আগামী নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে হবে বলে বক্তব্য দেন। তবে অন্যান্য শরিকরা তা নাকচ করে দেন।
সূত্র জানায়, শিরিন আখতার আরও বলেন, সামনে নির্বাচন, তাই এ নিয়ে আলোচনা হওয়া উচিত। তখন মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জোটগতভাবেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে বৈঠকের বাইরে অপেক্ষমাণ ইসলামী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান সৈয়দ বাহাদুর শাহ মুজাদ্দেদী যুগান্তরকে বলেন, এর আগে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের সঙ্গে জোটে যোগ দেয়া প্রশ্নে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। তাদের শনিবারের বৈঠক উপলক্ষে আসতে বলা হয়েছিল। তাই তারা উপস্থিত হয়েছিলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, ১৪ দলের শরিকরা খালেদা জিয়া ঘোষিত ভিশন-২০৩০ কে ভাওতাবাজি বলে মন্তব্য করেন। এটা বিএনপি নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার কৌশল হতে পারে বলে তারা মত ব্যক্ত করেন। তবে ভিশনের দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা করার ঘোষণাকে গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করার কথা উঠে আসে। কেননা জাসদের সংগঠক এবং রাজনীতি থেকে এক রকম নির্বাসিত সিরাজুল আলম খানের প্রস্তাবের সঙ্গে এর মিল আছে। এর যোগসূত্র আছে কিনা তা খেয়াল রাখার কথা বলেন জোটের শরিকরা।

No comments

Powered by Blogger.