দাতার খোঁজে ২০ মেগা প্রকল্প

সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের সুযোগ নেই- দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ এমন ২০ মেগা প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি)। এজন্য মোট যে ব্যয় ধরা হয়েছে, তার মধ্যে ৪ লাখ ১১ হাজার ৮ কোটি টাকাই আশা করা হচ্ছে বৈদেশিক সহায়তা হিসেবে। সম্ভাব্য দাতাদের খোঁজে এ ২০ প্রকল্পসহ ৩৬০টি উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সংযুক্ত করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা স্বীকার করেছেন, বৈদেশিক অর্থায়ন পাওয়া না পাওয়ার ওপর নির্ভর করছে এসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যে ৩৬০টি উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা তৈরি করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে মোট বৈদেশিক সহায়তার প্রয়োজন ৬ লাখ ৪৭ হাজার ৫৯৬ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আজ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে এ তালিকা উপস্থাপন করা হচ্ছে। এতে সভাপতিত্ব করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বৈঠকেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এডিপি অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গে এসব প্রকল্পও নীতিগত সম্মতি দেয়া হবে। সম্ভাব্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা বা দেশের সম্মতি পাওয়া গেলে পরবর্তী প্রক্রিয়া এগিয়ে যাবে বলে পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জান গেছে। অন্যদিকে বৈদেশিক অর্থায়নে শুধু মেগা প্রকল্প হাতে নিলেই হবে না,
এগুলোর সঠিক সময়ে সঠিক বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম শনিবার যুগান্তরকে বলেন, তালিকায় থাকা মানে এসব প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। তখন উন্নয়ন সহযোগীদের অর্থায়নের ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে। যেমন চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি যেটি আগামী অর্থবছরের তালিকায় অন্যতম মেগা কর্মসূচি। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা খাতে অনেক প্রকল্প যুক্ত আছে। এটি যখন একবারেই বৈদেশিক অর্থায়ন পাওয়া যাবে কিংবা একনেকে অনুমোদন লাভ করবে, তখন বাস্তবায়নে সুবিধা হবে। এসব চিন্তা করেই বড় কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়। তবে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়ার আগেই সরকারি অর্থায়নে মেগা প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই করা উচিত। তাহলে ঋণ পেতে এবং দাতাদের সঙ্গে দরকষাকষিতে সুবিধা হবে। যদি শেষ পর্যন্ত বৈদেশিক অর্থায়ন পাওয়া না যায়, সেক্ষেত্রে ছোট ছোট প্রকল্প কমিয়ে বৃহৎ এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-৪ রয়েছে বৈদেশিক সহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের তালিকায়। এটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০ হাজার কোটি টাকা। এর পুরোটাই বৈদেশিক সহায়তা থেকে পাওয়ার আশা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে কর্মসূচিটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য রয়েছে। তবে এখনও উন্নয়ন সহযোগী নির্ধারণ করা হয়নি। এছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্য ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ৭১৬ কোটি টাকা। এটি বাস্তবায়নে যে কোনো উৎস থেকেই ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ৪ লেনবিশিষ্ট সীতাকুণ্ড-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক নির্মাণ এবং উপকূলীয় অঞ্চলে রক্ষাপ্রদ কাজ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ২৫ হাজার ৫৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্য রয়েছে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে চীনকে সম্ভাব্য উৎস হিসেবে ধরা হয়েছে। পেকুয়া ১২০০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র (১ম পর্যায়) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ হাজার ২৫৭ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক অর্থায়নের লক্ষ্য ২৬ হাজার ৪৯৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
আগামী জুলাই থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটির মেয়াদ ধরা হয়েছে। এছাড়া গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বৈদেশিক সহায়তা ধরা হয়েছে ৩১ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। যে কোনো উৎস থেকে ঋণ নেয়ার সিদ্ধান্ত রয়েছে। প্রকল্পটি প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) এরই মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কে. মুজেরি যুগান্তরকে বলেন, শুধু বড় প্রকল্প হাতে নিলেই হবে না। প্রধান ইস্যু হচ্ছে এসব প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন। সেটি না হলে যে উদ্দেশ্যে ঋণ নেয়া হবে সে উদ্দেশ্য পূরণ হবে না, শেষ পর্যন্ত বোঝা হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, চলমান মেগা প্রকল্পগুলোর অভিজ্ঞতা ভালো নয়, তাই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বৈদেশিক অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। তালিকা থাকা অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে প্রধান সড়কগুলোর ভূগর্ভস্থ ইউটিলিটি টানেল নির্মাণ, সোনাদিয়া দ্বীপে গভীর সমুদ্রবন্দর, কুমিল্লা-লাকসাম হয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ডাবল ট্র্যাক স্ট্যান্ডার্ড গেজ রেললাইন তৈরি, ঢাকা-পূর্বপশ্চিম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ অবস্থানে দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফরিদপুর-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী-কুয়াকাটা মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়ক উন্নয়ন, ইন্সটোলেশন অব ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সঞ্চালনের লক্ষ্য অবকাঠামো উন্নয়ন, এক্সপানশন অ্যান্ড স্ট্রেংদেনিং অব পাওয়ার সিস্টেম নেটওয়ার্ক আন্ডার ডিপিডিসি এরিয়া প্রকল্প, কনস্ট্রাকশন অব ৩৩ কেভি আন্ডার গ্রাউন্ড ক্যাবল অ্যাট চিটাগং জোন, ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যাপ্রোচ চ্যানেল ডিগ্রেডিং অ্যান্ড পোর্ট কনস্ট্রাকশন মহেশখালী পাওয়া হাব এবং সাসটেইনেবল ফরেস্ট অ্যান্ড লাইভলিহুড (সুফল) প্রকল্প।

No comments

Powered by Blogger.